বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৫ November ২০২০

বছর জুড়ে সবজি চাষে কৃষকের স্বচ্ছলতা


পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফসল। আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ কৃষকরা  ১২ মাস জুড়ে  সবজি আবাদ করে তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে। তাদের নিজস্ব পতিত জমি, বাড়ির আঙ্গিনায় মৌসুম বেধে লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, ঢেড়শ, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতাসহ নানা প্রকার নানা প্রকার সবজি চাষ করছে। কীটনাশক মুক্ত ওইসব শাক সবজি উৎপাদন করে নিজ পারিবারের  পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে  তারা বাড়তি আয় করছেন।  যারা সবজি চাষ করছেন তারাই আবার পাড়া মহল্লায় ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। কমশ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় এ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। যথাযথ পরিচর্যার কারণে নিজেদের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে  অনেকেই অর্থনীতি ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

সরেজমিনে পৌর শহরের তারাগন,দেবগ্রাম,নারায়নপুর, উপজেলার কালিনগর,সাতপাড়া, হীরাপুর, বাউতলা, উমেদপুর আজমপুর, চানপুসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সবজি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।  এসব এলাকার বেশীভাগ কৃষক মৌসুম ভেদে  বার মাসই সবজি আবাদ করছেন। কেউ নিজেদের পতিত জমিতে, কেউ বাড়ির আঙ্গিনায় আবার কেউ করছেন বাড়ির ছাদে। বেশীরভাগ কৃষক কৃষি অফিসের পরামর্শে এ চাষ করছেন।

উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামের কৃষক মো. শামসুল ইসলাম বলেন,স্ত্রী-ছেলে মেয়েসহ ৬ জনের সংসার। জায়গা জমিও তেমন নেই। অন্য কোন কাজ না থাকায় দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সবজি আবাদের উপর চলে তার সংসার। বাড়ি সংলগ্ন ৩০ শতক পতিত জমিতে কোন প্রকার কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই তিনি বছরজুরে দেশীয় পদ্ধতিতে  লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, ঢেড়শ, বরবটি, লাউ ও পাটশাক, শশা, বেগুন করলা, চাষ করছেন। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন প্রকারের সবজি নষ্ট হয়। এরপর পুনরায় আবার চাষ করা হয়। জমি তৈরী করে বীজ লাগানোর এক সপ্তাহরে মধ্যেই চারা গঁজিয়ে উঠে। এরপর পরিচর্যা, পানি, সার ও  মাচা তৈরীসহ অন্যান্য কাজ করা হয়।  তিনি আরো বলেন এলাকায় সবজির ভালো চাহিদা রয়েছে। সবজি চাষ ও  বিক্রি নিজেই করেন। ভ্যান গাড়ি নিয়ে ঘুরে দৈনিক এলাকায় ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করছেন তিনি। খরচ বাদে প্রতিমাসে তার ১৮-২০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানায়। 

মনিয়ন্দ এলাকার মো. আবু ইউসুফ  বলেন, ধান জমি বর্গা করার পাশাপাশি বাড়ি সংলগ্ন ২০ শতক জায়গায় গত দুই বছর ধরে লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, বরবটি, টমেটো, লাউ পাটশাক, বেগুন, পেপেসহ নানা প্রজাতির সবজি তিনি চাষ করছেন। এ চাষে বেশ সফলতা ও পান তিনি। উৎপাদিত সবজি থেকে বাড়তি আয় করে ১ ছেলে ও ২ মেয়ের পড়াশুনার খরচসহ সংসারের খরচ ও তিনি করছেন। তিনি ধান চাষ করে যে ফসল পান তাতে খরচ উঠে না। কিন্তু স্বল্প জায়গায় সবজি করে ধানের থেকে কয়েকগুন বেশী আয় করছেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিমাসে ৮-১০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানায়। 

গৃহিনী আফিয়া আক্তার বলেন, প্রথমে বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ করে ভালো ফলন না পাওয়ায় কৃষি অফিসের পরামর্শে নানা প্রকার সবজি চাষ তিনি করছেন । বর্তমানে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে সবজিতে তার প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানায়। 

চানপুর এলাকার খোরশেদ মিয়া জানায়, স্ত্রী,১ ছেলে ১ মেয়েসহ তার পরিবারে ৪ জন সদস্য রয়েছে। অটোরিকশা চালিয়ে তার সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে বাড়ি সংলগ্ন  ১৮ শতক জায়গায় তিনি বার মাসজুড়ে মৌসুম অনুযায়ী লাল শাখ, কাকরল, শিম ও লাউসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি আবাদ করছেন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার খরচ বেশী ভাগই সবজির আয় থেকে হয়। প্রতিমাসে সবজি থেকে তার ৭-৮ হাজার টাকার উপর আয় করছেন বলে  জানায়।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বারমাসই নানা প্রকার সবজি আবাদ করা হয়।  কৃষককের মাঝে স্বল্প মেয়াদী শাক সবজি ও মধ্য মেয়াদী লতা জাতীয় শাক সবজির বীজ বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। সেইসাথে ফলন বৃদ্ধিতে সব সময় স্থানীয় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়।কম খরচে লাভ বেশী হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১