বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৪ September ২০১৯

'ডোলবাজারি' আখ চাষে ঝুঁকছেন শ্রীপুরের কৃষকেরা


অনেক বছর ধরেই কৃষি পণ্য চাষাবাদ করে আসছেন সনাতন ধর্মালম্বী বংশী (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি) অনিল চন্দ্র বর্মণ। ফসল কখনো ভাল উৎপাদন, আবার কখনো বেশ মন্দ। কৃষির এমন উৎপাদন দোলাচলে অস্বস্তিতে কাটত তার সময়। এক সময় কৃষি থেকেই নিজেকে দূরে রাখতে মনস্থ করে ফেলেন অনিল চন্দ্র। পরে স্থানীয় অন্য কৃষক হযরত আলীর পরামর্শে শুরু করেন ডোলবাজারি জাতের আখ চাষ। সে পাঁচ বছর আগের শুরু চাষ করা অনিলের রোপন করা ডোলবাজারি আখ এখন সব কৃষকেরই পছন্দ।

গাজীপুরের শ্রীপুরে ডোলবাজারি আখ চাষ করে ভাগ্য বদল করেছে বেশ কিছু বংশী পরিবার। উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের ৯ নং ওর্য়াডের বদনী ভাঙা (বংশী পাড়া) গ্রামে এখন ১৮-২০ পরিবার এ ডোলবাজারি জাতের আখ চাষ করছে নিয়মিত। গ্রামের ফসলের ক্ষেতে ফিরিয়ে এনেছে কৃষির সমৃদ্ধি।

তবে কৃষকদের অভিযোগ গত পাঁচ বছর ধরে এ ডোলবাজারি জাতের আখ চাষ হলেও গ্রামে কৃষি অফিসের কোনো লোকজন আসেনি। কোনো কৃষি পরামর্শ ছাড়াই তারা এ জাতের আখ চাষ করছে।

তারা জানান, বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হলেও ওষুধ বিক্রেতার পরামর্শেই চলে চিকিৎসা। এখন প্রায় দশ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে ডোলবাজারি জাতের আখ। দীর্ঘদিন আখ চাষ বন্ধ থাকার পর লাভের মুখ দেখে আবারো ডোলবাজারি জাতের আখ চাষে ঝুঁকছে কৃষক।

স্থানীয়রা কৃষকরা জানান, দেশের অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল আখ। বিভিন্ন কারণে কৃষকরা সে আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল। অনেক বিড়ম্বনায় পড়ে কৃষকরা আখ চাষ বন্ধ করেছিল। এদিকে মাওনা ইউনিয়নের বদনী ভাঙা গ্রামে আখের একটি বিশেষ জাত ‘ডোলবাজারি’ আখ চাষ হচ্ছে। স্থানীয় বংশী পরিবারগুলো এই জাতের আখ চাষ শুরু করেছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। এর পর থেকে এই জাতের আখ চাষে স্থানীয় কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে দিন দিন এ আখ চাষে ঝুঁকছে। প্রতি বছরই ডোলবাজারি আখ চাষে কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। লাভজনক হওয়ায় এক যুগ আগে আখ চাষ থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখা কৃষকরাও আবার আখ চাষে ফিরছে ।

কৃষকরা জানান, এ গ্রামে ১৮ থেকে ২০ বিঘা জমিতে ডোলবাজারি জাতের আখ চাষ হচ্ছে। এ চাষে যুক্ত হয়েছে ২০ থেকে ২৫টি পরিবার। আগামী বছর এর আওতা আরো বাড়বে বলে তাদের ধারণা। তবে তাদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে তারা তাদের আখ চাষে স্থানীয় কৃষি অফিসের কোনো সহায়তা পাননি। কেউ কোনো খোঁজখবর নিতেও আসেননি। তাই রোগবালাইয়ের আক্রমণে স্থানীয় সার ও ওষুধ ব্যবসায়ীদের শরনাপন্ন হতে হয় তাদের। এ গ্রামের ডোলবাজারি জাতের আখ চাষের গোড়াপত্তন করেন বংশী অনিল চন্দ্র বর্মন। তাঁর আত্মীয়ের কাছ থেকে ডোলবাজারি জাতের আখের চারা এনে রোপন করেন অনিল চন্দ্র বর্মন। তার নিজের জমিতে। আশানুরুপ  ফলন পাওয়ায় পরের বছর আরো বড় পরিসরে আখ চাষ শুরু করেন সে। 

বদনীভাঙা গ্রামের শ্বশধর বর্মন বলেন, এ গ্রামে তিনি ছাড়াও রবেন্দ্র বর্মন, নিমাই বর্মন, অভিলাষ বর্মনসহ ১৫-২০ জন কৃষক ডোলবাজারি আখ চাষ করছেন।

তিনি বলেন, এ আখগুলো ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয়। গায়ের রং হয় কিছুটা সাদা। পরিণত বয়সে এর রঙ একটু হলুদে হয়। যে কোনো  জাতের আখের চেয়ে ডোলবাজারি অনেক মোটা হয়। এর রসও হয় খুব মিষ্টি। খেতেও স্বুস্বাদু । এগুলো রোপন করা এক একি ছোপা থেকে ৭ থেকে ৮ টি চারা গজায়। বছরের ফালগুন, চৈত্র, বৈশাখে ডোলবাজারি জাতের আখ লাগাতে হয়। সারিবদ্ধভাবে রোপন করা হয় চারা। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হয়। কিছুদিন পর আখ বড় হয়ে গেলে আখ গাছ হেলে পড়ে। এ সময় বাঁশের খোঁটা দিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

স্থানীয় কৃষক হযরত আলী জানান,  আখগুলো ৮ থেকে ৯ মাসের মধ্যে কাটার উপযোগী হয় ডোলবাজারি আখ। এ আখ চাষ এলাকায় নতুন। অনিলকে আমিই প্রথম বলে এ আখ চাষে উদ্ধুদ্ধ করি। পরে আমিও এ আখ চাষে জড়িয়ে পড়েছি। আখগুলো জমিতে প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকা উৎপাদন খরচ পড়ে। পরে ব্যাপারিরা ক্ষেত থেকে কিনে স্থানীয় ভাবে খুচরা ৮০- ১০০ টাকায় বিক্রি করে। এক সময় সাধারণ আখ চাষ করতেন এ এলাকার অনেক কৃষকই। এখন তারাই বেশি আসছেন এই জাতের আখ চাষে। চাষ পদ্ধতি একই হওয়ায় আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা ভালো করছেন এ আখ চাষে।  

স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্য মতে, শ্রীপুরে অমৃত, টেনাই ও ডোলবাজারি জাতের আখ চাষ হচ্ছে। পুরো উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে ডোলবাজারি জাতের আখ চাষ হয়। সব জাত মিলিয়ে শ্রীপুরে আখ চাষ হচ্ছে ১৭৫ হেক্টর জমিতে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা এএসএম মূয়ীদুল হাসান জানান, এ জাতের আখ চাষ লাভজনক। ডোলবাজারি আখ খেতেও বেশ সুস্বাদু । আমরা কৃষদের উৎসাহিত করছি ডোলবাজারি আখ চাষে।

কৃষকদের অভিযোগ সর্ম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করবো। আমি নিজেই যাবো কৃষকদের কাছে। একটা পরিকল্পনা করে তাদের এ জাতের আখ চাষে সবোর্চ্চ সুবিধা দেওয়া হবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১