আপডেট : ০২ December ২০১৯
ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে বছরের পর বছর ঝুলছে মামলার নিষ্পত্তি। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা কম থাকাসহ বিচারিক অধিক্ষেত্র সীমিত থাকায় মামলাগুলোর শুনানি ঠিকমতো হচ্ছে না। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাড়ছে ট্রাইব্যুনালের মামলার সংখ্যা। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালগুলোতে এখন একজন যুগ্ম জেলা জজ বিচারকাজ পরিচালনা করেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হওয়ায় নির্দিষ্ট বিচারক ছাড়া অন্য কেউ মামলা পরিচালনা করতে পারেন না। তাই বিপুলসংখ্যক মামলা একটি ট্রাইব্যুনালের বিচারাধীন থাকায় একেকটি মামলা শুনানির তারিখ ধার্য করতে হচ্ছে ছয় মাস থেকে এক বছর পর পর। এতে মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে। বাড়ছে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ। সূত্র জানায়, সংশোধনের অপেক্ষায় থাকা আইনটি চূড়ান্ত হলে একজন সহকারী জজের আর্থিক অধিক্ষেত্র হবে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ তিনি দুই লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের জমির বিরোধসংক্রান্ত মামলাগুলো শুনতে পারবেন। ঠিক একইভাবে সিনিয়র সহকারী জজ শুনতে পারবেন চার লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের জমির মামলাগুলো। আর যুগ্ম জেলা জজের আর্থিক অধিক্ষেত্রের কোনো সীমা থাকবে না। চার লাখ টাকার বেশি মূল্যের সব জমির বিরোধ তার আদালতেই নিষ্পত্তি হবে। এতে একটি নির্দিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পরিবর্তে অনেকগুলো এখতিয়ারসম্পন্ন আদালত পাবেন বিচারপ্রার্থীরা। জানা গেছে, ২০০৪ সালে স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট, ১৯৫১ সংশোধন করে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল ও ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান সংযোজন করা হয়। আইন অনুযায়ী ভূমি জরিপ রেকর্ডে ভুলত্রুটি হলে জমির মালিক প্রতিকার পেতে এই ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন। ভূমি জরিপের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এক বছর পর্যন্ত সময়ে এই মামলা করা যায়। উপযুক্ত কারণ দর্শানো সাপেক্ষে অতিরিক্ত আরো এক বছর সময় নিতে পারেন জমির মালিকরা। ভূমি জরিপের ভুলত্রুটির ব্যাপারে প্রতিকার পেতে ২০০৪ সালে আইন সংশোধন করে ১২টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ায়। এখন ট্রাইব্যুনাল ৪৪টি। ৩০ জুন পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী এসব ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩ লাখ। মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ৫৬ হাজার ১৪৫টি। যা আছে খসড়া সংশোধনীতে : ইতোমধ্যে স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট, ১৯৫১ সংশোধনের একটি খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ আইনে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল-সংক্রান্ত চ্যাপ্টার বাতিল করা হচ্ছে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, এই চ্যাপ্টার বিলুপ্ত হওয়া সত্ত্বেও, এই চ্যাপ্টারের অধীনে (ক) ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত মামলা এই আইনের অধীন দেওয়ানি আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তি হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন কোনো মামলা দেওয়ানি আাাদালতে এমনভাবে স্থানান্তরিত এবং বিচার্য হবে, যেন তা এই আইন অনুযায়ী দাখিল করা হয়েছে। খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, এই আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত মামলার রায়, ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে এই আইন কার্যকর হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আপিল করা যাবে। আইন সংশোধনের খসড়াটি জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে পাস হতে পারে বলে জানা গেছে। ২০১৭ সালে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা ছিল আড়াই লাখ। সর্বশেষ হিসাব মতে, মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন লাখ। দুই বছরের ব্যবধান প্রায় ৫০ হাজার মামলা বেড়েছে। জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশের খবর কে বলেন, আমরা আশা করছি আগামী অধিবেশনেই আইনের সংশোধনী পাস হবে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে। তিনি বলেন, বর্তমানে একজন যুগ্ম জেলা জজ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ পরিচালনা করেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হওয়াতে নির্দিষ্ট বিচারক ছাড়া অন্যরা কেউ মামলা পরিচালনা করতে পারছেন না। এতে দুর্ভোগ হচ্ছে। মামলা চলছে বছরের পর বছর। আমরা আইন সংশোধন করে বিচারিক অধিক্ষেত্র বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে একজন বিচারকের জায়গায় অনেক বিচারক মামলা পরিচালনা করতে পারবেন। মামলা নিষ্পত্তি দ্রুত হবে। বিচারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন বিচারকের পক্ষে মাসে ১৫টি মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব। বছরজুড়ে ১৬৫টি মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে। এভাবে বিচার চললে ঢাকার ট্রাইব্যুনালের মামলা নিষ্পত্তি হতে ৩৩ বছর প্রয়োজন। দেশে বিএসআর জরিপ শুরু হয় ১৯৮৪ সালে। এই জরিপ এখনো চলছে। যেসব এলাকায় শেষ হয়েছে, সেখানে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের ত্রুটিবিচ্যুতি। মাঠ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা এবং অসতর্কতায় ভুলে ভরা ভূমি জরিপের খেসারত গুনতে হচ্ছে জমির মালিকদের। পরচা আর মানচিত্রে ভুল আর ভুল। কারো জমি পরচায় আছে তো মানচিত্রে নেই। আবার মানচিত্রে থাকলে পরচায় নেই। জরিপে জমির মালিকের নামের ভুল, নামের বানানে ভুল, জমির পরিমাণে ভুল এবং গরমিলসহ অসংখ্য ক্রটি রয়ে যাচ্ছে। যুগের পর যুগ ভোগদখল করে এলেও জরিপে প্রকৃত মালিকের পরিবর্তে নাম দেখানো হয়েছে অন্যের। এসব কারণে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। সব ধরনের খতিয়ানে ব্যক্তির নাম থাকার পরও কোনো জমি যদি সরকারের নামে রেকর্ডভুক্ত হয় এবং ট্রাইব্যুনাল সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেন, তাহলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে নামজারি করে দিতে হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের কোনো রায়ের পর নামজারি করে দিতে দেখা যায়নি। ১৯৮৪ সালে সরকার একটি পরিপত্র জারি করে, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো রায় গেলে তা সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ করে তারপর রায় অনুযায়ী কাজ করা হবে। পুরনো এই আদেশ গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাতিল করে নতুন পরিপত্র জারি করা হয়। নতুন পরিপত্রে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের রায় বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালের রায় পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় কোনো ব্যক্তির পক্ষে রায়টি সঠিক, তাহলে আর উচ্চ আদালতে যাওয়ার দরকার নেই। নতুন এই পরিপত্রের কারণে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১