আপডেট : ১৬ November ২০১৯
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ জনপদের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন পুরোপুরি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে ছয় দিন ধরে বিদ্যুৎহীন আছেন বরিশাল, পিরোজপুর ও বাগেরহাটের আড়াই লাখ গ্রাহক। দুর্ভোগে থাকা মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে গ্রাহক সংখ্যার চার থেকে পাঁচগুণ বেশি। পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড বলছে, এসব জেলায় সঞ্চালন লাইন মেরামতের কাজে নিয়োজিত আছে তাদের কয়েক হাজার কর্মী। তারপরও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে আরো কয়েক দিন লাগবে। প্রাথমিক হিসাবে পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড তখন জানায়, উপকূলীয় জেলাগুলোর ৯৫ হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী ও বরিশালের ২৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এসব এলাকার হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো জরুরি সেবা কেন্দ্রগুলোতে দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন পল্লীবিদ্যুতের কর্মীরা। কিন্তু অনেক সাধারণ গ্রাহকের কাছে এখনো তারা পৌঁছাতে পারেননি। কেউ কেউ এখন সৌরবিদ্যুতের সাহায্য নিয়ে আপৎকালীন সময় পার করছেন। যাদের সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই তাদের সম্বল কেরোসিনের কুপি আর মোমবাতি। ঘূর্ণিঝড়ের পর বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের তিন হাজারের বেশি টাওয়ার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের পর অনেক টাওয়ার সচল হলেও কিছু এলাকা এখনো মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে রয়ে গেছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ফিরলেও অনেকের হাতের মোবাইল ফোনটি বন্ধ হয়ে আছে চার্জ দিতে না পারার কারণে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে ব্রয়লার মুরগির খাবারসহ গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। বাগেরহাটে দুই লাখ ৭৩ হাজার, বরিশালে সাড়ে চার লাখ এবং পিরোজপুরে তিন লাখ ৭২ হাজার গ্রাহক রয়েছে পল্লীবিদ্যুতের। পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বরিশাল, পিরোজপুর ও বাগেরহাটের আড়াই লাখ গ্রাহক গত বৃহস্পতিবার রাতেও অন্ধকারে ছিলেন। মেরামতের অপেক্ষায় আছে আরো ১৫ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন। পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, বুলবুলের আঘাতে উপকূলীয় ৯ জেলার অন্তত ২৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, এসব জেলায় ৭০ হাজার কিলোমিটার লাইনে বিদ্যুৎ বিতরণ বন্ধ ছিল। বিদ্যুতের খুঁটি, ট্রান্সফরমার ও ইনসুলেটরসহ নানা যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্র্রস্ত হয়ে আনুমানিক ৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের কালিকাটি গ্রামের ফারজানা খানম জানান, ঝড়ের পর থেকেই তার এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুতের অভাবে তার পোল্ট্রি খামারের শোচনীয় অবস্থা। পল্লীবিদ্যুৎ থেকে বলেছে, বিদ্যুতের লাইন যেরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা সর্বোচ্চ গতি নিয়ে মেরামত করলেও আরো ৪-৫ দিন সময় লেগে যেতে পারে। মুলাদি উপজেলার বাসিন্দা গোলাম কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আগের রাতেই বিদ্যুৎ চলে গেছে। এখন আসেনি। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ আসবে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে পারছে না। মোমবাতি ও কুপি জ্বালিয়ে তারা রাত পার করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বরিশাল এলাকায় এমন পরিস্থিতি আর হয়নি বলে জানান কবির। বরিশাল পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জিএম একরামুল হক জানান, ঝড়ে তার জেলার প্রায় ৪০০ খুঁটি ভেঙে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় ৩৩ কেভির লাইন ছিঁড়ে গেছে। জরুরিভিত্তিতে কিছু সংযোগ দেওয়া হয়েছে, আরো কিছু সংযোগ দেওয়ার বাকি। পল্লীবিদ্যুতের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী অঞ্জন কান্তি দাশ বলেন, পটুয়াখালী ও বরগুনায় সঞ্চালন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা গেলেও বরিশাল, পিরোজপুর ও বাগেরহাটের পরিস্থিতি এখনো নাজুক। অঞ্জন বলেন, ঝড়ে গাছ পড়ে হাজার হাজার বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। তার ছিঁড়ে ছিন্ন ভিন্ন অবস্থা। গাছ ভেঙে পড়ার কারণে অনেক এলাকায় সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন। পাঁচ বছর ধরে আমরা যে সঞ্চালন লাইন করেছিলাম তার বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। অঞ্জন কান্তি দাশ বরিশালের আগৈলঝাড়া থেকে বলেন, রাস্তায় হেলে পড়া গাছ কাটতে কাটতেই সময় পার হয়ে যাচ্ছে। কখন ক্ষতিগ্রস্ত কোন এলাকায় যাব, আর কখন মেরামত শুরু করব সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈনউদ্দিন বলেন, আমাদের ২৩টি সমিতি ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে। সবগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। সেটা ঠিক করতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১