বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৪ October ২০১৯

আতঙ্কে খামারিরা

নওগাঁয় খসে পড়ছে পশুর মাংস


নওগাঁয় গবাদি পশুর ভাইরাসজনিত চর্মরোগ ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’-এর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েকটি গরু মারাও গেছে। প্রতিষেধক না থাকায় এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এতে চরম আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারি ও কৃষকরা। তবে শঙ্কিত না হয়ে খামারিদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। জানা গেছে, প্রথমে গরুর চামড়ার ওপরের অংশে টিউমার জাতীয় উপসর্গ ও বসন্তের মতো গুটিগুটি উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর দু-একদিনের মধ্যে গরুর শরীরজুড়েই গুটিগুটি হয়ে ঘায়ে পরিণত হচ্ছে। এ সময় গরুর শরীরে ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার জ্বর দেখা দেয় এবং গরু খাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে এবং ক্ষতস্থান পচে গিয়ে সেখান থেকে মাংস খসে পড়ছে। সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা কিংবা রোগের লক্ষণ জানা না থাকায় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার রানীনগর উপজেলার গুয়াতা গ্রামের নাজিদুল হকের একটি, বাবলু হোসেনের একটি, আবদুর রাজ্জাকের একটিসহ ১০-১২টি গরু মারা গেছে।

এ ছাড়া উপজেলার অলংকার দীঘি, উজালপুর, আতাইকুলা কালীগ্রাম, হরিপুর গ্রাম, মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুর, রাইগাঁ ও চেরাগপুর ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি গ্রামে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ রোগটি প্রথম ১৯২৯ সালে জাম্বিয়াতে দেখা দেয়। পরে আফ্রিকা মহাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। পর্যায়ক্রমে ২০১৯ সালে চীন ও ভারতে আক্রান্তের পরেই বাংলাদেশে এ রোগটি সম্প্রতি প্রথমবারের মতো দেখা দেয়। এ রোগ মশা, মাছি, আটালি, আক্রান্ত পশুর লালা, নাক-চোখের ডিসচার্জ, ষাঁড়ের বীর্য, আক্রান্ত গরু-মহিষের দুধ এবং ব্যবহূত ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মধ্যমে ছড়ায়। অনুকূল পরিবেশে এ ভাইরাস ছয় মাস পর্যন্ত জীবিত থাকে। ভাইরাসজনিত এ চর্মরোগে গবাদিপশু গরু-মহিষ আক্রান্ত হয়। ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ রোগে আক্রান্ত গবাদিপশু দুর্বল হয়ে ওজন কমে যায়, দুধ উৎপাদন হ্রাস পায় এবং চামড়ার গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়।

রানীনগর উপজেলার গুয়াতা গ্রামের গরু পালনকারী হামিদুল হক বলেন, গত কয়েকদিন আগে তার চারটি গরুর গায়ে গুটিবসন্তের মতো গুটি বের হয়। বিষয়টি রানীনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়কে জানানো হলেও কেউ আসেননি। পরে স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে গরুর চিকিৎসা করাতে প্রায় ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরপরও একটি গরু মারা গেছে।

রানীনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভেটেরিনারি সার্জন আমিনুল ইসলাম বলেন, এ রোগের ভ্যাকসিন না থাকায় রোগটি দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উপজেলায় ল্যাম্পি স্কিন রোগে এ পর্যন্ত ১০৫টি গরু আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ রোগে কোথাও গরু মারা যাওয়ার খবর জানা নেই। এলাকার মানুষকে সচেতন করতে ইতোমধ্যে প্রচারপত্র বিতরণ ও সভা-সেমিনারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মহাদেবপুর উপজেলার ইন্দাই গ্রামের গরু পালনকারী জিতেন বলেন, গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে ওঠা শুরু করে। এরপর গরু খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয়। স্থানীয় পশু চিকিৎস দিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। গোয়ালে কয়েল জ্বালানো থাকলেও কোনো কাজে আসেনি। মশার কারণেই হয়তো এমনটি হয়েছে।

মহাদেবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খুরশিদ আলম বলেন, এ উপজেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ২শ গরু আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগে কোথাও গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। লোকজনকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ এবং ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উত্তম কুমার সরকার বলেন, ‘ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ’ রোগটি মশা বাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। সারা দেশে ব্যাপক আকারে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলার প্রতিটি উপজেলাতেই ১০-১৫টি করে গরু আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তারা সচেতনতামূলক উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করছেন। অফিসে আক্রান্ত পশু নিয়ে আসা হলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এ রোগে আক্রান্ত পশু জবাই করে খাইলেও মানুষের ক্ষতি হবে না। কারণ এ রোগটা মানুষের হয় না। তবে অসুস্থ পশুকে যেন কেউ জবাই না করে এবং কেউ যেন মাংস না খায় সে বিষয়ে নিষেধ করা হচ্ছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১