বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৩ November ২০১৯

যুবলীগের সম্মেলন আজ


শুদ্ধি অভিযানের মতো বড় ধাক্কার মধ্যেই আজ শনিবার আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সপ্তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন (কংগ্রেস) হচ্ছে। ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠার প্রায় পাঁচ দশক পর এবারই প্রথমবারের মতো ভিন্ন পরিবেশের মধ্য দিয়ে সংগঠনটির সম্মেলনের আয়োজন হচ্ছে। মূল দল ক্ষমতায় থাকলেও সংগঠনটির কেন্দ্রীয়সহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অনেক নেতার জন্য ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালে অনুষ্ঠিত যুবলীগের কেন্দ্রীয় কংগ্রেসে এবারের মতো বিতর্ক, অভিযোগ ও পরিবেশ অতীতে আর দেখা যায়নি।

যুবলীগের ২০১২ সালে ষষ্ঠ, ২০০৩ সালে পঞ্চম, ১৯৯৬ সালে চতুর্থ, ১৯৮৬ সালে তৃতীয়, ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয় এবং ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনের আগেও সংগঠনটির একশ্রেণির নেতাকর্মীর অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে এবারের মতো পরিস্থিতির জন্ম হয়নি। দলের সভাপতি ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দুর্নীতি ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে নতুন পরিবেশের মুখোমুখি করে সংগঠনটিকে। যে কারো দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান ‘শূন্য সহনশীল’ (জিরো টলারেন্স) হওয়ায় যুবলীগের এবারের সম্মেলন অন্য চেহারা পেয়েছে বলে মনে করেন সংগঠনটির নীতিনির্ধারকরা।

তাদের মতে, যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে চিরচেনা স্লোগান, মিছিল ও পদপ্রত্যাশীদের মহড়ার দৃশ্য ছিল না এবার। পদপ্রত্যাশার কথাও অনেক নেতা অন্যবারের মতো মহড়ার আয়োজন করে ঘোষণা করেননি। শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকে কারাগারে ও গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। সরকারি দলের যেকোনো সহযোগী সংগঠনের চেয়ে যুবলীগের নেতাকর্মীই এখনো পর্যন্ত অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশি। নানা অভিযোগের দায়ে সংগঠনের দায়িত্ব থেকে ঘোষিত ও অঘোষিতভাবে অব্যাহতি পাওয়ায় সম্মেলন থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে কয়েক নেতাকে। চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই এবার কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এমনকি তিনি কেন্দ্রীয় সম্মেলনে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণও পাননি।

সূত্র জানায়, শুদ্ধি অভিযান চলাকালীন কেমন হতে পারে যুবলীগের নতুন কমিটি, কারা আসছেন নেতৃত্বে, বিতর্কিত নেতৃত্বের গন্তব্য কোথায়-আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাদের কাছেও একই প্রশ্ন ও নানা কৌতূহল। সংগঠনটির নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেক নেতার অন্যবারের মতো এবার স্পষ্ট কিছু জানা নেই। সম্মেলনের বিষয়গুলো আওয়ামী লীগ সভাপতি দেখভাল করছেন। গোটা যুবলীগকেই ঢেলে সাজাতে চান প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত দলের অন্য সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন ও তুলনামূলক বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব পাওয়ার মতো যুবলীগও আজকের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে স্বচ্ছভাবমূর্তির নেতৃত্ব পাবে বলে প্রত্যাশা সংগঠনটির সব পর্যায়ের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীদের।

সূত্রমতে, সংগঠনটিকে ঘিরে আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের কয়েক নেতার দীর্ঘদিনের যে বলয় গড়ে উঠেছে, দীর্ঘদিনের সেই বলয় ভাঙতে চান প্রধানমন্ত্রী। আগে আওয়ামী লীগের এক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অভিভাবক হিসেবে সরাসরি সংগঠনটির দেখভাল করতেন। তার হাতে যুবলীগের এমন পরিণতির পর এবার প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন নিজেই যুবলীগের কমিটির বিষয়টি দেখবেন। ইতোমধ্যে যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের শীর্ষ নেতা নির্বাচনের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি দলের শীর্ষ নেতা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। তাদের মধ্য থেকেই নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সাবেক নেতারাও এবার পেতে পারেন যুবলীগের দুটি শীর্ষ পদের দায়িত্ব। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের তিনটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শীর্ষ পদগুলোর দায়িত্ব পেয়েছেন সংগঠনগুলোর সদ্য সাবেক কমিটিরই নেতারা। যুবলীগের বেলায়ও এমনটা হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার ধারণা। এমনটা হলে সংগঠনটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ অন্য কয়েক নেতা নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন। তবে বয়স ৫৫-এর মধ্যে হওয়ার শর্ত থাকায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কোনো কোনো নেতারও নতুন কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আবার বর্তমান কমিটি ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে সমন্বয় করেও হতে পারে নতুন কমিটি। সংগঠনটিতে অনুপ্রবেশমুক্ত নেতৃত্ব তৈরিতেও বদ্ধপরিকর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।

যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে যুবলীগকে নিয়ে আসার। তার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম বলেন, ‘যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিল করার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

সূত্র বলছে, এবারের সম্মেলনে চেয়ারম্যান পদে আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, বেলাল হোসেন ও আতাউর রহমান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেতাকর্মীরা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের রক্তের উত্তরাধিকার কাউকে যুবলীগের নেতৃত্বে চাইতেই পারে, সেটি যুবলীগের অধিকার আছে।’

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যুবলীগের বর্তমান কমিটির দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল ও মহিউদ্দীন আহমেদ মহির নামও আলোচনায় রয়েছে। সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে বাহাদুর বেপারী, অজয় কর খোকন ও ইসহাক আলী খান পান্নার নামও আলোচিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মনজুর আলম শাহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য চয়ন ইসলামের নামও আলোচনায় আছে।

চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই ঘোষণা করা হয় যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের চারটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ। এগুলোর মধ্যে তিনটির সম্মেলন ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচ দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শুক্রবার সকালে কলকাতা সফরে গেলে এদিনই সাড়ে ১১টার দিকে তার ঢাকায় ফেরার কথা। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন চয়ন ইসলাম। পরে বিকালে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করা হবে।

অন্য সময় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সম্মেলন শেষে কেন্দ্রের সম্মেলন হতো; কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মহানগর শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠানের পক্ষে নয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সম্মেলন ছাড়া কমিটি ঘোষণা হবে না। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটির ব্যবস্থা করবে যুবলীগের নতুন কমিটি।’

 

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১