বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১০ February ২০২০

সড়কে ঠাই নিয়েছে শতাধিক পরিবার

চৌহালীতে অসময়ে যমুনার ভয়াবহ ভাঙ্গন


সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার খাসপুখুরিয়া ইউনিয়নের মিটুয়ানী গ্রাম জুড়ে শুরু হয়েছে অসময়ে যমুনা নদীর ভাঙ্গন। গত এক সপ্তাহের এ ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা না থাকায় তারা আশ্রয় নিয়েছেন পাশের রেহাইপুখুরিয়া গ্রামের পাকা সড়কের ধারে।  স্ত্রী,সন্তান ও গবাদিপশু নিয়ে এসব মানুষ খোলা আকাশের নিচে অথবা টিনের ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে এ গ্রামের একটি কবরস্থান, একটি মসজিদ, ২০টি তাঁত কারখানা ও এক কিলোমিটার পাকা সড়ক। প্রশাসন থেকে এ পর্যন্ত তাদের কোন খোঁজ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। নেওয়া হয়নি। ফলে তাদের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে।

সড়কের পাশে টিনের ঝুঁপরি ঘরে গাদাগাদি করে ছোট ছোট শিশু সন্তান নিয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করায় সেখানে চরম মানবিক বিপর্যয় ঘটছে। শুধু তাই নয়,যমুনা গর্ভে সড়ক বিলীন হওয়ায় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীরা বাধ্য হয়ে কারো বাড়ির উঠন অথবা ঘরের বারান্দর উপর দিয়ে যাতায়াত করছে।

ভাঙ্গনে নিঃস্ব মিটুয়ানী গ্রামের আবু দাউদ মাস্টার, আব্দুর রহমান,রুহুল আমীন,আব্দুল কাদের,লুৎফর রহমান,ইয়াসিন আলী,ইসমাইল হোসেন,আখলিমা খাতুন,আব্দুল হালিম,আব্দুর রহিম,আতিক মোল্লা,আব্দুল মালেক,নাসির উদ্দিন,গোলাম হোসেন,বাচ্চু মোল্লা,ফজিলা খাতুন,কামরুল ইসলাম,হারুন আরকাটি,আক্কাস মোল্লা,রহিম আরকাটি,আবু বাক্কার জানান, গত এক মাস ধরে এ গ্রামে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ ভাঙ্গনের মাত্র গত এক সপ্তাহ ধরে আরো তীব্র আকার ধারণ করায় শতাধিক বাড়িঘর,পাকা সড়ক,গাছপালা ও ফসলি জমি দেখতে দেখতে চোখের সামনে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে নিঃস্ব এ সব পরিবার রেহাইপুখুরিয়া গ্রামের পাকা সড়কে আশ্রয় নিয়েছে।

তারা আরো জানান, গত ৫ বছরে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গণে চৌহালী উপজেলার খাষপুখুরিয়া থেকে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভুতেরমোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকার সাড়ে ৪ হাজার ঘরবাড়ি, ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩ কিলোমিটার পাকা সড়ক,৩টি মসজিদ, ২ হাজার বিঘা ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিশেষ করে গেল বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যমুনার ভাঙ্গনে মিটুয়ানী ও খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে শত শত মানুষ তাদের মাথা গোজার ঠাঁই হারিয়েছে। এর মধ্যে এ ৩টি পরিবারের ১৫ জন মানুষ উপায় অন্ত না পেয়ে নদীর পাশে অবস্থিত শত বছরের একটি কবরস্থানে আশ্রয় নিয়ে বসবাস শুরু করে। এখন ওই কবরস্থানটিও যমুনা নদীর কড়ালগ্রাসে ভেঙ্গে যাওয়ায় তারা আশ্রয়হীন হয়ে পাশের গ্রামের সড়কের ধারে আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অথবা ঝুঁপড়ি ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

কবরস্থানে আশ্রয় নেয়া বয়োবৃদ্ধ আতর আলী (৭৫) জানান, প্রয়োজন কোন আইন কানুন মানে না। কবরস্থানে বসবাস ধর্মীয় বিধান বর্হিভূত হলেও কোন পথ না পেয়ে নিরুপায় হয়ে কবরস্থানের জায়গায় ঘর তুলে বসবাস শুরু করি। এখান সেটিও ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে চরম বিপাকে পড়েছি। এই বয়সে ছেলে মেয়ে নাতি পুতি নিয়ে কোথায় যাব। যাওয়ার জায়গা খুজে পাচ্ছি না।

সরেজমিন মেটুয়ানী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,মানুষজন তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। অনেকেই পৈত্রিক ভিটা হারিয়ে নদীপাড়ে বসে আহাজারি করছে। অনেকে গাছপালা কেটে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। নদীর পানি বাড়ির ভিটা থেকে খাড়া হয়ে ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে। পানির ঘুর্ণাবর্ত ও স্রোতের ধাক্কায় বিশাল এলাকায় বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়ে মূহুর্তে তা ধসে পড়ছে। এ ভাঙ্গণের তান্ডব পুরো গ্রাম জুড়ে শুরু হওয়ায় গ্রামের সর্বত্র শোকের মাতম চলছে।

খাসপুখুরিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বর রবিউল ইসলাম জানান, ভিটামাটি হারানো এ সব পরিবার গুলোকে মানবিক কারণেই দ্রুত পূণর্বাসন করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে বলেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এসেও ভাঙ্গণ এলাকার মাপঝোক নিয়ে গেছে। কিন্তু তারপরেও এখনও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে মেটুয়ানী গ্রামের একটি বাজার,একটি হাই স্কুল,একটি প্রাইমারি স্কুল,একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা,দেড় শতাধিক বাড়িঘর,পাশের দেওয়ানগঞ্জ বাজার ভাঙ্গণের মুখে পড়েছে।

চৌহালীর খাসপুখুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সরকার জানান,এ সব ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে তারা বিভিন্ন সড়ক ও পরিত্যাক্ত জায়গায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লোকজন এসে মাপঝোক নিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও কাজ শুরু করেনি। ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা ভাংছে। বিলিন হচ্ছে ঘরবাড়ি,গাছপালা ও ফসলি জমি। ফলে নিঃস্ব হচ্ছে এ এলাকার মানুষ।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহাম্মেদ জানান, মিটুয়ানী গ্রামের ভাঙ্গনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশ্রয়হীনদের দ্রুত সময়ের মধ্যে পুণর্বাসনের চেষ্টা চলছে। ব্যবস্থা হলে তাদের ওখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান,যমুনা নদীর পূর্বপাড়ের চৌহালী অংশ টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখে। এ বিষয়ে তারাই ভাল বলতে পারবে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান,এ বিষয়ে আমাদের নগদ অর্থ বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পেতে প্রায় ১ বছর সময় লাগবে। এদিকে এ ভাঙ্গণে ব্যাপক ক্ষতি দেখা দিয়েছে। ফলে জরুরী ভিত্তিতে বাকিতে কাজ শুরু করতে চাইলেও কোন ঠিকাদার কাজ করতে রাজি না হওয়ায় কাজটি শুরু করতে একটু দেরি হচ্ছে। তবে আমার অনুরোধে দু‘জন ঠিকাদার বাকিতে কাজ করতে রাজি হয়েছে। আশাকরি এ সপ্তাহের মধ্যেই এ ভাঙ্গন রোধে কাজ শুরু হয়ে যাবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১