বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০১ October ২০১৯

গোয়ালন্দে পদ্মার তাণ্ডব, ভাঙনের হুমকিতে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাট

গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে ফের পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে ছবি: বাংলাদেশের খবর


রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে আবারও পদ্মার তাণ্ডব শুরু হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। দফায় দফায় পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাল্লাদিয়ে গ্রাস করছে নদী পাড়ের ঘরবাড়ি ও ফসলী জমি। আতঙ্কে সরিয়ে নিচ্ছে শত শত ঘরবাড়ী।

গত ৫দিনে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ঢল্লাপাড়া, ১নং বেপারী পাড়া,জলিল মন্ডলের পাড়া এবং দেবোগ্রাম ইউনিয়নের কাওলজানি গ্রামের কয়েকশ বিঘা ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের শিকার হয়ে প্রায় ৩০০ পরিবারের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ঘরবাড়ী সরিয়ে নিয়েছে প্রায় ২০০ পরিবার। তাছাড়া ওই এলাকার প্রায় ৫০০ পরিবার ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। এ ছাড়া দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটসহ এর সংলগ্ন প্রায় ৩ শতাধিক বসতবাড়ি, একটি মসজিদসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন ঢল্লাপাড়া, ১নং বেপারী পাড়া, হাতেম মেম্বর পাড়া,এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক পরিবার তাদের দীর্ঘদিনের ঠিকানা থেকে সহায় সম্বল গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই একাধিকবার ভাঙনের শিকার হওয়া পরিবার রয়েছে। তাদের শেষ জমিটুকু হারিয়ে পরবর্তী ঠিকানাও মেলা কঠিন হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে আমজাদ শেখ,আবুল ডাক্তার,মজনু সরদার,হাসেম ফকীর, আবুল কাসেম ফকীর,মানিক শেখ, কালাম সরদার, লুৎফর সরদার,আব্দুর রশিদ সরদারের বাড়ীসহ প্রায় ৩০০ বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে নদীর তীরবর্তী প্রায় ২ শতাধিক বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে । ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আরো প্রায় ৪৫০টি পরিবার। এ সময় অনেকেই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ভয়ে তাদের বসত বাড়ীর ঘর ভেগে এনে কোথাও রাখার জায়গা না পেয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে স্তুপ করে রাখতে দেখা যায়।

দৌলতদিয়া ১নং বেপারী পাড়ার আব্দুস ছাত্তার হেলাল বেপারী জানান, গত কয়েকদিনে বেপারী পাড়া ও ঢল্লা পাড়ার ৭০টি, হাতেম মন্ডলের পাড়ার ৫০টি এবং দেবগ্রামের কাওয়ালজানি,মুন্সিপাড়া ১৬০টি পরিবারসহ প্রায় ৩০০ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে।

এ সময় ভাঙনের শিকার হওয়া দৌলতদিয়া এলাকার ঢল্লাপাড়া গ্রামের মজনু সরদারের ছেলে মাওলানা রেজাউল করিম জানান, ওই এলাকায় তাদের প্রায় ১০০ বিঘা জমি ছিল। গত কয়েক বছরে ৫ বার ভাঙনের পর প্রায় ২০ বিঘা জমি অবশিষ্ট ছিল। চলতি দফায় ৫ দিনের ভাঙনে তাও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন তাদের ঘরবাড়ী ভেঙ্গে অন্যের জমিতে ফেলে রাখা হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা প্রায় ৫০ হাজার টাকার খরচ করে টমেটো, বেগুন, কপিসহ নানা জাতীয় সবজির বীজ রোপন করেছিল সবই নদীগর্ভে চলে গেছে।

দেবোগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়াজানি এলাকার বিপুল পরিমাণ ফসলী জমি চোখের নিমিশেই বিলিন হতে দেখা যায়। ওই এলাকার কৃষকরা বলেন, ভাঙন শুরু হওয়ার গত কয়েক দিনে প্রায় ৫০০ বিঘা ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙনের শিকার হয়ে কয়েকশত বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে কমপক্ষে আরো ২ শতাধিক বসতবাড়ি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অনেকে জমিজমা না থাকায় অন্যের জমি অথবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতর আলী সরদার বলেন,‘কয়েক বছরের পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে ইউনিয়নটির অর্ধেকের বেশী নদীতে চলে গেছে। এই ইউনিয়নের প্রতি কারো কোন নজর নেই। মানুষের হাহাকার দেখে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রশাসনের কাছে বার বার গিয়েছি। আমাদের একটিই চাওয়া ছিলো ত্রাণ নয়, নদী শাসন চাই। কিন্তু সে বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ওদিকে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাটের উজানে দেবগ্রামের কাওলজানি এলাকার ভাঙন দেখে ঘাট এলাকার স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। লঞ্চঘাট এলাকার পাশে থাকা মরিয়ম বিবি ও আঃ খালেক শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, লঞ্চঘাটের সামান্য দুরে কাওলজানি এলাকায় যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে কখন যেন ঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। ভাঙন শুরু হলে মুহুর্তের মধ্যে ঘাট এলাকার সব বিলিন হয়ে যাবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, ভাঙন অব্যাহত থাকলে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চ ঘাট হুমকির মুখে পড়বে।

সোমবার বিকেলে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বলেন, এভাবে ভাঙতে থাকলে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চ ঘাট রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়বে। তাই অন্তত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ঠিক রাখতে জরুরী ভিত্তিতে ফেরি ও লঞ্চ ঘাট রক্ষা করতে জরুরীভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীসহ পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীকেও জানাবো।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১