আপডেট : ০৮ November ২০২০
জি এম আরিফ মাধ্যমিক পর্যায়ে কৃষি ও কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক সফলতা আসছে না। কারণ কৃষি এবং কম্পিউটার শিক্ষাকে বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের দেশে কৃষি ও কম্পিউটার বিষয়কে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহারিক অংশকে ব্যবহারিক খাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। কোনো ধরনের হাতে-কলমে কাজ বা ব্যবহারিক কাজ শিখন ছাড়া একজন শিক্ষার্থী শুধু পরীক্ষার জন্য কিছু প্রশ্ন পড়ে পাস করে পরবর্তী শ্রেণিতে গমন করে। এভাবে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়। বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে শিক্ষার্থীদের কৃষি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। ষষ্ঠ-দশম শ্রেণি পর্যন্ত কৃষি ও কম্পিউটার শিক্ষা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু তার পরও শিক্ষার্থীরা কৃষি ও কম্পিউটারে পরিপূর্ণ দক্ষতা বা জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের সবার আগে কম্পিউটার বিষয় রিলেটেড প্রোগ্রামসমূহের ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করা দরকার এবং সেই সাথে কৃষি বিষয়ের বাস্তবজ্ঞান অর্জন করার জন্য জমিতে কৃষি ফলফলাদি চাষবাস সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান আহরণ করা দরকার। এই জ্ঞান অর্জন করতে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার ল্যাব ও কৃষি দক্ষতা অর্জন করতে নিয়মিত কৃষি জমি বা মাঠে কাজ করতে হবে। শুধু বইয়ের পড়া পড়ে বাস্তবজ্ঞান যেমন অর্জন করা সম্ভব না। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে একদিকে যেমন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী বা শিক্ষার্থী সৃষ্টি করা সম্ভব হবে অন্যদিকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের কৃষিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। একদিকে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে কৃষি পণ্যসমূহ বাজারজাতকরণের নতুন নতুন ধারণা অর্জন করতে পারবে, অন্যদিকে কৃষি পণ্য সম্প্রসারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। কম্পিউটারের শিক্ষায় সবার আগে প্রয়োজন প্রত্যেক বিদ্যালয়ে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন এবং কম্পিউটার শেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। প্রত্যেক শ্রেণিতে যদি কম্পিউটার শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করা যায় তাহলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ দিতে হবে, তাহলে এগিয়ে যাবে তাদের ভবিষ্যৎ ভাবনা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে সবার আগে প্রয়োজন প্রযুক্তির শিক্ষা। শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হলে বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা দিতে হবে। প্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একজন শিক্ষার্থী সহজেই নিজেকে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে। বর্তমান সময়ের তরুণ-যুবকেরা কৃষির প্রতি খুব একটা আকৃষ্ট নয়। তারা শুধু বইয়ের মধ্যে কৃষি শিক্ষার জ্ঞানকে আবদ্ধ করে রেখেছে। বাস্তব জ্ঞান অর্জন করার জন্য তাদের কৃষি জমিতে হাতে-কলমে কাজ করানো হয় না। শিক্ষার্থীরা মাঠে-ময়দানে কাজ না করার ফলে তাদের বাস্তবজ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীদের কৃষির জ্ঞান ফলপ্রসূ করার জন্য শ্রেণি ওয়ারী ভাগ করে প্রত্যেক দলকে একটি করে প্লট দিয়ে কৃষিকাজ করানো যেতে পারে। কৃষিকাজে যে দলের উৎপাদিত ফসল ভালো হবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করলে তারা যেমন আনন্দ পাবে তেমনি শিক্ষার্থীরা উৎসাহী হবে। এর ফলে তারা কৃষির প্রতি সহজেই অনুপ্রাণিত হবে। আবার এসব উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকা শিক্ষার্থীদের ভাগ করে দিলে তারা বই-খাতা-কলম কিনতে বা সুন্দরভাবে পড়ালেখা খরচ নির্বাহ করতে পারবে। একদিকে যেমন তারা কৃষিকে জানবে অন্যদিকে কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করবে। এ জন্য দরকার প্রয়োজনীয় আধুনিক কৃষি উপকরণ, যাতে শিক্ষার্থীরা আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সাথে পরিচিতি হতে পারে এবং এর ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে জানতে পারে। এই বাস্তবমুখী কৃষিই একদিন শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে কৃষিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার। আজকের শিক্ষার্থীদের যদি কৃষিকাজে জড়ানো যায় তাহলে বদলে যাবে বাংলাদেশের কৃষির প্রকৃতি। একসময় বাপ-দাদার সাথে শিক্ষার্থীরা কৃষিকাজ করলেও এখন বর্তমান ইয়াং জেনারেশন এই কৃষির প্রতি একদমই অনিহা। একমাত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়া সম্ভবত আর কোনো পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে বা মাঠে ময়দানে কৃষি নিয়ে কাজ করে না। এই তরুণ-যুবকদের যদি কৃষির সাথে সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে তারাও একসময় নিজেরা যেমন কৃষিকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেবে। পরিশেষে কম্পিউটার শিক্ষাকে যদি হাতে-কলমে ও কৃষি শিক্ষাকে যদি বাস্তবভিত্তিক করার জন্য মাঠে-ময়দানে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করানো যায় তাহলে এগিয়ে যাবে কৃষি ও প্রযুক্তি। আবার এই কৃষিকে প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে যেমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনা-বেচা করা হয়। এই প্রযুক্তি একদিকে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য যেমনি সুবিধা দিয়েছে তেমনি আবার সহজ করে দিয়েছে জীবনধারা। লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১