আপডেট : ২৪ November ২০১৯
উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অপরদিকে তারল্য সংকট পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সংকট পুরোপুরি এখনো কাটেনি। কিন্তু পরিস্থিতি যাই হোক, ফায়দা লুটছেন ব্যাংকের পরিচালকরা। যোগসাজশে এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। ঋণ পরিশোধ না করে পুনঃতফশিল করে নিচ্ছেন বারবার। কেউ কেউ সুদের অর্থ বিশেষভাবে ছাড় নিচ্ছেন। অন্যদিকে ব্যাংক থেকে বেশি মুনাফা তুলে নিতে কৃত্রিমভাবে স্বাস্থ্য ভালো দেখাচ্ছেন। তফসিলি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে সমালোচনা পুরনো। নিয়ম ভেঙে তারা ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রমেও সম্পৃক্ত হচ্ছেন। ব্যাংকের ঋণ অনুমোদনে সম্পৃক্ত থাকলেও ঋণ জালিয়াতির জন্য তাদের আইনের আওতায় আনা হয় না। ফেঁসে যান কেবল ব্যাংকের নির্বাহীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক খাতের সুশাসনে ঘাটতির বড় কারণ পরিচালকদের দুর্নীতি ও অনিয়ম। সরকারি-বেসরকারি কোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। ফলে অনেক সময় বাধ্য হয়ে অনিয়ম পরিপালন করতে হয়। অনেকে আবার অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে ফায়দা ঘরে তুলছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের পর্ষদ খেলার জায়গা নয়। পর্ষদের কারণেই নন পারফরমিং লোন না বাড়ে। সর্বশেষ হিসাবমতে, খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অবশ্য অবলোপন হিসাবে আনলে এর পরিমাণ আরো বেশি হবে। জানা গেছে, পর্ষদে জবাবদিহি বাড়াতে নতুন পরিচালক নিয়োগে তিনি কিছুটা সতর্ক অবস্থানে। তবে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও এখন পর্ষদ নিয়োগে উত্তরাধিকার কোটা চলছে। দক্ষতা ও জ্ঞানে ঘাটতি থাকলেও পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে পর্ষদে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর পর্ষদে এখনো বর্তমান ও সাবেক আমলাদের প্রাধান্য। এর পরই আছে রাজনৈতিক ব্যক্তি, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী ও শিক্ষক। ব্যাংকগুলোর অনিয়মে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানসহ অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও সুবিধাবাদী পরিচালকরা নানা অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৭০০ ব্যাংক পরিচালক রয়েছেন। আর সরকারি ব্যাংকে পরিচালক সংখ্যা শতাধিক। সরকার এই প্রথম সরকারি ব্যাংকে নারী চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকগুলোতে পরিচালক নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশদ নীতিমালা রয়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ নীতিমালাটি সংশোধন করে পুনরায় জারি করে। রাজনৈতিক চাপে এ সার্কুলার শিথিল করতে করতে অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে নেমেছে, এখন যে কেউ পরিচালক হতে পারেন। আগে ব্যাংকের পরিচালক হতে হলে কমপক্ষে ২০ বছরের ব্যাংকিং বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা থাকতে হতো। এছাড়া কেউ পরিচালক হতে পারতেন না। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে পরিচালকদের দায়দায়িত্ব অনেক। ব্যাংকের নীতি-নির্দেশনা প্রণয়ন এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পেশাগতভাবে দক্ষ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ব্যাংক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব অপরাপর কোম্পানির তুলনায় অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড প্রধানত আমানতকারীদের অর্থে পরিচালিত হয় এবং এ ক্ষেত্রে আমানতকারীদের আস্থা অর্জন করা ও বজায় রাখা অপরিহার্য। তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদে বিভিন্ন পেশাজীবীকে সম্পৃক্ত করা জরুরি। কিন্তু সরকারগুলো নিজেদের আদর্শের লোকদের নিয়োগ দিতে অনেক সময় বাছবিচার ছাড়াই পরিচালক নিয়োগ দিয়ে থাকে। ফলে ব্যাংকের সুশাসনে ঘাটতি তৈরি হয়। বাড়ে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। সূত্র বলছে, বিএনপি সরকারের সময়ে ব্যাংকের এই বিধিতে বিস্ময়কর পরিবর্তন আনা হয়। ওই সময়ে ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তৎকালীন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস। কিন্তু বিধিমালার আওতায় তিনি কোনোক্রমেই পরিচালক হতে পারছিলেন না। পরে তাকে পরিচালক করতে বিধি সংশোধন করে ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা যোগ করা হয়। যেহেতু তিনি রাজনীতি করতেন সে কারণে তিনি স্বাভাবিকভাবে সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এভাবে বিধি পরিবর্তন করে তাকে ঢাকা ব্যাংকের পরিচালক করা হয়। এরপর থেকে রাজনীতিবিদরাও নির্বিঘ্নে ব্যাংকের পরিচালক হতে পারছেন। পরে ওই বিধি আরো শিথিল করে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড যোগ করা হয়। এখন ব্যবসায়ীরাও পরিচালক হতে পারছেন। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং, অর্থনীতি, সামাজিক ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা ২০ বছরের স্থলে করা হয় ১৫ বছর। এসব বিধি সংশোধেনের ফলে বিএনপি আমলে অনেকে পরিচালক হয়েছিলেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই ধারাবাহিকতায় ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী আইনজীবীদের বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বের করে নিয়ে যান। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকবার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকগুলোতে অভিজ্ঞ ও দক্ষ পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ দিতে হবে। তাহলে ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে চলতে পারবে। জানা গেছে, ব্যাংকের পরিচালকরা যোগসাজশে জড়িত হয়ে পড়ছেন। এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালককে ঋণ দিচ্ছেন নিজের ব্যাংক থেকে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক অংক ঋণ বাস্তবায়নেও কৌশল করা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে বিতরণ করা ঋণ এক অঙ্কে দেওয়া হলেও সাধারণ গ্রাহকরা তা পাচ্ছেন না। কিন্তু কাগজে-কলমে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের রেকর্ড রাখা হচ্ছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১