বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০২ July ২০১৯

নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে রায় প্রকাশ


নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল সোমবার  সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশিত হয়। এর আগে রায় প্রদানকারী বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায়ে স্বাক্ষর করেন।

রায়ে আদালত বলেছেন, মানুষের জীবন-জীবিকা নদীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানব জাতি টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী। নাব্য সংকট ও বেদখলের হাত থেকে নদী রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানব জাতি সংকটে পড়বে। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সরকার আইন প্রণয়ন করে নদীকে বেদখলের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। নদীরক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে জাগরণ শুরু হয়েছে। এখন সবারই ভাবনা, পরিবেশের জন্য নদী রক্ষা করতে হবে।

একই সঙ্গে আদালত তার রায়ে তুরাগ নদকে লিগ্যালপারসন ঘোষণা করে বলেন, অবৈধ দখলদাররা প্রতিনিয়তই কমবেশি নদী দখল করছে। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় সংকুচিত হয়ে পড়ছে নদী। এসব বিষয় বিবেচনা করে তুরাগ নদকে লিগ্যাল/জুরিসটিকপারসন (আইনগত ব্যক্তি) হিসেবে ঘোষণা করা হলো। নদী রক্ষায় বিভিন্ন দেশের আদালতের দেওয়া রায়ের উদাহরণ দিয়ে হাইকোর্ট বলেন, আমাদের দেশের সব নদীকে রক্ষা করার সময় এসেছে। যদি তা না করতে পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ঢাকার চারপাশে বহমান চার নদী রক্ষায় এর আগে আদালত থেকে যদি নির্দেশনা দেওয়া না হতো তাহলে এত দিনে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর হয়তো বহুতল ভবন দেখা যেত। অথবা তুরাগ নদে অবৈধ দখলদারদের হাউজিং এস্টেট থাকত। তবে এত রায় ও নির্দেশনার পরও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে বিবাদীরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আদালতের নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালন হলে তুরাগ নদ রক্ষায় হাইকোর্টে আরেকটি মামলা করতে হতো না।

শুধু যে তুরাগ নদই আক্রান্ত তা নয়- গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনাসহ দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৪৫০টি নদ-নদীও অবৈধ দখলদারদের দ্বারা আক্রান্ত। এসব নদী রক্ষায় আমরা (আদালত) কি হাজার খানেক মামলা করার ব্যাপারে উৎসাহ/অনুমতি দেব, নাকি অবৈধ দখলের হাত থেকে নদী রক্ষায় এই মামলা ধরে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেব- যেটার আলোকে নদী দখলমুক্ত করার মামলা আর আদালতের সামনে আসবে না। পাশাপাশি দেশের সব নদ-নদী-খাল-জলাশয় ও সমুদ্র সৈকতের সুরক্ষা এবং তার বহুমুখী উন্নয়নে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বাধ্য থাকবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে মানুষের মতোই নদীর মৌলিক অধিকার স্বীকৃতি পেল। নদী যাতে জীবন্ত থাকতে পারে, দখল বা দূষণ না হয় সে জন্য একটা মেসেজ দিতে চাচ্ছেন আদালত-যেন ভবিষ্যতে আর কেউ যেন নদী দখলের সাহস না করে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকে নদ-নদী দখলসংক্রান্ত বিষয়ে এক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরে ওই রিটের ওপর জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণাকালে হাইকোর্ট এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছিলেন।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১