আপডেট : ১২ November ২০২০
জি এম আরিফ শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে দিন দিন বাড়ছে কুয়াশার মাত্রা। কিছুদিন পরই শুরু হবে শীতের তীব্রতা। তবে এবার শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে করোনা মহামারীতে আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকবে পুরো দেশের মানুষ। এমনিতেই আমাদের দেশে শীতকালে রোগের মাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়ে যায়। শীতে ছোট্ট শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ মানুষজনকে বিভিন্ন ধরনের রোগের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলতে হয়। শীতে সর্দি, হাঁচি, কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ মারাত্মক আকারে বাড়তে থাকে। বর্তমানে করোনা মহামারীতে শীতের সঙ্গে নানারকম অসুখে ভুগবে মানুষ। এই শীতে জনজীবন স্থবির হয়ে যেতে পারে এবং মৃত্যুর হারও আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে। তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে এবং নিরাপদ জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। মানুষকে এটা বোঝাতে হবে যে, ঘরের বাইরে গেলে নিজের এবং অন্যের সুরক্ষার জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। করোনা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হলে মাস্কের বিকল্প নেই এবং সেই সঙ্গে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত সাবান/স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার এবং ব্যবহার-পরবর্তী জীবাণুমুক্তকরণে স্যাভলন বা ডেটল ব্যবহার করা দরকার। ঘরের মেঝে জীবণুনাশক দিয়ে বার বার ধোয়া এবং সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার ও আগাছামুক্ত রাখা এবং দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। যেখানে সেখানে কেউ যাতে কফ, থুতু না ফেলে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা আবশ্যক। শীতে ছোট বাচ্চাদের ওপর নজর রাখা, যাতে তারা কোনো ধরনের রোগে আক্রান্ত না হয়। ছোট শিশুদের সবসময় গরম জামাকাপড় পরিধান করানো এবং নোংরা হয়ে গেলে বদলে দিতে হবে। বয়স্ক যারা আছেন, তাদেরও এই শীতে বিশেষ সেবা-যত্ন করতে হবে। তাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক গাইডলাইন অনুযায়ী সেবা নিশ্চিত করা দরকার। করোনা যেহেতু ঠান্ডাজনিত কারণে বেশিমাত্রায় আক্রমণ করে, সেজন্য সার্বক্ষণিক গরম কাপড় পরিধান এবং যথাসম্ভব বাসায় অবস্থান করতে হবে। বাইরের কাজে ঘর থেকে বের হওয়ার আগে সোয়েটার/জ্যাকেট, টুপি, জুতা, মাফলার, মাস্ক ইত্যাদি পরিধান করতে হবে। অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি বা আড্ডা বা সময় কাটানো যাবে না। একই জামাকাপড় দুদিনের বেশি পরিধান করা যাবে না এবং প্রয়োজনে জামাকাপড় নিয়মিত রোদে শুকাতে হবে। বাইরে বা কর্মক্ষেত্র থেকে এলে জামাকাপড় আলাদা করে রাখা, নিজে সাবানপানি দিয়ে পরিষ্কার হয়ে নেওয়া এবং জুতা সবসময় ঘরের বাইরে রাখা ও নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বাজার থেকে শাকসবজি বা ফলমূল আনার পর তা কিছুটা সময় পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর ভালোভাবে ধোয়া এবং পরিপূর্ণভাবে রান্না করে খাওয়া বাঞ্ছনীয়। রান্না করা তরকারি ফ্রিজে বেশি সময় সংরক্ষণ না করা এবং পচা-বাসি খাবার পরিহার করা ভালো। নিয়মিত পরিষ্কার আদা মিশ্রিত গরম পানি এবং লাল চা পান করা যেতে পারে। এ সময় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার— দুধ, ডিম, মাছ, মাংস এবং সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। এসব খাবার শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত সাবান দিয়ে স্নান শেষে গায়ের পানি গামছা/টাওয়েল দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। দিনের খানিকটা সময় রোদের আলোয় থাকা। এতে একদিকে শরীরের ভিটামিন-ডি’র চাহিদা পূরণ হবে; অন্যদিকে করোনা ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে। প্রতিদিন সকাল-বিকাল পরিচ্ছন্ন পরিবেশে মুক্ত বাতাসে ৩০ মিনিট সময় হাঁটাচলা করা এবং সঙ্গে হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। নিজে, পরিবারের সদস্যদের এবং আশপাশের অন্যদেরকেও স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া। সবসময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দৈনন্দিন কাজ সমাধান করুন। নিয়মিত দরজার হাতল, কলাপসিবল গেট, বেসিন, বাথরুম কমোড, ঘড়ি, বেল্ট, মানিব্যাগ, মোবাইল, লিফট সুইচ, তালা-চাবি ও বৈদ্যুতিক সুইচসহ থালাবাসন ও হাঁড়ি-পাতিল, দা-ছুরি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ঘরে ব্যবহূত কাপড় যেমন— বিছানা চাদর, বালিশ কভার, পর্দা, ক্লথ ডেটল পানি দিয়ে ধুতে হবে এবং কাঁথা-কম্বল, বালিশ, তোশক ও ম্যাট ইত্যাদি নিয়মিত রোদে শুকাতে দিতে হবে। সামান্য জ্বর-সর্দিকেও কোনোভাবে অবহেলা না করা। ঘরের কারো যদি করোনা উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে রোগীকে একটি রুমে ও তার ব্যবহার্য জিনিসপত্রও আলাদাভাবে রাখা আবশ্যক। তবে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরিধান করে রোগীকে নিয়মিত সেবাযত্ন করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবনসহ নিয়মিত আদা মিশ্রিত গরম পানি বা লাল চা পান করতে দিতে হবে। রোগীকে এমন রুমে রাখতে হবে যাতে আলো বাতাস সহজে ঢুকতে পারে এবং রোগীকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। রোগীর অবস্থার উন্নতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। রোগীর ব্যবহারের জন্য ঘরের মধ্যে যদি কয়েকটা বাথরুম বা টয়লেট থাকে তাহলে রোগীকে আলাদা বাথরুম ব্যবহার করতে দেওয়া, যদি না থাকে তাহলে রোগীকে সবার শেষে বাথরুম ব্যবহার করতে বলা এবং ব্যবহারের পর ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে বলা। বাসস্থানের যেসব স্থানে রোগীর হাত দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেসব স্থান হ্যাক্সিসল/স্যাভলন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পরিশেষে করোনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ এবং তার কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমাদের গত্যন্তর কিছু নেই। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যতজন করোনা নামক ভাইরাসে মারা গেছে এবং যারা হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করছেন, তাদের রোগমুক্তির জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা জানাতে হবে। আমরা আশা করি, আমরা আবারো সেই সুন্দর আগামীর বিশ্ব দেখব, প্রাণভরে নেব নিঃশ্বাস। আবার উদিত হবে নতুন সূর্য যেখানে থাকবে হাসি, আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। করোনা নামক ভাইরাস অচিরেই দূর হবে, মুক্ত জমিনে আবার শুরু হবে নবজাগরণ। লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১