বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৭ January ২০২১

বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে পরিকল্পনামন্ত্রী

দারিদ্র্যকে ’৪১-এর মধ্যে হত্যা করা হবে


মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, যিনি এম এ মান্নান হিসেবেই পরিচিত। সিলেটের সুনামগঞ্জে জন্ম নেওয়া সাবেক এই আমলা বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮, ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে তিনবার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য রাজনীতিতে প্রবেশের আগে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে দেশে-বিদেশে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই দক্ষতা এবং  যোগ্যতার প্রতিদানস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে ভোলেননি।

সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে দলীয় মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এ সময় সরকারি হিসাবসংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের পাশাপাশি জনপ্রশাসন, অর্থ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হলে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এম এ মান্নান। এরপর ২০১৯ সালে নির্বাচিত হলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী করা হয় তাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সাল নাগাদ দেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী  রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য বাস্তবায়নে যে কজন মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন তাদের অন্যতম এম এ মান্নান।

 দৈনিক বাংলাদেশের খবরকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেন পদ্মা সেতুসহ বর্তমান সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ফলে অর্থনীতিতে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে সেসব নিয়ে। দেশজুড়ে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন বড় প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সমুদ্রবন্দর, বঙ্গবন্ধু টানেল, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন, মেট্রোরেল এবং মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দরসহ আরো অনেক ছোট-মাঝারি-বড় প্রকল্প। কয়েক লাখ কোটি টাকার এসব প্রকল্পের কোনোটির কাজ সর্বোচ্চ ৯১ শতাংশ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। অর্থনৈতিক বিবেচনায় এসব প্রকল্পের প্রতিটির রয়েছে আলাদা বিশেষ গুরুত্ব। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, শুধু এক পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেই পাল্টে যাবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চিত্র। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা-উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। 

মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বতর্মান পরিকল্পনায় দেশ যেভাবে এগুচ্ছে এই ধারা অব্যাহত থাকলে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে কোনো বেগ পেতে হবে না। সেজন্য প্রয়োজন গৃহীত পরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প, ডেল্টা প্ল্যান, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রবাসীরা যদি ঠিকভাবে কাজ করতে পারেন, পাশাপাশি যদি এগুলো কন্টিনিউ হয় এবং কন্টিনিউ হবে বলেই বিশ্বাস করি। কন্টিনিউ না হওয়ার এমন কোনো কারণও নেই। সবই ইতিবাচক আছে। সুতরাং আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।’

টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ডলারেরও কম। প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫-এর কোঠায়। মাত্র ১১ বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু আয় দুই গুণ বেড়ে ২ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। একই সময়ে প্রবৃদ্ধি যেখানে ৫-এর কোঠা থেকে ৮ থেকে সাড়ে ৮ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। যদিও করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় প্রবৃদ্ধি আবারো ৫-এর ঘরে নেমেছে। তবে করোনার মধ্যেই রিজার্ভ ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার থেকে ৪ হাজার ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এই মহামারীর মাঝেই মাথাপিছু আয় প্রথমবারের মতো দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে দাঁড়িয়েছে ২০৭৪ ডলার। এ বিষয়ে সাবেক এই আমলা জানান, ‘মাথাপিছু আয় বর্তমানে ২ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ তখনকার বাজার মূল্যে ৪ হাজার ডলার এবং ৪১ সাল নাগাদ মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলারে উন্নীত হবে। তখন আমরা উন্নত দেশের কাতারে প্রবেশ করব।’

এম এ মান্নান বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর এই দুঃসময়টুকু ছাড়া বাকি সময় অত্যন্ত চমৎকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এটি শুধু অভ্যন্তরেই নয়, অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতা এবং আশপাশের দেশগুলোর সাথে তুলনা করলেও এই সফলতা অত্যন্ত চমকপ্রদ। আমরা মাথা উঁচু করে বলব যে, শতভাগ বিদ্যুতায়ন আমরা ২০২০-এর মধ্যে শেষ করেছি। আমরা বিশাল মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য শুরু করেছিলাম। ভালো গতিতে এগুচ্ছিল। কিন্তু করোনা একটু থামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কোভিডকে সরিয়ে দিয়ে নতুন করে পিকআপ করেছি। ঢাকার মেট্রোরেল, পদ্মা, পায়রা, ঘুমধুম রেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর প্রকল্প, মাতারবাড়ী প্রকল্পগুলোর কাজে আমরা চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছি।’

দেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে চলতি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক (২০২১-২০২৫) পরিকল্পনায় ১ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘দারিদ্র্যসীমা আমরা ২০ শতাংশে নামিয়েছিলাম। ৩০ সাল নাগাদ দারিদ্র্যকে ১০ শতাংশের নিচে এবং ৪০ সাল নাগাদ ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার প্রত্যাশা করছি। ৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যকে হত্যা করব এটাই আমাদের আশা।’

সরকার আগামী ৫ বছরে ১ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এর মধ্যে ৩২ লাখ ৫ হাজারের কর্মসংস্থান হবে বিদেশে। এজন্য বিদেশে দক্ষ কর্মী সরকারের নেওয়া ব্যাপক পরিকল্পনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা কোদাল দিয়ে মাটি কেটে খায় তারাই আমাদের সোনার সন্তান এই মুহূর্তে। এদের মধ্য থেকেই লাখ লাখ লোক প্রতি বছর বিদেশে যায় যারা তাদের উপার্জিত সব অর্থই দেশে পাঠায়। এসব প্রবাসী নিজেদের পরিবারের মতোই দেশকে ভালোবাসে। তার মানে শুধু যে এরাই বিদেশে যাবে সেটা আমরা চাই না। আমাদের দক্ষ লোক তৈরি করতে হবে বিদেশে পাঠানোর জন্য। তবে দক্ষতা বলতে বিমান চালানোর দক্ষতা নয়। দক্ষ নির্মাণ শ্রমিক, টেলিভিশন ও ফ্রিজ মেকানিক, ইলেকট্রিশিয়ানসহ এ ধরনের বিভিন্ন পেশার জন্য দক্ষ লোক তৈরিতে আমরা বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। বিদেশে দক্ষ লোকের অনেক ডিমান্ড। বিমানের পাইলট হয়তো ১০০ জন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ ধরনের পেশায় লাখ লাখ চাহিদা রয়েছে।’

তাই দক্ষ শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে জানান ২০১০ ও ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচিত এই সদস্য।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১