আপডেট : ১১ February ২০২০
এইমাত্র যে ঘটনা ঘটল সেটা দেশের কিংবা বিশ্বের যে প্রান্তেই হোক, মানুষ জানতে চায় এখনই। আরো একটু উৎসুক পাঠক শুধু সংবাদটি দেখার জন্য বসে নেই, তারা চান তার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি, এ সংক্রান্ত বিভিন্নজনের মতামত, বিশেষজ্ঞ মতামত এবং এসব বিষয় নিয়ে যারা লেখালেখি করেন তাদের মতামত। মোটকথা তারা বিশ্লেষণধর্মী কোনো লেখা দেখতে চান ওই বিষয়টি নিয়ে। একটিমাত্র সংবাদ পড়ে, কিংবা একজনের মন্তব্য পড়ে তারা সন্তষ্ট থাকতে চান না কিংবা সঠিক বলেও মনে করেন না। এই বিষয়গুলো কাগজের পত্রিকা ভালোভাবে ম্যানেজ করতে পারছে কি? হ্যাঁ, দু-একটি কাগজ পত্রিকার অনলাইন ভার্সন কিছু তথ্য তৎক্ষণাৎ প্রকাশ করে, তবে সেখানে বিশ্লেষণধর্মী কিছু থাকে না। আর এই বিষয়টিও সব পত্রিকা করতে পারে না। অনলাইন পত্রিকাগুলো এ বিষয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে। পাঠক হাতের মোবাইল টিপে সেসব বিষয় দ্রুত দেখতে ও জানতে পারেন। কাগজের পত্রিকাগুলো এতৎসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কিংবা বিশ্লেষণধর্মী লেখা দু-তিন দিন পর ছাপে (ব্যতিক্রম দু-একটি পত্রিকা ছাড়া)। তখন মানুষের আগ্রহ কম থাকে বিষয়গুলোর প্রতি। এভাবে কাগজের পত্রিকা কিছুটা হলেও পাঠক হারাচ্ছে। পেশাগত বিষয়টি কাগজের পত্রিকার ক্ষেত্রে এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। যারা বিষয়ভিত্তিক নিয়মিত লেখালেখি করেন তারা চান তাদের লেখাটি বেশি পাঠকপ্রিয় কোনো পত্রিকায় ছাপা হোক। এক্ষেত্রে কাগজের পত্রিকাগুলো হয়তো দু-একজনের ক্ষেত্রে বিষয়টি মেনে চলে; কিন্তু অধিকাংশের ক্ষেত্রে তারা কোনো ধরনের পেশাগত যোগাযোগের বিষয়টি মেনে চলে না। অন্তত এভাবে করা যেতে পারে যে, একটি মেসেজ কিংবা একটি মেইল দিয়ে আপনার উক্ত লেখাটি এত তারিখ ছাপা হবে কিংবা সাত দিনের মধ্যে ছাপা হবে কিংবা ছাপাতে পারছি না, এমন সংবাদ প্রেরণ করা। যেহেতু এ ধরনের কিছু মানা হয় না, তখন পেশাদার লেখকরা লেখাটি অন্য কোনো পত্রিকায় কিংবা আরো দু-একটি পত্রিকায় পাঠিয়ে থাকেন। কারণ হচ্ছে তারা চান যে, তাদের লেখাটি পাঠক পড়ুক, মতামতগুলো মানুষ জানুক। পত্রিকা থেকে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করার ফলে একটি লেখা হয়তো একাধিক পত্রিকায় দু-এক সময় ছাপা হয়, সেজন্য লেখক তো দায়ী নন। পত্রিকাগুলো কোনো ধরনের যোগাযোগ না করার ফলে এ ঘটনাটি ঘটে। এটিও ঠিক যে, পত্রিকাগুলোরও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে যার সবকিছু আমাদের জানা নেই। তারপরও নিয়মিত লেখকগণ পত্রিকার কাছে এতটুকু দাবি রাখতেই পারেন, অনুরোধ করতে পারেন। এখানে দুটো বিষয় জড়িত। সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি ব্যাপার আছে। লেখককে জানানো যে তার লেখাটি অমুক তারিখ ছাপা হবে, এটি পেশাগত যোগাযোগ। বিশেষ করে নিয়মিত যারা লেখেন তাদের ক্ষেত্রে তো পত্রিকাগুলো এই বিষয়টি রক্ষা করতে পারে। দ্বিতীয়ত একটি পত্রিকা তো আর সবাই পড়েন না। কোনো কোনো পত্রিকার নির্দিষ্ট কিছু পাঠক থাকে। একটি লেখা যদি একাধিক পত্রিকায় ছাপা হয়, তার অর্থ হচ্ছে আরো অতিরিক্ত কিছু পাঠক বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারল। একটি লেখা