আপডেট : ৩১ January ২০২১
তিন মাস আগে রাজধানীর গুলিস্তান-জয়কালী মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপওভার বাস টার্মিনাল একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ইজারার শর্ত ছিল, শুধু টার্মিনাল থেকে বের হওয়া এবং বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহূত বাস-মিনিবাস থেকে টোল আদায় করা যাবে; যা মূল সড়কে চলাচল করে। শর্ত অমান্য করে সব ধরনের যানবাহন থেকে এখন টোল আদায় করছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান গুলশান চাকা লিমিটেড। ‘সাব-ইজারাদার’ও নিয়োগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি; যা সম্পূর্ণ অবৈধ। যানবাহন চালকরা দাবি করেন, টোলের নামে ঢাকা দক্ষিণের মূল সড়কসহ অলিগলিতে চাঁদাবাজি করছেন সাব-ইজারাদাররা। এসবকিছু জানার পরও ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছরের ১১ নভেম্বর গুলিস্তান-জয়কালী মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপওভার বাস টার্মিনালের টার্মিনাল ফি ও কুলিমজুরি খাতে রাজস্ব আদায়ে ইজারা পায় গুলশান চাকা লিমিটেড। ইজারামূল্য দুই কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩ টাকা। কিন্তু তারা এখন মতিঝিল, কমলাপুর, জুরাইন, কদমতলী, পোস্তগোলা, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, কোণাপাড়া, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, মাতুয়াইল, মেরাদিয়া, নন্দিপাড়া, মাদারটেক, যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাস, মিনিবাস, সিএনজি, টেম্পু, পিকআপ, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রো থেকেও টোল আদায় করছে। এছাড়া এসব এলাকা থেকে টোল আদায়ে পৃথক পৃথক সাব-ইজারাদার নিয়োগ দিয়েছেন গুলশান চাকার প্রোপ্রাইটর জাকিয়া সুলতানা। বিনিময়ে প্রতিটি সাব-ইজারাদারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা জামানত নিয়েছেন তিনি। এছাড়া এসব এলাকায় কোনো যাত্রী সামান্য মালামাল বহন করতে চাইলেও কুলিমজুরি টোল আদায় করা হচ্ছে। এতে চালক-যাত্রী সবাই ইজারাদারের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করছেন। শনিরআখড়া-রায়েরবাগ এলাকায় সাব-ইজারাদার হাবিব মিয়ার পক্ষে টোল আদায় করেন শহিদুল। তবে হলুদ টোলের রশিদে ইজারাদারের নাম লেখা জাকিয়া সুলতানা। এমন রশিদে এই এলাকার প্রতিটি ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা, লেগুনা, সিএনজি, পিকআপ, ট্রাক থেকে ৩০ টাকা করে টোল আদায় করছেন তারা। ফলে অবৈধ যানবাহনগুলো এই সিটি টোলের জোরে চলছে। তা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের সংশ্লিষ্টদের কাউকে দেখা যায়নি। অনেক চেষ্টা করেও শহিদুলের কাছ থেকে হাবিব মিয়ার মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করা যায়নি। শহিদুল বলেন, ‘হাবিব মিয়ার মোবাইল নম্বর অপরিচিত কাউকে দেওয়া নিষেধ আছে।’ শনিরআখড়ায় বর্ণমালা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে বাসা-বাড়ির আসবাবপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন ট্রাকচালক ইলিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এই সড়কে ঢুকলেই তারা (সাব-ইজারাদার) হাতে টোকেন (রশিদ) ধরিয়ে দেন। টোকেনে ৩০ টাকা লেখা থাকলেও তারা ২০০ টাকার কমে ট্রাক ছাড়েন না। কেউ টাকা না দিতে চাইলে মারধরও করেন তারা।’ ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় একই রঙের রশিদ দিয়ে টোল আদায় করছেন সাব-ইজারাদার শাহাবুদ্দিনের লোকজন। এই পথে ব্যক্তিগত গাড়ি থেকেও ৩০ টাকা করে টোল আদায় করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি বিকেলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে রামপুরা থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও যাচ্ছিলেন চালক তাজুল ইসলাম। ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে তার কাছ থেকেও ৩০ টাকা টোল আদায় করেন শাহাবুদ্দিনের লোকজন। এ সময় তাজুল ইসলাম বলেন, ইজারার টোকেনে লেখা ‘গুলিস্তান-জয়কালী মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপওভার বাস টার্মিনাল’, অথচ তারা ডেমরায় ব্যক্তিগত গাড়ি থেকেও অবৈধভাবে টোল আদায় করছেন।’ অবৈধভাবে টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাবুদ্দিন জানান, তিনি মোটা অঙ্কের টাকা জামানত দিয়ে গুলশান চাকার প্রোপ্রাইটর জাকিয়া সুলতানার স্বামী মাসুদের কাছে থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা সাব-ইজারা নিয়েছেন। এই টাকা তুলতেই সব ধরনের যানবাহন থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাতুয়াইল মেডিকেলের সামনে রনি নামে এক সাব-ইজারাদারকেও অবৈধভাবে টোল আদায় করতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে জাকিয়া সুলতানার স্বামী মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, ‘ওই টোল আদায়ে কাউকে সাব-ইজারা দেওয়া হয়নি। তবে টোল আদায়কারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ট্রাক এবং ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে কোনো টোল আদায় করা হয় না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মাসুদ এই টার্মিনাল ইজারা নেওয়ার জন্য ডিএসসিসি নির্ধারিত ফির বাইরেও প্রায় অর্ধকোটি টাকা সংস্থাটির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েছেন। এখন টোল আদায়ের মাধ্যমে ওই পরিমাণ টাকা উঠাতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। এতে ডিএসসিসির প্রতি নাগরিকদের নেতিবাচক ধারণা জন্মাচ্ছে।’ ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের মহা-ব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘গুলিস্তান-জয়কালী মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপওভার বাস টার্মিনালে ইজারা আদায় নিয়ে অনিয়মের কথা শুনেছি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে ডেকে এনে তাদের সতর্ক করেছি। কিন্তু কেউ সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত অভিযোগ করেনি। এমন অভিযোগ এবং প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘ওই টার্মিনাল এলাকায় ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রো, পিকআপ, অটোরিকশা থেকে টোল আদায় করা যাবে না। টার্মিনালের বাইরে কোনো রাস্তা থেকেও টোল আদায় করা যাবে না।’
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১