আপডেট : ০৯ September ২০১৯
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার, সম্মান ও আর্থিক সহায়তা দিলেও গত দুই বছরেও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচন দিতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাচন না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় অনিশ্চতয়তায় পড়েছে। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, কার্যত নানা জটিলতায় ঝুলে আছে সংগঠনটির নির্বাচন। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের জন্য এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ আশা করেছেন। জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম আরিফ-উর-রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচন দিতে সরকার আন্তরিক। কোনো আইনি জটিলতা নেই। আশা করি চলতি বছরই নির্বাচন আয়োজন করা যাবে। তবে কোনো দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না। সূত্র বলছে, বিদায়ী কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ৮ জুন। এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু নানা জটিলতায় নির্বাচন আয়োজন করা যায়নি। এর পেছনে বড় কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধার হালনাগাদ তালিকা করার উদ্যোগ হাতে নেয়। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এই উদ্যোগ হাতে নিলেও তা শেষ করা যায়নি। এখানে আইনি জটিলতা তৈরি হয়। অনেকে আদালতের দারস্থ হয়ে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া আটকে দেন। তবে শেষ পর্যন্ত সরকার আদালতের রায় নিয়ে কার্যক্রমটি নতুন করে শুরু করেছে। সূত্রে জানা গেছে, যাচাই-বাছাই করে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেটির ভিত্তিতে ভোটার তালিকা করে নির্বাচনের আয়োজন করতে চায় সরকার। মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচন আয়োজন করতে পদাধিকারবলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে। তিনি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচনের আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে সরকার ও মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করবেন না। জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম বলেন, আমাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ৮ জুন। আমি নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে পরিবর্তী নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিই। গত দুই বছরে নির্বাচনের আয়োজন হয়নি। জানা গেছে, সরকার ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংগঠনটি পরিচালনা করতে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়। বর্তমান মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সাবেক একান্ত সচিব (পিএস) মো. জহুরুল ইসলাম রোহেলকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে যুগ্ম সচিব হিসেবে মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন শাখার দায়িত্বে রয়েছেন। জহুরুল ইসলাম রোহেল বলেন, নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে যাদের অবদানে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেসব বীর সন্তানরা এই সংসদের সদস্য ও নেতা। বর্তমানে একটি কেন্দ্রীয় কমান্ড, ৭টি মহানগর কমান্ড, ৬৪টি জেলা ও ৪৭০টি উপজেলা কমান্ড রয়েছে। উপজেলা কমান্ডে ১১ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি কমান্ড কাউন্সিলকে প্রতিনিত্বি করেন। তাদের একজন উপজেলা কমান্ডার। জেলা কমান্ড কাউন্সিলে থাকেন ১৭ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি। এদের থেকে একজন থাকেন জেলা কমান্ডার। একইভাবে মহানগর কাউন্সিল। আর কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে থাকে ৪২ জন প্রতিনিধি। সারা দেশের উপজেলা, জেলা ও মহানগর কমান্ড কাউন্সিল থেকে নির্বাচিত প্রায় ছয় হাজার প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় কমান্ড নির্বাচিত করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ নেবেন। জানা গেছে, একই প্রস্তাব করে হেলাল মোর্শেদ প্রধানমন্ত্রীকে এর আগে চিঠি দিয়ে গেছেন। সংগঠনটি ২০০১ সালে প্রণীত গঠনতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী এর প্রধান উপদেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছেন। জানা গেছে, বিদায়ী কমিটি ২০১৬ সালের জুনে গঠনতন্ত্রের কিছু সংশোধনী আনেন। সংসদের এক হাজার ২০০ সদস্য যারা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসিবে রয়েছেন; তারা লিখিতভাবে সেসব সংশোধনী অনুমোদন করেছেন। সংশোধিত গঠনতন্ত্রটি ভেটিংয়ের জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বর্তমান সরকার কয়েক দফা মুক্তিযোদ্ধারের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এটি ১৫ হাজার টাকা করার চিন্তা রয়েছে সরকারের। এর বাইরেও পরিবহন, চিকিৎসা, বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়াসহ আরো বেশ কিছু সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে সরকার। বর্তমানে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। যাচাই-বাছাই শেষে এর সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১