বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৭ December ২০২০

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া জরুরি


মোহম্মদ শাহিন

 

 

প্রতিদিন সংবাদপত্র কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার যে সংবাদটি আসে তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। জীবিকা নির্বাহ কিংবা আনন্দ ভ্রমণের তাগিদে ঘরের বাইরে পা রাখতেই সম্ভাবনাময় ও স্বপ্নের অনেক জীবন বলি হচ্ছে সড়ক-মহাসড়কের বেপরোয়া যানবাহনে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধিত হলেও প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে নিরাপত্তার বিষয়টি। সম্প্রতি রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের নভেম্বর মাসে ৪১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৩৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৬৮২ জন। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, নির্দিষ্ট বেতন ও কর্মঘণ্টা না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি- দুর্ঘটনার এসব কারণ জানা থাকা সত্ত্বেও শৃঙ্খলা ফিরে না সড়কে, যা খুবই দুঃখজনক। নিরাপদ সড়ক চাই-এর তথ্যমতে, দেশে সড়কে প্রতিদিন গড়ে ১৮ জন মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ফলে মানবিক ও অর্থনৈতিক যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তা নির্ণয় করা দুরূহ। এক হিসাবে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় যারা মৃত্যুবরণ করেন, তাদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এই পরিবারগুলো রীতিমতো পথে বসে যায়। আহতদেরও অনেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। ফলে তাদের পরিবারও বিপন্ন হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিক হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতির পরিমাণ ধরা হলে তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ। সবচেয়ে বড় কথা, জীবনের চেয়ে দামি কিছু হতে পারে না। আর সেই জীবনই অকালে থেমে যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন নয়, দরকার শুধু আমাদের প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন। ইতোমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের লক্ষ্যে আদালত গাড়ি চালকদের ডোপ টেস্টসহ বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আশা করি আদালতের নেওয়া উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। একই সঙ্গে সড়কপথ নিরাপদ করতে নিম্নোক্ত উদ্যোগ নেওয়া অতীব জরুরি-

১. সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিআরটিএ থেকে দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করার বিকল্প নেই। ২. চালকদের বেপরোয়া প্রতিযোগিতার মনোভাব ও গতি রুখতে সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে বলা হলেও কর্তৃপক্ষ বরাবরই ব্যর্থ হয়। সুতরাং এখানে যথাযথ উদ্যোগ নিতেই হবে। ৩. লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির যান চলাচল নিষিদ্ধসহ নতুন করে লাইসেন্স ব্যতীত ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল করতে যেন না পারে, সেদিকে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি দেওয়ার বিকল্প নেই। দেশে নিবন্ধিত যানবাহন ৪৪ লাখ আর চালকের নিবন্ধন সংখ্যা ৩২ লাখ। ১২ লাখ চালক কম, যা স্বভাবতই ভুয়া চালক; আর এদের দ্বারাই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। ৪. নির্মাণ ত্রুটির কারণে সড়কে যেসব দুর্ঘটনাপ্রবণ ব্যাক স্পেস রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সংস্কার জরুরি। ৫. সড়কে পুলিশ ও মোবাইল কোর্টকে আরো বেশি সক্রিয় করার পাশাপাশি ট্রাফিক আইনকে ঘুষমুক্ত রাখা ও চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান জরুরি। ৬. বেশিরভাগ সময় সড়কে সমাজের বিত্তবান বা প্রভাবশালী কেউ নিহত হলে সে ক্ষেত্রে চালককে গ্রেপ্তার সম্ভব হয়। অপরদিকে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে চালক গ্রেপ্তার কিংবা আর্থিক ক্ষতিপূরণ কোনোটাই পায় না। সুতরাং এক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা হোক। ৭. পথচারী ও যাত্রীদের অধিক সতর্ক করার কোনো বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় পথচারীদের ফুটপাত, আন্ডারপাস ও পথচারী সেতু ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকেও সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।

অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ এবং জনগণের সচেতনতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১