আপডেট : ১০ January ২০২০
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ ও ২০২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি পালন করা হবে দেশব্যাপী। আর এর ক্ষণ গণনা শুরু হচ্ছে আজ থেকে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এর উদ্বোধন করবেন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসকে ঘিরে ১০ জানুয়ারি ক্ষণ গণনার সময় ধার্য করা হয়। সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো বলছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তরুণ প্রজন্ম ও কিশোরদের কাছে উপস্থাপন করতে বিশেষ মুজিববর্ষ। তাছাড়া সরকার বলছে, এই উদযাপনের লক্ষ্য হচ্ছে জাতির জীবনে নতুন জীবনী শক্তি সঞ্চারিত করা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথ আরো একধাপ এগিয়ে নেওয়া। জানতে চাইলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই মুদ্রার এপিট-ওপিট। এ কথা বলা মোটেও অত্যুক্তি হবে না। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুকে চিন্তা করা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিলে অর্থহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশও। এ কথা তো ইতিহাসের অবিসংবাদী সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বোধ করি অপূর্ণ ও অধরাই থেকে যেত। তাই মুজিববর্ষের বছরব্যাপী কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানমালা তেমনই জাঁকজমকপূর্ণ, আকর্ষণীয় ও আড়ম্বরপূর্ণ হবে। এর জন্য এখন যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থেকে ক্ষণ গণনার উদ্বোধন করবেন। এর জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বছরব্যাপী ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আয়োজন শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়, বেসরকারি সংস্থাসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো করে পরিকল্পনা হাতে নিতে শুরু করেছে। আর আয়োজন শুধু শহরের মধ্যে সীমিত থাকবে না, নিয়ে যাওয়া হবে প্রান্তিক পর্যায়েও। জানা গেছে, মুজিববর্ষকে সামনে রেখে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন উপলক্ষে ২২-২৩ মার্চ বিশেষ অধিবেশন বসবে। জাতীয় সংসদ ১৯মার্চ শিশু দিবস উপলক্ষে শিশুদের নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’-এর অনুষ্ঠান শুরু করবে। ২২ মার্চ অধিবেশনের শুরুর পূর্বে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে সব সংসদ সদস্য জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশেষ অধিবেশনে যোগ দেবেন। এমনিতে প্রতি বছর জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস এবং ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার দিনটিকে স্মরণ করে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বছরটি এমনভাবে উদযাপন করা হবে যাতে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ আরেকবার বঙ্গবন্ধুর অবদানকে গভীরভাবে স্মরণ করে। এজন্য শহর থেকে প্রান্তিক পর্যায় সব মানুষকে বিবেচনা করে সাজানো হবে অনুষ্ঠান। তুলে ধরা হবে, বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণের কথা। মহীরুহসম ব্যক্তির জন্মশতবর্ষ মানে আরও বিশেষ কিছু অবশ্যই। যা ইতিহাসে চিরস্থায়ী স্বাক্ষর রেখে যেতে সক্ষম হতে পারে। সরকার এরই মধ্যে মুজিববর্ষ উদযাপনে দুটি কমিটি গঠন করেছে। একটিতে প্রধানমন্ত্রী সভাপতি হিসেবে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন এ সংক্রান্ত অন্যান্য কমিটিতে। কমিটিতে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা, সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ইতিহাসবিদ, সাবেক ও বর্তমান আমলা, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে রাখা হয়েছে। মুজিববর্ষ উদযাপন বাস্তবায়নেও করা হয়েছে কমিটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে। বর্তমানে পুরো কার্যক্রম সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে একটি অস্থায়ী কার্যলয় করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিউট কার্যালয়ে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিটিকে সাচিবি সহায়তা দিচ্ছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে একটি থিম সং করা হচ্ছে। থাকছে বিশেষ বিজ্ঞাপন। করা হয়েছে ওয়েবসাইট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একটি পেজ খোলা হয়েছে। শুধু শহর নয়, পুরো আয়োজনের লক্ষ্য থাকবে দেশের প্রান্তিক মানুষ। তাদের কাছে জাতির পিতার অবদান সঠিকভাবে তুলে ধরাই হবে প্রধান লক্ষ্য। এজন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা থাকবে। সব ধরনের গণমাধ্যমে থাকবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এছাড়া বিশেষ কিছু প্রকাশনাও করার কাজ চলছে। তবে সব আয়োজনের চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। তিনি সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। আর কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হতে পারে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের একটি সংকলন প্রকাশ করার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। ৪৭টি ফাইলের ৩০ হাজার পাতাকে নয় হাজার পাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এটা ১৪টি খণ্ডের একটি সংকলন হবে। এই রিপোর্ট পড়লে দেশের ইতিহাস জানার কিছু বাকি থাকে না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নিয়েও কয়েকটি খণ্ডের একটি সংকলন হচ্ছে। বাংলা ও ইংরেজিতে প্রকাশিত হবে ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা’। বিশ্লেষকরা বলছেন, আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে শিক্ষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, সর্বোপরি সত্তরের নির্বাচনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ৭ মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে তিনি যে ভাষণ দেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তা হয়ে আছে এক অম্লান ও চির স্মরণীয় মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ যা বিশ্বে অন্যতম ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইউনেস্কো কর্তৃক কেবল একটি ভাষণ ‘ওয়ার্ল্ডস ডুকমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই ১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। আসছে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর পূর্ণ হবে। আর ঠিক পরের বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগগুলো মুজিববর্ষ উদযাপনে আলাদাভাবে কমিটি গঠন করে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিতে শুরু করেছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মুজিববর্ষে ১৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা নতুন বাড়ি পাবেন। আর বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা মুজিববর্ষে প্রতিদিন এক ঘণ্টা বেশি অফিস করতে যাচ্ছে। সড়ক বিভাগ এই বছরটি ঘিরে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। অপরদিকে এই বছরের প্রতি মাসের ১৭ তারিখে বিমান চলাচলে থাকতে পারে বিশেষ ছাড়। মুজিববর্ষ উদযাপনে ফুটবল কিংবদন্তি ম্যারাডোনাও আসবে ঢাকা। বাংলাদেশ ফুডবল ফেডারেশন এ ব্যাপারে কাজ করছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে মুজিববর্ষ উপযাপন করবে ইউনেস্কো। বিশ্ব নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এরই মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অনেক বিশ্ব নেতা মুজিববর্ষের আয়োজনে ঢাকায় আসতে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদও আসছেন ঢাকায়। ক্রীড়াঙ্গনেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ আয়োজন। ফুটবলের তারকা খেলোয়াড়ও আসবেন ঢাকায়। তফসিলি ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানরা মুজিববর্ষ উদযাপনে চলতি সপ্তাহেই ২২৫ কোটি টাকা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট তহবিলে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন করবে বিদেশে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোও। বাংলাদেশের সব মিশনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সে লক্ষ্যে এখন চলছে প্রস্তুতি। জানা গেছে, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে এই সময়ে। এ লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দৈনিক পত্রিকা ও টেলিভিশনগুলো বিশেষ নিবন্ধ ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১