আপডেট : ০৫ February ২০২০
জাকির হোসেন, মাদারীপুর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী আকন সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাউয়াকুড়ি গ্রামে ১৯৯৮ সালে মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার পর ২০০৫ সালে ১৫ বছর বয়সে তারই মেয়ে রিক্তা আক্তারের বিয়ে হয় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলতলী গ্রামের আবদুল ওদুদ উকিলের বড় ছেলে ফিরোজ মাহমুদের সঙ্গে। ফিরোজ মাহমুদ ছিলেন সাংবাদিক, কবি ও কলামিস্ট। চাকরি করতেন দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায়। বিবাহিত জীবনে তারা সুখেই ছিল। বিয়ের ছয় মাস পরে রাজধানী ঢাকার বাসাবো কদমতলা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন তারা। দাম্পত্য জীবনে তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় তিনটি পুত্রসন্তান। বড় ছেলে যুবরাজ মাহমুদ নীরব-এর বয়স এখন ১২ বছর, মেজো ছেলে নিলয়ের বয়স ৬ বছর আর ছোট ছেলে উদয়ের বয়স ৪ বছর। টানাপোড়েনের সংসার হলেও মোটামুটি খেয়ে-পড়ে সুখ-দুঃখের মাঝে হাসিখুশিতেই কাটতো রিক্তার সুন্দর সময়। কিন্তু তার এ সুখ-শান্তি বেশিদিন কপালে সইলো না। হঠাৎ একদিন ফিরোজের একটি কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তার চাকরিটা চলে যায়। বেকার হয়ে মানবেতর জীবনে ঘোর অন্ধকারে ছেয়ে যায় তার সুখের সংসার। স্বামীর চিকিৎসার জন্য দ্বারে দ্বারে ধরনা দিতে হয় রিক্তাকে। বিধাতার খেয়ালে এক বছরের মধ্যে ফিরোজের অন্য কিডনিটাও নষ্ট হয়ে যায়। শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন ফিরোজ। তখন দেশের দানশীল ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য চেয়ে একাধিক পত্রিকায় চিকিৎসার আবেদন জানানো হয়। কিন্তু কেউ তার আবেদনে সাড়া দেয়নি। সরকারিভাবে তিনবার দেড় লাখ টাকা পেয়েছিলেন, যা ছিল এই ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য একেবারেই অপ্রতুল। অবশেষে ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। পেছনে রেখে গেলেন স্ত্রী-সন্তানদের জন্য অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। বাবার আদর স্নেহমমতা কাকে বলে তা এই অবুঝ শিশুরা জানে না। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস স্বামী অকালে চলে যাওয়ায় রিক্তার জীবনে নেমে এলো গভীর অন্ধকার। একটি মৃত্যু কতো সহজে কেড়ে নিলো একটি সাজানো সংসার। আজ তিনটি অবুঝ শিশু সন্তান নিয়ে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে ও একজন প্রথিতযশা সাংবাদিকের স্ত্রীর জীবন চলে ভিক্ষা করে। গোপালগঞ্জের বৌলতলী স্কুলের শিক্ষকদের রিক্তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী আকন ১৯৯৮ সালে মারা গেছেন। তার স্ত্রী বৃদ্ধা সাবেহা বেগম একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে অলিকে নিয়ে থাকেন সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের সামনে অন্যের বাসায়। স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় চলে থাকা-খাওয়া, বাসা ভাড়া ও পঙ্গু ছেলের চিকিৎসা। রিক্তার শ্বশুরবাড়ির অবস্থাও শোচনীয়। সেখানে ভিক্ষা করা ছাড়া তার আর কোনো পথ খোলা নেই। ছলছল চোখে রিক্তা বলেন, আমি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিনীত নিবেদন করছি, তিনি যেন এই এতিম সন্তানদের দিকে একটু সুনজর দেন।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১