আপডেট : ১২ November ২০২০
জুবায়ের আহমেদ উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা নতুন কিছু নয়। ধর্মীয় উগ্রবাদীদের দ্বারা এবং রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টায় থাকা ব্যক্তিদের দ্বারা অসাম্প্রদায়িক চেতনা কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ঘটনা অতীতে ঘটেছে বারবার। ব্রিটিশ ভারতে ধর্মীয় দাঙ্গা-হামলা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠদের হামলায় আক্রান্ত হতো সংখ্যালঘুরা। সে যে কোনো ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ কিংবা সংখ্যালঘুই হোক না কেন। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ করলেও বহু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, যা মূলত আবেগের বশে ও গুজবকে পুঁজি করে স্বার্থান্বেষী মহলের দ্বারাই ঘটেছে বেশি। সব ধর্মই সম্প্রীতির কথা বলে, বিশেষ করে পবিত্র ইসলাম ধর্মে অমুসলিম প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য কতটা, তা খেয়াল করলেই বোঝা যায় যে, ধর্মে উগ্রবাদের স্থান নেই, মানুষে মানুষে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করাই একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। পাশাপাশি মহানবী (সা.)-এর ‘মদিনা সনদ’ ও ‘বিদায় হজে’র ভাষণই স্পষ্টত সবাই মিলে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে চলার সুস্পষ্ট দলিল। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা ধর্মীয় আবেগের বশে স্বার্থান্বেষী মহলের দ্বারা ব্যবহূত হওয়ার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের বহু ঘটনা ঘটিয়েছে, যা কখনোই কাম্য নয় ও ছিল না। সম্প্রতি ফ্রান্সের ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি এবদো এবং প্রেসিডেন্ট কর্তৃক মহানবী (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকর ঘটনাও মূলত নিজেদের প্রচার-প্রচারণা ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। তবে তা মুসলিম বিশ্ব মেনে না নিয়ে প্রতিবাদমুখর হয়েছে। এ অবস্থায় মুসলমানদের আবেগ অনুভূতি এবং প্রতিবাদকে পুঁজি করছে গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মহল। সেই সঙ্গে ধর্মবিদ্বেষী, বিশেষ করে ইসলামবিদ্বেষী কতক ব্যক্তির উসকানিমূলক কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে মুসলিমরা ধৈর্য ধরে সঠিক পন্থায় প্রতিবাদ জানানোর পরিবর্তে উগ্রতাকে বেছে নিয়ে মানুষ হত্যা ও সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজনের বাড়িঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এসব ঘটনা ঘটানোর পর সহজে পার পাওয়া যাবে না জেনেও উগ্রবাদীরা কি শুধু ধর্মীয় আবেগেই এসব করছে, নাকি কারো মদতে অমানবিকতার পরিচয় দিচ্ছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখলে সহজেই রাজনৈতিক ফায়দা কিংবা জায়গাজমি নিয়ে বিরোধ কিংবা কারো জায়গার প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পতিত হওয়ার বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। মূলত হচ্ছেও তাই। যুগে যুগে মানুষের আবেগ অনুভূতি ও সরলতাকে পুঁজি করার অসংখ্য ঘটনা আছে। যেখানে মানুষের আবেগের বলি হয় অন্য মানুষ কিংবা সম্প্রদায়। কোনো ধর্ম উগ্রতাকে সমর্থন না করলেও স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বার্থ উদ্ধারের মোক্ষম হাতিয়ার বানায় সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষকে। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, যদি ধর্মে উগ্রবাদ থাকত কিংবা কারো কোনো কটূক্তির প্রেক্ষিতে তার ওপর কিংবা তার বাড়িঘরের ওপর হামলা করার বিধান থাকত, তাহলে এই হামলার কাজে সবার আগে অংশগ্রহণ করতেন একজন আলেম, একজন পীর সাহেব কিংবা একজন ধর্মযাজক। কিন্তু ধর্মে উগ্রতা কিংবা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার বিধান নেই বলেই একজন পীর সাহেব, আলেম কিংবা যে কোনো ধর্মীয় গুরু নিজে এসব কাজ করেন না, করতে বলেন না কিংবা কোনো রকমেই এসব কাজে কাউকে উৎসাহিত করেন না। এসব থেকেই বোঝা যায়, সাধারণ ধর্মবিশ্বাসী মানুষজন আবেগের বশে যেসব উগ্র কাজ করে থাকে, তা ধর্ম সমর্থন করে না, শুধু অজ্ঞতার বশে এবং স্বার্থান্বেষী মহলের মদতে ঘটায় মাত্র। শুধু ধর্মীয় কারণেই উগ্র কর্মকাণ্ড ঘটে না যে, তা নয়। তবে ধর্মবিষয়ক যে কোনো আলোচিত ঘটনার সময়ে স্বার্থান্বেষী মহলের মাধ্যমেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা ঘটে, যা আপাতদৃষ্টিতে ধর্মীয় কারণেই ঘটেছে মনে করা হলেও আদতে তা নয়। এসব ঘটনার অধিকাংশই ঘটে ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে, যার বলি হয় সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষজন এবং আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভিকটিম ও তার পরিবার-সম্পদের। কাজেই সাম্প্রতিক সময়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা ঘটছে, এসবে নির্দিষ্ট কোনো ধর্মকে দোষারোপ না করে ব্যক্তিস্বার্থ কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেই ঘটছে গণ্য করে স্বার্থান্বেষী মহল এবং উগ্র কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য সকল ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। সেই সঙ্গে ধর্মপ্রাণ সব মানুষকে সজাগ দৃষ্টি রাখার মাধ্যমে রুখে দিতে হবে উগ্রতাকে। লেখক : শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১