আপডেট : ০৯ February ২০২০
চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় দেড় মাস যাবত কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদে অবস্থিত চিলমারী ভাসমান তেল ডিপো যমুনা ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের বার্জ দুটি তেল শূন্য রয়েছে। ফলে এলাকায় তেলের সংকট সৃষ্টি হওয়ায় চলতি মৌসুমে বোরো চাষ নিয়ে কৃষকরা চরম হতাশায় ভুগছে। ধানের মূল্য কম উৎপাদন খরচ বেশী, তার উপর চড়া মূল্যে তেল কিনতে হচ্ছে কৃষকদের,এ যেন “মরার উপর খড়ার ঘা”। ডিপো সুপারদের অবহেলায় তেল ডিপো দুটি তেল শুন্য হয়ে বোরো মৌসুমে তেল সংকটে ভূগছে এলাকার হাজার হাজার কৃষক। জানাগেছে,ভাসমান তেল ডিপো দু’টির অনুমোদিত ২২জন ডিলার প্রতি লিটার তেল ৬২ টাকা ৫১ পয়সায় ক্রয় ক্রয় করে খুচরা বিক্রেতাদের নিকট সরবরাহ করেন। খুচরা বিক্রেতারা প্রতি লিটার তেল বিক্রি করেন ৬৫ টাকায়। যমুনা ও মেঘনা তেল ডিপো দু’টি তেল শুন্য হওয়ায় পার্বতীপুর থেকে সড়কপথে তেল পরিবহন করলে ১লড়ি অর্থাৎ ৯ হাজার লিটার তেল আনতে অতিরিক্ত পরিবহন ও লেবার খরচ হয় প্রায় ১৮ হাজার টাকা। যা প্রতি লিটারে প্রায় ২ টাকা বেশী। সব মিলে ডিলারদের তেল কিনতে হয় প্রায় ৬৫টাকায়। এর ফলে ক্রেতাদের তেল কিনতে হচ্ছে প্রতি লিটার ৬৭-৭০ টাকায়। উপজেলার চাহিদা মিটানোর পর নারায়নপুর, যাত্রাপুর, সাহেবের আলগা,রৌমারী,রাজিবপুর, সানন্দবাড়ী, জাফরগঞ্জ,কামারজানী ও উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সেচ মৌসুমে ভাসমান তেল ডিপো থেকে প্রতিদিনের তেলের চাহিদা প্রায় ১হাজার ৫শ ব্যারেল বা ৩ লাখ লিটার। চিলমারী ভাসমান তেল ডিপো দুটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তেল বাজার জোড়গাছ বাজারে সরেজমিন গিয়ে কথা হয় খুচরা তেল ব্যবসায়ী নুর ই আলম বাদল, রাশেদুল ইসলাম, মমিনুল, ধীরেন্দ্র নাথসহ অনেকের সাথে। তারা বলেন, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল নিতে অতিরিক্ত খরচ না থাকায় আমরা প্রতি লিটার তেল ৬৫ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। বর্তমানে দুর থেকে তেল আনতে পরিবহন খরচ বেশী হওয়ায় বেশী দামে তেল বিক্রি করছি। এসময় কথা হয় ক্রেতা আফসার আলী ও সুলতানের সাথে। তারা জানায় ডিপোতে তেল না থাকায় প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় তেল কিনতে আমাদের অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে অনেক টাকা। কৃষি অফিস সুত্রে জানায় এবারের বোরো মৌসুমে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৬হাজার ৮শ হেক্টর জমি যার অধিকাংশই ডিজেল ইঞ্জিন চালিত স্যালো মেশিনের উপর নির্ভরশীল।স্থানীয় ভাসমান তেল ডিপো দুটি তেল শুন্য থাকলে লক্ষমাত্রা অর্জনে বাধার সৃষ্টি হতে পারে মর্মে কৃষি কর্মকর্তার ধারনা। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও জামালপুর জেলার প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জ্বালানী চাহিদা পুরন করে আসছে ওই ভাসমান তেল ডিপো দুটি।উপরোক্ত জেলা সমুহের চরাঞ্চলের কৃষকদের বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় তারা শুধুমাত্র জ্বালানী তেলের উপর নির্ভরশীল। তাই মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানী দুটি তেলশূন্য থাকায় সুবিধাভোগীরা তেল সংকটে ভুগছেন। তেল ব্যবসায়ী নজির এন্ড সন্স এর সত্বাধিকারী মাইদুল ইসলাম জানান, পার্বতীপুর ও বাঘাবাড়ি থেকে সড়কপথে তেল পরিবহন করলে লিটারপ্রতি প্রায় ২-৩ টাকা বেশি খরচ হয় ফলে ক্রেতাদের অধিক মূল্যে তেল কিনতে হয়। তাছাড়া পার্বতীপুরে আমাদের জন্য তেলের বরাদ্দ না থাকায় সেখানকার স্থানীয় ডিলারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে তেল নিতে হয়। তাই জনগণের সুবিধার্থে ডিপো দুটিতে তেলের মুজদ বাড়িয়ে এ অঞ্চলে জ্বালানী তেলের সংকট নিরসন করা দরকার। এ ব্যাপারে যমুনা ওয়েল কোম্পানীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাফাজ্জল হোসেন বলেন, তেল সরবরাহের বিষয়ে তিনি উপরে কথা বলেছেন,আগামী ১০-১৫দিনের মধ্যে তেল আসবে। মেঘনা কোম্পানীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আইয়ুব আলী বলেন, গত ৮জানুয়ারী ডিপোর তেল শেষ হয়েছে,তেলের জন্য উপরে কথা বলেছি অল্পদিনের মধ্যে তেল আসবে বলে আশা করছি।
ডিলাররা অন্য ডিপো থেকে তেল নিয়ে স্থানীয়সহ বিদ্যমান এলাকা সমুহের তেলের চাহিদা পুরন করতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।এতে প্রতিদিন প্রায় ৬লাখ টাকা অতিরিক্ত লেনদেন হচ্ছে এলাকায় সৃষ্ট তেল বাজারে। শুধু তাই নয়,এভাবে চলতে থাকলে ডিলারদের হাতে থাকা দীর্ঘ দিনের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতা হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ফলে চিলমারীর তেল ব্যবসায়ীরা খুচরা বিক্রেতাদের নিকট পড়ে থাকা বাকী অর্থ উত্তোলন করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন। অপরদিকে ডিপো দুটি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন খেটে খাওয়া প্রায় ৩শ শ্রমিক কাজ না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১