আপডেট : ২২ December ২০১৯
নেত্রকোণার কলমাকান্দায় দলিল লেখক ও সাব রেজিস্ট্রারের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বে দলিল সম্পাদনসহ অন্যান্য কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দলিল রেজিস্ট্রি, দলিল ফেরত, নকল সরবরাহসহ সকল প্রকার কার্যক্রম প্রায় বিশ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে সেবা গ্রহীতাসহ স্থানীয় লোকজনের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। দলিল লেখকরা জানায়, গত ৫ ডিসেম্বর সাব-রেজিস্ট্রার রহমত উল্লাহ লতিফের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে তাকে দ্রুত কলমাকান্দা থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে মহাপরিদর্শক (নিবন্ধন) বরাবর তারা লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়। তারপর থেকে দলিল লেখকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গত (১৭ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার বিকালে সাবরেজিস্ট্রারের অপসারণের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেনের মাধ্যমে মহাপরিদর্শক (নিবন্ধন) বরাবর ৪৫ জনের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার রহমত উল্লাহ লতিফ গত ১০ অক্টোবর কলমাকান্দায় সাব-রেজিস্টার হিসেবে যোগদান করেন। এই কার্যালয়ে সপ্তাহে পাঁচদিন তার অফিস করার কথা থাকলেও পার্শ্ববর্তী উপজেলায় অতিরিক্তি দায়িত্ব পালনের কারণে তিনি সপ্তাহে তিন দিন অফিস করতেন। আর ৫ ডিসেম্বর থেকে অজ্ঞাত কারণে তিনি ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন। সাব-রেজিস্ট্রারের অনুপস্থিতির ফলে চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত দলিল রেজিস্ট্রি, দলিল ফেরত, নকল সরবরাহসহ সকল ধরণের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যার ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার। রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে দলিল রেজিস্ট্রিসহ অন্যান্য সেবা নিতে ১৫ থেকে ২০ জন লোক এসেছেন। তাদের মধ্যে উপজেলার বটতলা গ্রামের মো. কবির হোসেন দলিল রেজিস্ট্রি হবে না শুনে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন। কবির হোসেন মতো আরো একাধিক সেবা গ্রহীতাকে এসময় জটলা বেঁধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসা রংছাতি গ্রামের মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগামী মাসের ৭ তারিখ আমার মেয়ের বিয়ের কথা রয়েছে। কিন্তু সাবরেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের দ্বন্দ্বের কারণে আমি জমিটি বিক্রি করতে না পারায় মেয়ের বিয়ে দেয়া নিয়ে আমি খুবই বেকায়দায় রয়েছি। কৃষক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলতি বোরো ফসলের আবাদ করতে বিশ শতক জমি বিক্রি করেছি। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের দ্বন্দ্বের কারণে দলিল সম্পাদন না করতে পাড়ায় ক্রেতা আমাকে টাকা দিচ্ছেন না। দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আক্তার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক গোপাল তালুকদার বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার রহমত উল্লাহ লতিফকে প্রত্যাহারসহ তার অনিয়ম দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি অরো বলেন, ওই অভিযোগে আমরা ৪৫ জন স্বাক্ষর করেছি। তবে ওই সাব-রেজিস্ট্রারকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমরা কাজে যোগদান করবো না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্ট্রার রহমত উল্লাহ লতিফ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সম্পুর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমি এ কার্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই একটি অসাধু চক্র আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তিনি আরো জানান গত (১১ ডিসেম্বর) ওই অফিসের ভেন্ডার আব্দুর রশিদ আকন্দ,তার বোন দলিল লেখক মালেকা খাতুন ও তার ছেলে নকলনবিশ রিয়াজ উদ্দিন আকন্দ, তার বোনজামাই মোজাম্মেল হক, দলিল লেখক গোপাল চন্দ্র তালুকদার ও দলিলসহ সিন্ডিকেট নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগের অনুলিপি মহা-পরিদর্শক নিবন্ধন সহ স্থানীয় সাংসদ ও জেলা রেজিষ্টার বরাবরে আবেদন করেছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভেন্ডার আব্দুর রশিদ আকন্দ বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সম্পুর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তিনি আরো বলেন সাব-রেজিস্ট্রার রহমত উল্লাহ লতিফ শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১