বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৩ December ২০২০

শঙ্কায় আছেন যশোর গদখালীর ফুলচাষিরা


আসছে ইংরেজি ও বাংলা নববর্ষসহ বিশেষ উৎসবগুলোকে স্বাগত জানাতে মূলত যশোরের গদখালীর ফুলচাষিরা তাদের ফুলের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এসব বিশেষ দিবসকে টার্গেট নিয়ে বছরের অক্টোবর থেকে এ এলাকার ফুলচাষিরা ক্ষেতে নানান জাতের ফুল লাগানো ও পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে এ বছর একেবারেই ভিন্ন চিত্র। দেশে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিগত ৬ মাস ধরে ফুলের বাজারের ধস নামার পর থেকে কৃষক মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন। সে কারণে সামনে ইংরেজি নববর্ষে ফুলের বাজার কেমন হবে সেই চিন্তায় চাষিদের কপালে ভাজ পড়েছে। অক্টোবর পেরিয়ে নবেম্বরের মাঝামাঝি সময় পার হতে চললেও গদখালীর চাষিরা নতুন বছরের জন্য ফুল উৎপাদনে মনোযোগী হতে পারছেন না। তবে করোনা ও আম্পানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন অনেক চাষি।

দেশে আশির দশক থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে দেশ-বিদেশে সাড়া জাগিয়েছে চলেছেন যশোর গদখালির ফুল চাষিরা। জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকার এসব চাষি গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিউলাস, রজনিগন্ধা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল চাষ করে দেশে গড়ে তোলেন ফুলের বিশাল বাজার। এ জেলার উৎপাদিত ফুল দেশের মোট চাহিদার দুই থেকে তৃতীয়াংশ পূরণ করে আসছে। গদখালীর ফুলচাষিরা বলেন, এর আগে তারা হরতাল-অবরোধসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফুলের উৎপাদনে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে এ বছর যে পরিস্থিতি তা আগে কখনো দেখেননি তারা। দীর্ঘস্থায়ী সংকটের কারণে তারা পথে বসে গেছেন।

গদখালীর পানিসারার ফুলচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখন করোনা সংক্রমণেল শঙ্কা পিছু ছাড়ছে না। অনেক কৃষক তাদের গোলাপের ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। জমিতে নতুন নতুন ফুল গাছ লাগাচ্ছেন, সার-কীটনাশক, সেচ দিচ্ছেন ঠিকই। তবে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে করোনার আতঙ্ক। কারণ সরকারের পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ খুবই ভয়াবহ হবে। এটিই যদি সত্য হয় তাহলে সামনে ইংরেজি নববর্ষে আমরা আদৌ প্রত্যাশা অনুযায়ী ফুল বিক্রি করতে পারব কি না তা নিয়ে বড় চিন্তা রয়েছে।

একই এলাকার ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, অন্যান্য বছরে এই নভেম্বর মাসে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকার ব্যবসায়ীরা নববর্ষের জন্য ফুলের জন্য আগাম বুকিং দিতেন। আমরাও ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী সাধ্যমতো ফুলের জোগান দেওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে সে পরিস্থিতি ম্লান হয়ে গেছে। এখন ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করলেও তারা সামনে কী পরিস্থিতি হবে তা নিয়ে দোটানায় ভুগছেন। আমরাও ফুলের ক্ষেতের পরিচর্যা করলেও সামনের বাজার কী হবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।    

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, আম্ফান ও করোনার কারণে কৃষি সেক্টরের মধ্যে ফুলচাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষিকে ঘুরে দাঁড়াতে সরকার প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষককে নানাভাবে সহায়তা করলেও ফুলচাষিদের সে সুযোগের আওতায় আনা হয়নি। যে কারণে ফুলচাষিরা কার্যত নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এ অবস্থায় ফুলচাষিদের জন্য কৃষি প্রণোদনার বাইরে বিশেষ ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করলে সম্ভাবনাময় এ চাষকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। নইলে সামনে নববর্ষেও যদি এ অবস্থা বিরাজ থাকে তাহলে সংকট আরও চরম আকার ধারণ করবে।  কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোর জেলায় প্রায় ৬ হাজার কৃষক দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করেন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবছর চাষির সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১