আপডেট : ২৮ August ২০১৯
অমিত হাসান বাংলা সিনেমার দর্শকনন্দিত অভিনেতা। পুরো নাম খন্দকার সাইফুর রহমান। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার নায়ক চরিত্র অমিত রায়ের অমিত অংশটি নিয়ে তার নামকরণ করা হয় অমিত হাসান। এফডিসির নতুন মুখের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে তার আবির্ভাব। এরপর অভিনয় করেছেন ছয় শতাধিক সিনেমায়। তার সঙ্গে কথা বলেছেন রবিউল কমল অভিনয় জীবনের শুরুর গল্প... আমার ক্যারিয়ারের শুরু এফডিসি আয়োজিত নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে। ওই প্রোগ্রামে আমরা আবেদন করেছিলাম প্রায় ১৪ হাজার জন। তার মধ্যে মাত্র ১৪ জনকে নির্বাচন করেন আয়োজকরা। ওই ১৪ জনের মধ্যে আমিও ছিলাম। আর আমার প্রথম সিনেমা ছিল ছোট্টু আহমেদের চেতনা। দীর্ঘ অভিনয় জীবনের মজার কোনো স্মৃতি... অভিনয় জীবনে তো অনেক মজার স্মৃতি রয়েছে। সেগুলো বলে তো আর শেষ করা যাবে না। তার মধ্যে যে স্মৃতিটি আমাকে খুব নাড়ায় তা আমার প্রথম সিনেমার। তখন আমি অভিনয় সম্পর্কে ভালো জানতাম না, ক্যামেরা নিয়েও তেমন আইডিয়া ছিল না। প্রথম সিনেমায় আমার একটি ফাইটিংয়ের দৃৃশ্যে নির্দেশনা ছিল ভিলেন পালিয়ে যাচ্ছে, তখন ভিলেনের গাড়ির চালককে আমাকে মারতে হবে। আমি সেই দৃশ্যে গাড়ির চালককে সত্যি সত্যি মেরেছিলাম। এতে চালক অসুস্থ হয়ে যায় এবং দুদিন শুটিং বন্ধ ছিল-এ কথা মনে পড়লে আজও আমি খুব হাসি। আর একটা ঘটনা আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, তখন কক্সবাজারের ইনানীতে শুটিং করতে পুরো টিমকে একসঙ্গে যেতে হতো আবার আসতে হতো। কারণ তখন চারদিকে অনেক পানি ছিল এবং ওখানে যাওয়ার রাস্তাও ছিল না। ওখানে আমার আর মৌসুমির শুটিং ছিল। দৃশ্যটা ছিল একই হ্যান্ডক্যাফ দুজনের হাতে পরানো থাকবে। আমরা সেভাবে শুটিং শেষ করলাম। কিন্তু ঝামেলা লাগল হ্যান্ডক্যাফ খুলতে গিয়ে। কারণ ওটার দুইটা তালাই নষ্ট ছিল। চাবি ঘোরে কিন্তু খোলে না। সারাটা দিন আমরা ওভাবে ছিলাম। কেউ নড়তে পারছিলাম না। একসঙ্গেই বসে ছিলাম। পরে রাতে হোটেলে এসে লোক ডেকে ওটা কাটতে হয়েছিল। আপনার অনুপ্রেরণা কারা ছিল? আমি যখন টাঙ্গাইলে থাকতাম, তখন নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করতাম। সে কারণেই অভিনয়ের প্রতি একটা নেশা ছিল। এরপর নতুন মুখে সুযোগ পাওয়ার পরে পরিবারের সমর্থন পাইনি। তবে আমি কাজ করতে থাকি। সেটা নিজের চেষ্টাতেই। একসময় যখন ভালো কাজ করা শুরু করলাম, তখন পরিবারও বিষয়টাকে মেনে নিতে শুরু করল। তাই অনুপ্রেরণা কারও থেকে পাইনি, আমি নিজেই ছিলাম নিজের অনুপ্রেরণা। কাদের অভিনয় আপনার ভালো লাগে? জাফর ইকবালের অভিনয় অনেক ভালো লাগত। আমি যখন ফিল্মে ঢুকিনি তখন তার সিনেমা দেখে নিজেকে অভিনেতা ভাবতাম। জাফর ইকবালের সিনেমার গান দেখলে আমার মনে হতো সিনেমার পর্দায় আমি নিজেই নাচছি। এছাড়া রাজ্জাক ও ইলিয়াস কাঞ্চনের অভিনয়ও আমার খুব ভালো লাগত। অবসরে কী করেন? এখনকার অবসরগুলো পরিবারের সঙ্গে কাটাই। ফ্রি থাকলেই পরিবারকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার মা থাকেন টাঙ্গাইলে, অবসর পেলে মাঝে মাঝে মায়ের কাছেও ছুটে যাই। আমি আবার আড্ডা দিতেও পছন্দ করি। আমাদের একটি ফিল্মের ক্লাব আছে। অবসরে সেখানেও ছুটে যাই। ফিল্মের মানুষগুলোর সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাই। আপনার প্রিয় লেখক কারা? আমি হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ি। রবীন্দ্রনাথের বই নিয়েও ঘাটাঘাটি করা হয়। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার নায়কের নাম ছিল অমিত রায়। সেখান থেকেই আমার নামকরণ হয় অমিত হাসান। আমার রিয়েল নাম হলো খন্দকার সাইফুর রহমান। অমিতটা নেওয়া হয় রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা থেকে। আমার কলেজের এক বান্ধবী আমার ফিল্মি নাম অমিত হাসান ঠিক করে দেন। তবে হুমায়ূন আহমেদের বই বেশি পড়তাম। এছাড়া মাসুদ রানার দারুণ ভক্ত ছিলাম। তবে এখন আর বই পড়া হয়ে ওঠে না। আপনার কোনো শখ আছে কি? শখ ঠিক না, তবে আমার একটি স্বপ্ন রয়েছে। আমার দ্বারা যদি কখনো সম্ভব হয় আমি একটি হাসপাতাল করব। কারণ ছোটবেলায় খুব ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হব, মানুষের সেবা করব। কিন্তু হয়ে গেলাম অভিনেতা। তবে মানুষের স্বপ্নটা এখনো বেঁচে আছে। আমি যদি হাসপাতাল করতে পারি তাহলে মানুষের সেবা করতে পারব, রোগীদের পাশে দাঁড়াতে পারব। আপনার কোনো অপ্রাপ্তি আছে কি? আল্লাহর রহমতে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। তারপরও শিল্পীদের কিছু অপ্রাপ্তি কিন্তু থেকে যায়। অনেক কিছু পেয়েও মনে হয়, কিছু হয়তো বাকি রয়ে গেছে। আসলে প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি মিলেই কিন্তু আমাদের জীবন। আমি অনেক ছবি করেছি। ছয় শর বেশি ছবিতে অভিনয় করেছি, তার পরেও মনে হয় মনের মতো চরিত্রটা এখনো পাইনি, এখনো মনে হয় অভিনয়ের শেখার অনেক কিছু রয়েছে। আমার অভিনয় জীবনে অপ্রাপ্তি বলতে গেলে এগুলোই।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১