বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৩ January ২০২০

পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ মেয়র প্রার্থীদের


ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। প্রতিপক্ষের ওপর হামলার অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারযুদ্ধে নামার তৃতীয় দিনে প্রার্থীরা হামলার কথা বলছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকরা প্রচারণা চলাকালে হামলা করেছেন। অপরদিকে, দক্ষিণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছেন।  

গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলছেন, রোববার (গতকাল) দুপুরে মিরপুর-১ নম্বরের শাহ আলী মাজার এলাকায় পুলিশের সামনেই আমার প্রচার মিছিলে হামলা করেছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস অভিযোগ করেছেন, আগের দিন (শনিবার) সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ মিশন রোডে তার পক্ষে নেতাকর্মীদের গণসংযোগে হামলা করেছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। তার এ পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেছেন দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, আমার প্রয়াত আব্বা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার বিরুদ্ধে কটূক্তিমূলক কথাবার্তা বলায় সেখানে উত্তেজনা ছড়ায়। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মী-সমর্থকরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমরা না বরং তারাই আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের কাছে ছবি আছে। আমাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

জানা গেছে, উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল গতকাল সকালে মিরপুর-১ শাহ আলীর মাজার জিয়ারতের পর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। তখন মাজারের সামনেই দুটি পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য। ওই হামলার জন্য আওয়ামী লীগ কর্মীদের দায়ী করেন তাবিথ আউয়াল।

তিনি বলেন, শাহ আলী মাজারের সামনে প্রচারের সময় জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়। পুলিশের সামনেই আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।

তাবিথ আরো বলেন, ২০১৫ সালে হামলার আশঙ্কায় আমি নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলাম। তখন আমাকে পুলিশ প্রটেকশন দিয়েছিল। কিন্তু এবার পুলিশের সামনেই হামলার শিকার হলাম। ‘আক্রান্ত’ হলেও শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার চালিয়ে যাবেন বলে জানান তাবিথ আউয়াল।

এদিন তাবিথ বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে মিরপুর-১ এর বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালান।

গণসংযোগকালে তাবিথ আউয়াল বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি স্তর ‘দুর্নীতিতে ভরে গেছে’। আমরা ইতোমধ্যে নাগরিক সমস্যার ১২টা জায়গা চিহ্নিত করেছি। দায়িত্ব পেলে এই ১২টা জায়গায় আমরা সমন্বয় ও গুরুত্বের ভিত্তিতে একযোগে কাজ শুরু করব। ডেঙ্গু, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও যানজটের মতো বাসা ভাড়াও ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। এই লড়াইয়ে জয়ী হতে পারলে ঢাকার নাগরিক সমস্যার সমাধানে কাজ করা সহজ হবে।

 

আতিকুলের গণসংযোগ

অপরদিকে সকালে উত্তরার রাজলক্ষ্মী থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন উত্তর আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এরপর কসাইবাড়ি রেলগেট, কাঁচপুর ও দক্ষিণখান এলাকায় গণসংযোগ করেন।

এ সময় আতিকুল গত ৯ মাস মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালীন নিজের কর্ম ও সদিচ্ছার কথা তুলে ধরে ভোট চান নগরবাসীর কাছে। তিনি ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, উন্নয়ন চলছে, চলবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আপনারা যদি আমাকে সুযোগ দেন আমি আপনাদের একটি সচল ঢাকা উপহার দেব। আমার আন্তরিকতার অভাব নেই। আমি মেয়র হলে ঢাকাকে সিঙ্গাপুর-দুবাইয়ের মতো গড়ে তোলা হবে।

আতিকুল বলেন, গত নয় মাসে একটি মিনিটও বসে থাকিনি। আগামীতে নির্বাচিত হলে কী কী কাজ করব সেসব পরিকল্পনা করা হয়েছে, এখন শুধু কাজ করব। আমি সব গুছিয়ে নিয়েছি আপনারা আমাকে সুযোগ দেন, আমি আপনাদের সকলের প্রত্যাশার ঢাকা উপহার দেব।

 

তাপসের গণসংযোগ

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে নূর তাপস শান্তিনগর কাঁচাবাজার থেকে তৃতীয় দিনের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, গতকাল (শনিবার) আরকে মিশন রোডে নির্বাচনী প্রচারের এক পর্যায়ে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাসাতেও আমি গিয়েছি। সেখানে সকলের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি, ভোট প্রার্থনা করেছি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমরা সেখান থেকে চলে আসার পর সন্ধ্যার দিকে তারা অতর্কিতে আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীসহ গণসংযোগে যারা ছিল তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।

তাপস বলেন, আমরা চাই সম্প্রীতির রাজনীতি, পরিবর্তনের রাজনীতি। আমরা এই রাজনীতির সূচনা করতে চাই। আমরা আশা করব সকলে আমার সাথে সেই সূচনায় অংশগ্রহণ করবে।

তাপস আরো বলেন, আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি, আমাদের প্রাণের ঢাকা, ভালোবাসার ঢাকাকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা এবং সর্বোপরি উন্নত ঢাকা গড়ে তোলার জন্য, ঢাকাবাসী সেটা সাদরে গ্রহণ করেছে। এজন্য স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। আমরা খুবই আশাবাদী যে ঢাকাবাসী আমাদের পক্ষে রায় দেবে। গতকাল রোববার সারা দিন পল্টন, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, সিদ্ধেশ্বরী ও বেইলি রোড এলাকায় প্রচার চালান তাপস।

 

ইশরাকের গণসংযোগ

এদিকে গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের (জজ কোর্ট) সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করেন দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। এ সময় প্রচার শুরুর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ইশরাক হোসেন বলেন, আমি প্রচার চালাতে গিয়ে নিজে এখন পর্যন্ত কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি। কিন্তু আমাদের অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেছি। তিনি বলেন, ঢাকাবাসীদের বলতে চাই এখন একটা পরিবর্তন দরকার। ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। গত ১৩ বছরে বর্তমান সরকার এই শহরকে একেবারেই ধ্বংস করে ফেলেছে। এর থেকে যদি আপনারা উত্তরন চান, তাহলে অবশ্যই ধানের শীষে ভোট দেবেন। আপনাদের অধিকার রক্ষায় আপনারা এগিয়ে আসবেন।

গতকাল ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ইশরাকের গণসংযোগ উদ্বোধন করারপর জজকোর্ট, শাঁখারী বাজার, তাতীবাজার, নয়াবাজার, নবাব ইউসুফ মার্কেট প্রমুখ এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সম্বয়কারী মির্জা আব্বাস, সদস্য বিএনপি দক্ষিনের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, বিএনপি নেতা কাজী আবুল বাসার, মির সরাফত আলী সপু প্রমুখ।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১