আপডেট : ১০ January ২০২০
জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে যুক্তরাষ্ট্রের হত্যা ও জবাবে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর দুই পক্ষই সংযত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালানোর পর ইরান মনে হচ্ছে ক্ষান্ত দিয়েছে। হামলার বদলা নেওয়ার কোনো হুমকি দেননি তিনি। অন্যদিকে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীও জানিয়েছেন, সোলাইমানি হত্যার বদলা নিতে তারা মিসাইল হামলা চালিয়েছে কিন্তু তারা যুদ্ধ চান না। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা ও পার্স টুডের। গত ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) কুদস বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হন। এ হামলার কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয় ইরান। গত বুধবার সকালে ইরাকের মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় দেশটি। এতে ৮০ মার্কিন সেনা নিহত ও কয়েকশ আহত হয় বলে জানায় ইরান। আহতদের ইসরাইলের তেলআবিবের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, অল ইজ ওয়েল। অর্থাৎ এ পর্যন্ত যা হয়েছে সব ঠিক আছে। হামলা-পাল্টা হামলা নিয়ে চরম উত্তেজনার মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে দুই পক্ষ থেকেই কিছুটা নমনীয়তার ইঙ্গিত মিলেছে। ট্রাম্প বলেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা বাদ দেয় এবং সন্ত্রাসের পথ ত্যাগ করে, তাহলে শান্তি স্থাপনে তিনি প্রস্তুত। ইরানের সঙ্গে কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলে তিনি জানিয়েছেন। জাতিসংঘে পাঠানো এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্র এ কথা জানায়। তবে ওই চিঠিতে আত্মরক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া চিঠিতে মার্কিন দূত কেলি ক্রাফট বলেছেন, ইরানি শাসক দ্বারা আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা বা উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়ানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ চার্টারের ৫১ ধারার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে সোলাইমানিকে হত্যা যৌক্তিক বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, নিজেদের সেনা ও স্বার্থের সুরক্ষার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে প্রয়োজন অনুসারে আরো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি দূত মাজিদ তাখত রাভাঞ্চি বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার প্রস্তাব বিশ্বাসযোগ্য নয়। তেহরানও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলাকে যৌক্তিকতা দিতে জাতিসংঘ চার্টারের ৫১ ধারার কথা তুলেছে। ইরানি চিঠিতে বলা হয়েছে, ইরান উত্তেজনা বা যুদ্ধ চায় না। বাগদাদে হামলা ছিল নির্দিষ্ট ও সামরিক উদ্দেশ্যে। ফলে সেখানে কোনো বেসামরিক নাগরিক ও সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ইরান যে নতুন কোনো হামলা চালানোর সম্ভাবনা নাকচ করেছে, তাকে ইতিবাচক বলে বর্ণনা করেন ট্রাম্প। বলেন, তারা যে ক্ষান্ত দিয়েছে সেটা সবার জন্যই মঙ্গলজনক। আমাদের সব সেনা নিরাপদে আছেন। তবে আমাদের সামরিক ঘাঁটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে। আমাদের সেনারা যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। ইরান থেমে গেছে; যেটা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ও বিশ্বের জন্য ভালো। আমাদের অনেক শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও অস্ত্র আছে। তার মানে এই নয়, তা ব্যবহার করতে হবে। আমরা তা ব্যবহার করতে চাই না। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি আছে। তবে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি না দিলেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প বলেন, ইরান আচরণ পরিবর্তন না করা পর্যন্ত নতুন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, সোলাইমানি হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জবাব দেওয়া হয়ে গেছে। আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে প্রস্তুত। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে, ইরান তাদের প্রক্সি বাহিনীকে কোনো হামলা না চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে ট্রাম্পের যুদ্ধক্ষমতা সীমিত করতে মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটাভুটি হওয়ার কথা। ইরানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের সামরিক কার্যক্রম সীমিত করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, সামরিক যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কংগ্রেসের সঙ্গে শলাপরামর্শ করতে হবে। এর আগে গত রোববার পেলোসি বলেন, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনায় ভীত কংগ্রেস। প্রশাসন কংগ্রেসকে না জানিয়েই সিদ্ধান্ত (সোলাইমানিকে হত্যা) নিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী যুদ্ধে যাওয়ার ব্যাপারে কংগ্রেসের পরামর্শ নেওয়ার প্রতি সম্মান জানানো হয়নি। তাই প্রেসিডেন্টের সামরিক কার্যক্রম সীমিত করার জন্য যুদ্ধক্ষমতা কমানোর পক্ষে আমি। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকাণ্ড আমাদের সেনাবাহিনী, কূটনীতিক এবং বেসামরিক লোকজনকে বিপদের মুখে ফেলেছে। অন্যদিকে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের সংরক্ষিত গ্রিন জোনে দুটি রকেট হামলা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে কঠোর নিরাপত্তায় সুরক্ষিত এ গ্রিন জোনে রকেট হামলা চালানো হয়। এখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পার্লামেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের দূতাবাস রয়েছে। খবরে বলা হয়, বুধবার মধ্যরাতে বিকট শব্দে দুটি রকেট হামলা চালানো হয়। ইরাকে মার্কিন দুটি বিমান ঘাঁটিতে ইরানের হামলা চালানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাগদাদে এ রকেট হামলা হলো। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ইরাকের সামরিক বাহিনী। এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি হোয়াইট হাউজ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১