বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৪ April ২০২০

বৈশাখে ফুল বিক্রি বন্ধ

ফুল চাষী দেলোয়ারের লোকসান ৩০ লাখ!


রেজাউল করিম সোহাগ. শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে:

বাগানজুরে পিংক আর সাদা লিলিয়াম ফুল ফুটে পরিপক্ক হয়ে আছে। সুবাস ছড়াচ্ছে বাতাসে। তবে সে নান্দনিক ফুল কারো প্রিয়জনের হাতে শোভা পাবে না। কারো ঘরে বৈশাখি আনন্দ ছাড়াবে না। মহামারি করোনার ছোবলে সে সুর্ন্দয বিনষ্ট হচ্ছে সারি সারি বাহারি ফুল। এমনি নষ্ট ফুলের চিত্র গাজীপুরের শ্রীপুরে কৃষিতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়া ফুলচাষি দেলোয়ারের বাগানে। এ বাগানে দশ লক্ষ টাকার ওরিয়েন্টাল গোত্রের সাদা  ও পিংক রঙের লিলিয়াম ফুল নষ্ট হচ্ছে অবিক্রিত থাকায়। তাঁর মৌমিতা ফ্লাওয়ার নামের ফুল  ও সবজি উৎপাদনে দেশের ফুলের চাহিদা পুরনে ব্যাপক ভুমিকা রাখে। এবার বৈশ্বিক করোনা কোভিট- ১৯  এর সংক্রমে এ ব্যবসায় ক্ষতির পরিমান হবে ৩০থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা বলে দাবি করেন মৌমিতা ফ্লাওয়ার্সের স্বত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন।

তিনি জানান, আমাদের দেশে ফুল ব্যবসার প্রধান উৎসব হয়ে উঠে চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ কে ঘিরে। এবার বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের কবলে পরে ফুল ব্যবসার সাথে জড়িতরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, আমার বাগানে লিলিয়াম, চায়না গোলাপসহ বিভিন্ন ফুল অবিক্রিত পড়ে আছে।  ক্ষেতে  প্রচুর পরিমানে স্ট্রবেরি ও ক্যাপসিকাম পচে নষ্ট হচ্ছে। এসব সবজি ফুল কিনতে কোনো ক্রেতা নাই। নিরুপায় হয়ে ক্ষেতেই ফেলে রেখেছি ফুল ফল ও সবজিগুলো। তিনি আরো বলেন এ বছর যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে নিতে কমপক্ষ আগামী তিন বছর সময় লেগে যাবে। তিনি বলেন আমাদের এবার ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধিত হবে করোনার অকাল থাবায়।  হল্যান্ড থেকে আনা চারায় এখন পরিপক্ক ফুল ফুটে আছে। আমাদের এ ক্ষতির কবল থেকে উত্তরনের জন্য সল্প সুদে লোনের বা আপদকালীন প্রণোদনার ব্যবস্থা না  করা হলে পুনরায় এ ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়ানো অসম্বভ হয়ে পড়বে। দেশের অনেক ফুলচাষি পথে বসে পড়বে। তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারের নজর দিতে হবে দেশের ফুলচাষিদের দিকে।

ফুল বিক্রেতা মোজাম্মেল হক বলেন, অন্য বছরগুলোতে বৈশাখের দুই তিন আগ থেকেই পহেলা বৈশাখের ফুলের চাহিদা পুরণ করতে বাগান মালিকদেরকে অগ্রিম টাকা দিয়ে থাকি। এবার ভিন্ন চিত্র। পহেলা বৈশাখে ধম ফেলার ফুসরত থাকে না। আজ সব বন্ধ। অলস সময় পার করছি বাসায় বসে। গত এক মাস ধরেই কোনো ফুল বিক্রি নাই। সংসার চালাতেও কষ্ট হচ্ছে। বাগান মালিকরা লক্ষ লক্ষ টাকার ফুল বাগানে রেখেই নষ্ট করছেন। ঢাকার সব ফুলের দোকান সম্পুর্ন  বন্ধ থাকায় ফুল কেনাবেচা একেবারেই বন্ধ রয়েছে। কষ্টে কাটছে  এ পেশায় জড়িত নারী পুরুষ। পরিবার পরিজন নিয়ে কর্মহীন হয়ে অর্থ কষ্ট নিয়ে কাটছে এ কাজে জড়িত কর্মীদের। করোনার কবলে পড়ে এমন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে তারা। কবে যে পরিত্রান মিলবে এ দুর্ভোগ থেকে তা আল্লাহই জানেন। 

মৌমিতা ফ্লাওয়ার্সের পরিচালক সেলিনা হোসেন  জানান, আমাদের বাগানে ২০ থেকে ২২ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। তাদের বেতন ৮ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত রযেছে। তিনি বলেন, আমাদের বাগানের  লিলিয়াম ফুল দেখে পছন্দ হওয়াই ঢাকার এক পার্টি (ফুল ব্যবসায়ি) ১০ লক্ষ টাকায় বায়না করেছিল। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে তিনি এ ফুলের অগ্রিম ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু করোনা আক্রমনের কবলে পড়ে তা বাতিল করেন ওই ব্যবসায়ি। এতে নগদ ১০ লক্ষ টাকা চোখের সামনেই ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের। তিনি বলেন, বাগানে এখনো ৫ হাজারের বেশি ওরিয়েন্টাল লিলিয়াম ফুল পড়ে আছে অবিক্রিত। রয়েছে ৪০ হাজার ফুলের চারা অবিক্রিত। যা সময় মত বিক্রি না হলে ফেলে দিতে হবে। আস্তে আস্তে গড়ে তোলা আমাদের  এ ব্যবসা পরিপূর্ণ ঝুঁকিতে পড়ে গেল। কবে আবার ব্যবসায় সুদিন আসবে তা নিয়েও শঙ্কিত হয়ে পড়েছি।

ফুল শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাগানের এমন সুন্দর ফুলগুলো নষ্ট হচ্ছে,স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম পচে যাচ্ছে তা দেখে খুবই কষ্ট লাগে। মালিকের যে কত শত টাকা লোকসান হবে তা আল্লাহই জানেন। এ সময় বৈশাখি ফুল সংগ্রহ করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। এবার অলস সময় কাটাই আর ফেলফেল করে নষ্ট ফুলগুলো দেখি। আল্লাহ কবে আমাদের এ দুর্ভোগ থেকে যে রক্ষা করবে। তিনি আশা করেন শিগগিরই মহান আল্লাহ এ ভয়ানক পরিস্থিতির  উত্তোরণ ঘটাবেন।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ  এ এস এম মূয়ীদুল হাসান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কৃষিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রণোদনার ব্যবস্থার কথা বলেছে। ফুল চাষও কৃষির একটি বড় অংশ। অর্থনীতির সবল চাকা। সরকার ফুলচাষিদের ৪ শতাংশ হারে লোন  ও বিষেশ ভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করবে বলে আমাদের কাছে বার্তা আছে। আশা করি আবারও ফুলচাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। দেশীয় অর্থনিতীতে ব্যাপক ভুমিকা রাখবে  ফুলচাষিরা। তিনি বলেন দেলোয়ার ফুলচাষি হিসাবে অন্যদের আদর্শ তাই, তার ফুলচাষকে আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১