বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৮ September ২০১৯

উপকূলীয় এলাকায় দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন হবে


বাংলাদেশে পারমাণবিক শক্তির উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এজন্য দেশের উপকূলীয় অঞ্চল বরিশাল, কক্সবাজার,  নোয়াখালী, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সম্ভাব্য সাতটি জায়গায় জরিপ ও অনুসন্ধানের কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে পাবনার রূপপুরে রাশিয়ার সহযোগিতায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ সফলভাবে এগিয়ে চলেছে। আরো বেশি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনের জন্য বিকল্প হিসেবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এজন্য এ প্রকল্পের জন্য পরিচালকও নিয়োগ করেছে সরকার।

জানা গেছে, নতুন আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলকায় অর্থাৎ বরিশালের চরমেঘা, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, বরগুনার পাথরঘাটা, তালতলী, নোয়াখালী জেলার উরিরচর এবং কক্সবাজার জেলার সোনাদিয়ায় সম্ভাব্য জায়গা নির্ধারণের কাজ চলছে। এ স্থানগুলো ছাড়াও পটুয়াখালীর চর মোনাজাত, সোনারচর, নোয়াখালীর হাতিয়ার মৌলভীর চর, পিরোজপুরের খোলপটুয়া, মাদারীপুরের চর জানাজাত এবং কক্সবাজারের মহেষখালী সম্ভাব্য স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হতে পারে।

জানা গেছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরুর পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে এ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে। প্রাথমিকভাবে দুটি ইউনিটের মাধ্যমে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হবে। 

জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের স্থান নির্ধারণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার হিজলা-গৌরনদী ইউনিয়নের মেঘনা নদীতীরবর্তী চরমেঘা মৌজা পরিদর্শন করে।

এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বরিশালের হিজলা উপজেলার চরমেঘা নামক স্থানে জরিপকাজ পরিচালনা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত স্থানে একসঙ্গে পর্যাপ্ত নিষ্কণ্টক ও অখণ্ড খাসজমি বিদ্যমান থাকায় এজন্য আলাদা জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না এবং এই স্থানে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উপকূলীয় এলাকায় দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের স্থানের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রসঙ্গে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বরগুনার তালতলিতে একটি নৌ-ঘাঁটি করার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের। তবে এখনো এ ব্যাপারে সরকারি কোনো আদেশ এখনো আসেনি।

দেশের উপকূলীয় এলাকায় আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই টিমের বিশেষজ্ঞ ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সেফটি, সিকিউরিটি এবং লাইসেন্সিং শাখার প্রধান প্রকৌশলী ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় ৭টি জায়গার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় বসবাসরত মানুষ ও জনপদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সর্বাধুনিক থার্ড জেনারেশন প্লাস প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। এতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কোনো তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হবে না এবং পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার সারা দেশে সব মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। এরই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে রাশিয়ার সহায়তায় দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সবশেষ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। তবে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ব্যয় এর চেয়েও বেশি হতে পারে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়নি।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১