তো বিশেষ কোনো সময়ের, বিশেষ কোনো বিষয়ের ওপর এবং বিশেষ কিছু পাঠকদের জন্য। তাদের কাছে যদি দু-তিনটি পত্রিকা লেখাটি পৌঁছে দেয় তাতে মঙ্গল বই অমঙ্গলের তো কিছু নেই। আবার লেখকদের সম্মানী দেওয়ার ব্যাপারে কাগজের পত্রিকাগুলো এগিয়ে থাকার কথা ছিল, কারণ তাদের ইতিহাস পুরনো। তারা বিজ্ঞাপনও কম পান না। শুধু ম্যানেজমেন্টের কারণে বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আসেনি বলে অনেকের কাছে শুনেছি। অনলাইন পত্রিকার সঙ্গে এ বিষয়টিতেও তারা তাল মেলাতে পারছে না। কোনো কোনো পত্রিকা তো সম্মানী দেওয়ার বিষয়টি চিন্তাই করে না। আবার যারা করেন তারাও দেখা যায় অত্যন্ত ধীরগতিতে। আবার সম্মানী দিলেও তা বেশ পুরনো পদ্ধতিতে দেওয়া হয়। পত্রিকা অফিসে গিয়ে একটি চেক নিয়ে আসা, অ্যাকাউন্টে সেটি জমা দেওয়া। দু-একটি পত্রিকা লেখকের ঠিকানায় চেক পাঠিয়ে দেয়, কোনো কোনো পত্রিকা এটি মানে না, তাদের অফিসে গিয়ে চেক আনতে হয়। অনলাইন পত্রিকাগুলোর মধ্যে দু-একটি এ ব্যাপারে আধুনিক। তারা লেখকের অ্যাকাউন্ট নম্বর নিয়ে লেখক সম্মানী সরাসরি অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন। এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ বা ব্যবস্থা। কাগজের পত্রিকাগুলো ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতি বাদ দিয়ে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে। কোনো কোনো পত্রিকা দেখা যায়, নির্দিষ্ট কয়েকজন লেখকের লেখা ছাড়া অন্য কারো কোনো লেখা ছাপে না। আবার দু-একটি পত্রিকা দেখা যায়, শুধু কিছু শিক্ষার্থীর লেখা ছাপে। সব ধরনের লেখকের লেখা ছাপা হওয়া উচিত যদি লেখা মানসম্মত হয়। শুধু নির্দিষ্ট কয়েকজন লেখকের লেখা যে পাঠকরা পছন্দ করেন না তা পত্রিকাগুলোর বোঝা উচিত। পাঠকের অধিকার রয়েছে বিভিন্ন ধরনের লেখকের, বিভিন্ন বিষয়ের লেখা পড়ার। লেখা ছাপা হওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা উচিত, কতদিনের মধ্যে লেখা ছাপা হবে। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার এক্ষেত্রে চমৎকার একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে। এক সপ্তাহের মধ্যে যদি প্রেরিত লেখা ছাপা না হয় তাহলে লেখককে বুঝতে হবে যে, তার লেখাটি ডেইলি স্টারে ছাপা হবে না। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে চিঠি না লিখলেও বিষয়টি বোঝা যায়। বাংলা পত্রািকগুলোর ক্ষেত্রে এখানে বেশ সমস্যা দেখা যায়। আমি কোনো গুরুত্বপূর্ণ লেখা (সময় ও বিষয়ের বিবেচনায়) পত্রিকায় পাঠিয়েছি, দুই মাসের অধিকাকালেও তা ছাপা হয়নি। সমমানের আর একটি পত্রিকায় পাঠালাম, সেখানেও একই অবস্থা। অন্য আর একটি পত্রিকায় যেদিন পাঠালাম তার পরদিনই ছাপা হলো। এটিও জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক। এখন লেখক কীভাবে বুঝবেন যে, কোন পত্রিকা কোন লেখাকে গুরুত্ব দেয়? লেখাটি ছিল ‘বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি’র বিষয়ে। লেখককে জানানোর পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় এভাবে বাদ যাবে না। কেউ কেউ হয়তো শখবশত কিংবা কোনো বিষয়ে রিঅ্যাকশন দেখাতে হঠাৎ দু-একটা লেখা লেখেন। সেটিরও মূল্য আছে। তবে এক্ষেত্রে পত্রিকাগুলোর নিয়মকানুন বোঝা