বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৯ September ২০১৯

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগৃহীত ছবি


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, দুর্নীতিবাজ এবং অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এবং মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যদি কেউ অসৎ পথে অর্থ উপার্জন করে, তার এই অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা বা অসৎ উপায় ধরা পড়লে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সে যেই হোক না কেন, আমার দলের হলেও তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

শনিবার বিকালে নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট মারকুইজ হোটেলে ইউএসএ চ্যাপ্টার অব আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সমাজে অসৎ পথে অর্থ উপার্জনের হার বেড়ে গেলে যেসব ব্যক্তি বা তাদের সন্তানেরা সৎ পথে জীবন নির্বাহ করতে চায়, তাদের জন্য সেটা কঠিন হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ‘একজন সৎভাবে চলতে গেলে তাকে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে চলতে হয়, আর অসৎ উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এই ব্র্যান্ড, ওই ব্র্যান্ড, এটা সেটা হৈ চৈ, খুব দেখাতে পারে।’

‘ফলাফলটা এই দাঁড়ায় একজন অসৎ মানুষের দৌরাত্মে যারা সৎ জীবন-যাপন করতে চায় তাদের জীবনযাত্রাটাই কঠিন হয়ে পড়ে,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৎ মানুষের ছেলে-মেয়েদের মনে সহসাই একটা প্রশ্ন আসতে পারে যে, কেন তাদের পরিবার বিলাসবহুল জীবন-যাপন করতে পারে না। বাস্তবিকভাবেই এই চিন্তা লোকজনকে অসৎ পথে ঠেলে দেয়।’

উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে অনিয়মের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার উন্নয়নের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ আরো বেশি উন্নত হতে পারতো যদি প্রকল্পের প্রত্যেকটি টাকা যথাযথভাবে ব্যয় করা হতো।

‘এখন আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কোথায় ফাঁক-ফোকর রয়েছে, কারা এই কাজগুলো করছে এবং কিভাবে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আরেকটা জিনিস আমি দেখতে বলে দিয়েছি-সেটা হলো কার আয়-উপার্জন কত? কীভাবে জীবন-যাপন করে? সেগুলো আমাদের বের করতে হবে।’

তিনি বলেন, ’তাহলে আমরা সমাজ থেকে এই ব্যাধিটা, একটা অসম প্রতিযোগিতার হাত থেকে আমাদের সমাজকে রক্ষা করতে পারবো, আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারবো।’

শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধেও অভিযান অব্যাহত থাকবে। এটি পরিবার ও দেশকে ধ্বংস করে। মাদকের সঙ্গে জড়িত কারবারীদের আমরা খুঁজে বের করবোই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতীয় বাজেট সাত গুণ বাড়িয়েছি। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে এই বাজেটে অর্থের পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আমরা চলতি বছর ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি।

সব সময় সরকারের নিন্দাকারী কিছু মানুষের তীব্র সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যখন দেশের উন্নয়ন হয়, তখন এই মানুষগুলো অস্বস্তি বোধ করে। তারা তখন প্রতিহিংসায় সব সময় বিদেশীদের কাছে সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করে।

গত নির্বাচনে বিএনপি’র বিপর্যয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আন্তরিক ছিল না। বরং তারা মনোনয়ন বাণিজ্যে ব্যস্ত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ তার দলের ওপর আস্থা রেখেছে এ কারণে যে তারা জানে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন ও তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, দলের চেয়ারম্যান একজন অপরাধী সেই দলকে মানুষ কেন ভোট দেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার এক ছেলে অর্থ পাচারের দায়ে দন্ডিত এবং অপর ছেলে সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনো খেলতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে।

তিনি বলেন, জনগণের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে ক্ষমতায় এসেছে।

দেশের বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই উন্নয়নে তৃণমূলের মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপকৃত হচ্ছে।

বিদেশী ঋণগ্রহণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ব্যাপারে তার সরকার সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে যেন ঋণের কারণে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

প্রবাসীদের কল্যাণে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার তিনটি এনআরবি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছে।

প্রবাসীরা যেন দেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রবাসীরা যেন বৈধ প্রক্রিয়ায় দেশে টাকা পাঠাতে পারে। সে পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে ইতোমধ্যে ১০টি বিমান কেনা হয়েছে। ঢাকা-নিউইয়র্ক রুট পুনরায় চালুর আলোচনা চলছে এবং আমরা আমাদের বিমান বন্দরের নিরাপত্তারও উন্নয়ন করেছি।

বিভিন্ন স্থানে দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিস স্থাপনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ফ্লোরিডায় একটি কনস্যুলেট অফিস খোলা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও মাদক নির্মূল করে মানুষকে উন্নত ও সুন্দর জীবন উপহার দিতে চায়-যা ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অনুসরণে বাংলাদেশ হবে বিশ্বে সমৃদ্ধ, উন্নত দেশ এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা।

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন স্বাগত বক্তৃতা করেন। এ সময় মঞ্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

বক্তৃতার প্রারম্ভে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে একটি মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১