আপডেট : ০৯ November ২০২০
মামুন হোসেন আগুন সম্প্রতি করোনা মহামারীতে স্থগিত রাখা হয়েছে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে। তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যথাসম্ভব শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদানে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। পরীক্ষার আয়োজন থেকে শুরু করে প্রমোশনের ব্যাপারেও নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। তবে বরাবরের মতোই ভিন্ন চিত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)-এর অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। করোনা পরিস্থিতি বাদ দিলেও, একই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষার্থীরা এক বছর এগিয়ে রয়েছেন এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে। এতে ক্ষুব্ধ এবং চিন্তিত হয়ে উঠেছেন সাত কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয় ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজকে। এসব কলেজে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী পড়ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে আসার পর নানা সমস্যায় জর্জরিত হতে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। পড়াশোনার নিম্নমান, একাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকা, ফলাফল দেওয়ার নামে টালবাহানা ইত্যাদি কারণে তখনই তিন দফা আন্দোলনে নামতে হয় অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের। পরবর্তীতে ২০ জুলাই ফল প্রকাশ ও পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন তারা। এই আন্দোলনে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেলে দৃষ্টিশক্তি হারান তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। এ ঘটনায় এক হাজার ২০০ ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলাও করে পুলিশ। কিছুদিন আগেও কয়েকবার আন্দোলনে নেমেছিল সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা, তখন তাদের দাবি যথাসময়ে পরীক্ষা হচ্ছে না, ফল হচ্ছে না, তারা পিছিয়ে যাচ্ছে— এসব নিয়ে। আর কদিন পরেই তারা আবার রাস্তায় নামবে তাদের কেন ফেল করানো হয়েছে, পাস করাতে হবে এই দাবি নিয়ে। কারণ, কদিন আগে মানবিক অনুষদের একজন শিক্ষক জানালেন, তাকে যে বিষয়ে খাতা দেখতে দেওয়া হয়েছিল সেখানে সাতানব্বই জনের মধ্য পাস করেছে মাত্র সতেরো জন। এ অবস্থা কম-বেশি সব বিভাগে। এর জন্য নিশ্চয় শিক্ষার্থীরা দায়ী নয়, সাত কলেজের শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ দায়ী। ঢাবি শিক্ষকরা যে মানের উত্তরপত্র নিজ বিভাগে পেয়ে অভ্যস্ত সেটা নিশ্চয় পান না সাত কলেজের খাতায়। কাজেই তিনি নম্বর দেবেন কীভাবে আর শিক্ষার্থীরাই বা পাস করবে কীভাবে? তাই পাস করার জন্য হলেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি ঢাবির অধিভুক্ত মুক্তি। এছাড়াও অধিভুক্তির প্রথম দিকে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করা হয়া হয়েছিল যে, ঢাবির শিক্ষকরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নেবেন, পাশাপাশি গাইডলাইন দেবেন। তবে তা যেন শুধুই আশার গল্প ছিল। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামলে কর্তৃপক্ষ নানা বাহানা এবং আশা দিয়ে আশ্বস্ত করেন। সমস্যা সমাধানে গঠন করা হয় কমিটি, পাঠানো হয় প্রতিনিধিদলও। তবে সেসব কিছুর পরও নেই কোনো সমাধান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটে প্রতি বছর প্রায় তিন লাখ ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য আবেদন করেন। তাদের কাউকেই ক্যাম্পাসে এসে ব্যাংকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিতে হয় না! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প আরো অনেক কলেজ, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ রয়েছে। তাদের কাউকেও ঢাবির অবকাঠামো ব্যবহার করতে হয় না। তবে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের যে কোনো প্রয়োজনে ভিড় জমাতে হয় ঢাবির ডিন অফিসে। ভর্তি সংক্রান্ত জটিলতা বা ব্যাংকে টাকা জমা দিতে ক্যাম্পাসে গিয়ে দাঁড়াতে হয় লম্বা লাইনে। ফলে কিছুটা অসুবিধা এবং বিড়ম্বনায় পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে ঢাবি শিক্ষার্থী এবং সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ যেন একে অন্যের গলার কাঁটা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঘিরে এমন অবস্থা সত্যিই দৃষ্টিকটু। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াতে করোনার এ পরিস্থিতিতেও আন্দোলন যাচ্ছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। চলতি সেশনে কিছুটা আশার আলো দেখা গেলেও পূর্বের সেশনের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের রয়েছে যথেষ্ট উদাসীনতা। কিছু কিছু সেশনের ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি। আর তাই সেশনজট নিরসন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ, একাডেমিক ক্যালেন্ডার, প্রমোশনের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত— এসব বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্তের জন্য আন্দোলন করছেন অধিভুক্ত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং গবেষণায় বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের এই দুর্দশা সত্যিই দুঃখজনক। প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থীর জীবনের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব বিষয়েই যথেষ্ট আন্তরিক এবং অনেক কিছুই ভালো বোঝেন। তাই এ ব্যাপারে তার আন্তরিকতা একান্ত জরুরি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা মন্ত্রণালয় দ্রুত বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব নিলে সবারই মঙ্গল। সেইসঙ্গে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সমানভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও। দুশ্চিন্তা এবং ভয় কেটে দেখা দেবে আলোর রেখা। লেখক : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১