বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২২ December ২০২০

হাজীগঞ্জে জরাজীর্ণ ভবন ধসে পড়ার আতঙ্কে বালিকা সপ্রাবি’র শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

শ্রেণিকক্ষের অভাবে ৮’শ শিক্ষার্থী নিয়ে বিপাকে শিক্ষকরা

হাজীগঞ্জ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ দোতলা ভবন। নিচের ছবিতে এভাবেই ভবনটির পলেস্তার খসে পড়ে ছাদের রড দেখা যাচ্ছে এবং ছাদের বিভিন্ন অংশ টুকরো টুকরো করে নিচে ভেঙ্গে পড়ছে। ছবি : বাংলাদেশের খবর


চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন হাজীগঞ্জ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ধসে পড়ার আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটছে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীদের। উপজেলার অন্যতম সেরা এই বিদ্যালয়টির পলেস্তারসহ ছাদ টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে পড়ার কারনে চলতি বছর থেকে ভবনটিতে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে করে ৮২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষকরা।

১৯৭৩ সালে বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে দোতলা ভিত বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়। গত কয়েকবছর যাবৎ ভবনটির পলেস্তার খসে পড়লেও তা জোড়াতালি দিয়ে (সংস্কার করে) ব্যবহার উপযোগি করা হয়েছিলো। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে ছাদের বিভিন্ন অংশ টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। সবশেষে চলতি বছর তা ব্যাপক আকার ধারণ করলে ভবনটিতে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টিতে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট একটি দোতলা ভবন, ৩ কক্ষ বিশিষ্ট ও ২ কক্ষ বিশিষ্ট দুটি একতলা ভবন এবং ১ কক্ষ বিশিষ্ট একটি অফিস রুম রয়েছে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট ভবনটিতে ৩ কক্ষের কাজ নির্মাণাধীন। দোতলা ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বর্তমানে এখানে শ্রেণি কার্যকম বন্ধ রয়েছে। ৮২০ শিক্ষার্থীকে নিয়ে মাত্র ৫টি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।

অথচ বিদ্যালয়টিতে এক শিফটে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করলে ১৭টি শ্রেনিকক্ষ এবং দুই শিফটে পরিচালনা করলে ১১টি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যালয়ে ৫টি শ্রেণিকক্ষ থাকায় বিপাকে রয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাই বাধ্য হয়েই এই ৫টি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শিক্ষকরা। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন সমাধাণ হয়নি।

সবশেষ গত ২৭ অক্টোবর নতুন একটি বহুতল ভবন নির্মানের আবেদন জানিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়েশা বেগম। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ৬ কক্ষ বিশিষ্ট দোতলা জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগি। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা ভীতসন্ত্রস্ত এবং তারা আতঙ্কিত। এই অবস্থাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অভিভাবকেরা নারাজ।

ভালো পড়ালেখার কারনে অভিভাবকের অন্যতম পছন্দ এই বিদ্যালয়টি। নামে বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়ের পড়ালেখা চলমান। উপজেলার এমনও বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে এক থেকে দেড়শ শিক্ষার্থী রয়েছে এবং তাও আবার বছর শেষে বা নতুন বছরের শুরুতে খুঁজে এনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে হয়।

অথচ এই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর অভাব নেই, কিন্তু শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহৃতের আশংকা দেখা দিয়েছে। সেই সাথে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। তাই যত দ্রæত সম্ভব, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙ্গে, তার স্থলে নতুন একটি বহুতল নির্মাণের আবেদন তাদের।

দোতলা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শ্রেণিকক্ষের চরম সংকটে ভুগছি উল্লেখ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়েশা বেগম বলেন, বসার মতো কোন স্থান না থাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপাকে আছি আমরা। নতুন করে ভবন নির্মাণ না হলে, পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটবে। এ ছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভাঙ্গা প্রয়োজন। তা না হলে, যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে বলে তিনি জানান।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি দ্রুত ভঙ্গে, সেখানে নতুন করে একটি বহুতল ভবন নির্মান দাবি জানান।।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিদ্যালয়ের সভাপতি জহিরুল ইসলাম মামুন বলেন, পুরাতন দোতলা ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দ্রুত ভাঙ্গা প্রয়োজন এবং আমাদের এখানে বিপুল শিক্ষার্থী রয়েছে। স্থান সংকুলানের অভাবে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই শ্রেণিকক্ষের সংকট সমাধানের জন্য জরুরি ভিত্তিতে নতুন ভবন প্রয়োজন।

এ বিষয়ে রান্ধুনীমূড়া ক্লাস্টার কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মিজানুর রহমান জানান, জরুরি ভিত্তিতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে, সেই তালিকার ১১ নম্বরে হাজীগঞ্জ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। তিনি বলেন, শ্রেণিকক্ষের সংকট সমাধানের জন্য সরকারিভাবে প্রাপ্ত বরাদ্দ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় নতুন করে তিনটি কক্ষ নির্মাণাধীন।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, সম্প্রতি সময়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। আবার কিছু ভবন নির্মাণের অপেক্ষায়। এর মধ্যে নতুন করে আরো ৪৮টি বিদ্যালয়ের তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে কাছে পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকায় হাজীগঞ্জ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে বলে তিনি জানান।

 

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১