মুশকিল। এখানে লেখক, পাঠক, পত্রিকার সম্পাদক বিভাগ যৌথভাবে কাজটি করেন। সম্পাদকীয় বিভাগের দায়িত্ব এখানে বেশি। কাজেই তাদেরই এগিয়ে আসা উচিত পেশাদারিত্ব রক্ষা করার জন্য। কারণ পত্রিকা একটি বিশাল শিল্প, এটি অন্য যে কোনো শিল্পের চেয়ে আলাদা, এর রয়েছে আলাদা মূল্য। সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিটি পত্রিকারই উচিত বছরে অন্তত একটি ‘পাঠক সার্ভে’ করা। পাঠকগণ কোন ধরনের লেখা বেশি পছন্দ করেন, কোন কোন লেখকদের লেখা তারা পড়েন, কোথায় ঘাটতি রয়েছে, কোথায় কোথায় পরিবর্তন নিয়ে আসা উচিত, কোথায় আরো একটু বেশি উন্নয়ন দরকার ইত্যাদি বিষয়ের ওপর পাঠক জরিপ থাকা প্রয়োজন। এটিও পেশাদারিত্বের অংশ। অনলাইন পত্রিকাগুলো সব বিষয় কাভার করলেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য কোনো কিছু করছে না। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় বিশাল বহরের শিক্ষার্থী রয়েছে, শিক্ষক রয়েছেন। তাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে পত্রিকাগুলোর কিছু করা উচিত। কাগজের প্রায় সব পত্রিকাই সে ব্যবস্থা করে, তবে ব্যবস্থাটি হচ্ছে ‘নোট বা গাইড’ টাইপের যেটি সেই অর্থে শিক্ষায় অবদান রাখছে না। তাদের ভিন্ন চিন্তা করা উচিত শিক্ষার্থীরা যাতে বিষয়ভিত্তিক মৌলিক জ্ঞান লাভ করতে পারে পত্রিকার ‘শিক্ষা পাতা’টি পড়ে। শুধু পরীক্ষার প্রশ্ন ছেপে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার্থী বানালে তো আর সৃজনশীল কাজ হলো না। শিক্ষকদের জন্যও ‘পেডাগজিক্যাল’ বা শিক্ষাবিজ্ঞান চ্যাপটার ও আলোচনা থাকা প্রয়োজন যা শিক্ষকদের বিশাল কাজে লাগবে। একটি জাতীয় পত্রিকার দায়িত্ব তো অনেক। এখানে যারা কাজ করেন তারা সমাজের অন্য যে কোনো পেশা থেকে আলাদা। জাতির প্রতি রয়েছে তাদের আলাদা দায়িত্ব ও কর্তব্য, তারা করেনও ঠিক, তারপরও আমাদের সকলের প্রত্যাশা পত্রিকাগুলোর কাছে একটু বেশি। এর আর একটি কারণ হচ্ছে অসুস্থ রাজনীতির চর্চার যুগে এসব পত্রিকার দায়িত্ব অনেক বেশি, মানুষের প্রত্যাশা তাদের কাছে অনেক বেশি। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে পত্রিকাগুলোকে তাই এক বিশাল ভূমিকা পালন করা উচিত। কারণ দেশে কোন বিরোধীদল নেই, খুব শীঘ্র যে, সেই স্থান পূরণ হবে তারও কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় দেশের মানুষের কথা, মানুষের মনের কথা, সমাজের অসঙ্গতির কথা তুলে ধরার বড় দায়িত্ব কিন্তু পত্রিকাগুলোর। তারাও যদি সব সরকার হয়ে যায় এবং সরকারি সুরে কথা বলে তাহলে তো পত্রিকার সত্যতা বলতে, দায়িত্ব বলতে আর কিছু থাকবে না, তারা যদি সাধারণ মানুষের কথা না বলে তাহলে সাধারণ মানুষের আর কোথাও ফরিয়াদ জানানোর জায়গা রইল না। এই বিষয়গুলো বিবেচনার জন্য সব ধরনের পত্রিকার মালিক, সম্পাদকীয় বিভাগ, অন্যান্য বিভাগসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ। পত্রিকার ব্যবস্থাপনায় পেশাদরিত্ব গড়ে উঠলে তা পত্রিকার জন্য, দেশের জন্য এবং সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য মঙ্গলজনক। আমরা সকল পত্রিকার মঙ্গলই চাই। লেখক : ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত masumbillah65@gmail.com
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১