বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৬ December ২০১৯

ইসলামে কন্যাসন্তানের মর্যাদা


মানবজীবনে সন্তান-সন্তুতি পরম পাওয়া। সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা একটা সন্তানের আশায় চোখের পানি ফেলে চললেও আশা পূরণ হচ্ছে না। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার মায়ার সীমা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। ছেলে হোক আর মেয়ে হোক- সন্তান তো সন্তানই। অবশ্য মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এতটা জঘন্য ও নিকৃষ্ট হয়ে থাকে যে, তাদের বর্বরতা ও নিকৃষ্টতা বিবেককে প্রকম্পিত করে তুলে থাকে।

ইসলামের প্রাক্কালে আরবদের নিকট কন্যা বা মেয়ে সন্তানের জন্ম দেওয়া পিতার জন্য অপমানজনক ছিল। সে সময় পিতার নিকট কন্যা সন্তান জন্মের খবর পৌঁছলে তারা এই কন্যার পিতা হওয়াকে জঘন্য অপমান মনে করে অপমানের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করত! আর সেই লক্ষ্যে তারা কন্যাসন্তানকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলত। এহেন অমানবিক ও জঘন্য অপরাধ আরব সমাজকে বিশ্ব দরবারে আজও নিন্দিত ও ধিক্কার দিয়ে আসছে। মহানবী (সা.) জাহেলি যুগের সেই কলুষিত অধ্যয়ের অবসান ঘটিয়ে আরব জাতিকে সুসভ্য জাতিতে পরিণত করেছেন।

একদিন এক ব্যক্তি হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর কাছে তার জাহেলি যুগের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, আমার একটি কন্যা ছিল। সে আমাকে খুব ভালোবাসত। তাকে নাম ধরে ডাকলে সে দৌড়ে কাছে আসত। একদিন আমি তাকে ডাকলাম। তাকে সাথে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। পথে একটি কুয়া পেলাম। তার হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে তাকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দিলাম। তার যে শেষ কথাটি আমার কানে ভেসে এসেছিল তা হলো, ‘হায় আব্বা, হায় আব্বা!’ একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) কেঁদে ফেললেন। তার অশ্রু ঝরতে লাগল। উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন বললেন, ওহে! তুমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শোকার্ত করে দিয়েছ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা একে বাধা দিও না। যে বিষয়ে তার কঠিন অনুভূতি জেগেছে সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করতে দাও। তারপর তিনি বললেন, তোমার ঘটনাটি আবার বর্ণনা করো। সে ব্যক্তি আবার তা শুনালেন। ঘটনাটি আবার শুনে তিনি এত বেশি কাঁদতে থাকলেন যে, চোখের পানিতে তার দাড়ি মোবারক ভিজে গেল। এরপর তিনি বললেন, জাহেলি যুগে যা কিছু করা হয়েছে আল্লাহ তা মাফ করে দিয়েছেন। এখন নতুন করে জীবন শুরু করো।’ (সুনানে দারামি)।

এমন অসংখ্য নির্মম হত্যাযজ্ঞ আরব সমাজে ঘটেছিল। ইসলাম-পূর্ব যুগে কন্যাসন্তানদের প্রতি পুতুল পূজারি কাফির-মুশরিকদের আচরণ ছিল অত্যন্ত কুৎসিত ও জঘন্য। আমাদের সভ্য সমাজে এহেন অপরাধ সংঘটিত না হলেও (দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা অনেক সময় ঘটে, যা অপরাধজনিত ঘটনা) সহমরণের নামে নারী জাতিকে কলঙ্কিত করার ঘটনা বিগত শতাব্দীতে ছিল। কন্যা ও নারীদের সমাজে মূল্যহীন হিসেবে বিবেচিত করার ঘটনা কতটা বিবেকহীন ও জঘন্য তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

ইসলাম এই নিষ্ঠুর ও জঘন্য প্রথা নির্মূল করে দিয়ে মানুষকে শিক্ষা দিয়েছে— কন্যাদের লালন-পালন করা, শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়া, নেক আমল ও স্বামী-সংসারের কাজে পারদর্শী করে গড়ে তোলা পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য। কন্যাকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার মাধ্যমে তারা দায়িত্ব পালন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে থাকে। সন্তানদের প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে মানুষ করে গড়তে না পারলে তার জন্য তাদেরকে অপরাধী হিসেবে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হবে।

পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হয়েছে, ‘জীবন্ত প্রোথিত কন্যাসন্তানকে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। (সুরা তাকবির/৭-৮)। হাদিসে আছে, ‘এই কন্যাদের জন্মের মাধ্যমে যে ব্যক্তিকে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়, তারপর সে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করে তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার কারণে পরিণত হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুটি কন্যাকে বিবাহ-শাদি দেওয়া পর্যন্ত লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করবে, আমি এবং সেই ব্যক্তি কেয়ামতের দিন এভাবে একত্রে থাকব (এই বলে তিনি নিজের আঙুলগুলো মিলিয়ে ধরলেন)।’ (মুসলিম, মিশকাত)। ‘যার কন্যা সন্তান আছে, সে তাকে জীবিত কবর দেয়নি, তাকে দীনহীন ও লাঞ্ছিত করেও রাখেনি, আল্লাহ তাকে জান্নাতে স্থান দেবেন।’ (আবু দাউদ)। ‘যার তিনটি কন্যা আছে, সেজন্য সে যদি সবর করে এবং নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে ভালো কাপড় পরায়, তাহলে তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ে পরিণত হবে।’ (আদাবুল মুফরাদ ও ইবনে মাজাহ)

নেক নারীর মর্যাদা কেবল মানুষের কাছেই নয়, আল্লাহর দরবারেও অধিক প্রশংসিত। ইসলাম নারী জাতিকে মর্যাদাদান করেছে কিন্তু আজকে নারী সমাজ ইসলামী নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে আবারও মূর্খযুগের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এজন্য পিতা-মাতার দায়িত্ব অনেক বেশি। সন্তানকে নৈতিক চরিত্রে চরিত্রবান করে গড়ে তুলতে হবে। ইসলাম কন্যাসন্তানকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে, সুতরাং পিতা-মাতার উচিত তাদেরকে ধর্মনিষ্ঠা ও সৎ কর্মপরায়ণ হিসেবে মানুষ করা।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১