বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০১ July ২০১৯

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ৩ বছর


গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্টুরেন্টে স্মরণকালের ভয়াবহ জঙ্গি হামলার তৃতীয় বর্ষপূর্তি আজ। অভিযুক্ত ২১ জনের মধ্যে দুজনকে আজও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, তারা সীমান্তের ফোকর গলে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ১৩ জন বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে। বাকি ৬ জন কারাগারে বন্দি। আইএসপন্থি কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরীর নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় হলি আর্টিজানে হামলা করেছিল আইএস মদদপুষ্ট বাংলাদেশি ৫ যুবক। এরাও ওই দিন সেনা সদস্যদের প্যারা কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়।

 

বাংলাদেশের জন্য টার্নিং পয়েন্ট

গত ২৫ মার্চ দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের মধ্যে চারজনের স্বজনদের সমবেদনা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনাটি বাংলাদেশের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর আমরা অনেকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তবে খুব দ্রুতই পরিস্থিতি রিকভার করেছি। প্রধানমন্ত্রীর সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতিতে যে যার জায়গা থেকে সহযোগিতা করেছেন। সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা গেছে। এরপর ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে একের পর এক জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এসব অভিযানে ভেঙে গেছে সব জঙ্গি নেটওয়ার্ক। এখন জঙ্গিরা কার্যত পঙ্গু হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ থেমে নেই। জঙ্গি-সন্ত্রাসীবিরোধী লড়াই এখনো অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর তিন বছরে কমপক্ষে অর্ধশত জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব অভিযানে ৬৫ জন নিহত হয়েছে। এরা সবাই ‘নব্য জেএমবি’র সদস্য বলে জানায় পুলিশ।

গুলশান হামলার পর প্রথম অভিযান হয় ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়িতে। এতে নয়জন নিহত হন। এরপর ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে আরেকটি জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত হন নব্য জেএমবির কথিত সামরিক শাখার প্রধান ও হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীসহ তিনজন। এর পাঁচ দিনের মাথায় ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রূপনগরে একটি বাসায় পুলিশের অভিযানে নিহত হন মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আজিমপুরে, ৮ অক্টোবর গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও আশুলিয়ায়, সর্বশেষ ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার আশকোনা এলাকায় পুলিশ অভিযান চালায়। এরপর ‘যেখানেই জঙ্গি সেখানেই হানা’ মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে র্যাব-পুলিশ একযোগে দেশ থেকে জঙ্গি নিধনে মাঠে নামে। গত তিন বছর ধরে চলে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান।

 

কেমন আছে রবিউল ও সালাউদ্দিনের পরিবার

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এএসপি রবিউল করিমের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তার স্ত্রী উম্মে সালমা। তিন বছর আগে স্বামী হারানোর শোক নিয়েই প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য রবিউলের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটিকে আরো বড় করার পাশাপাশি দুই সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

উম্মে সালমা বলেন, দুই সন্তানের দিকে তাকালে কষ্টে বুকের ভেতরটা গুমরে ওঠে। এখন সব কষ্ট চাপা দিয়ে দুই সন্তানকে মানুষ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এর পাশাপাশি রবিউলের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটিকে আরো বড় করতে চেষ্টা করছি। প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি রবিউলের খুব দরদ ছিল। তিনি আরো বলেন, পুলিশ প্রশাসন আমাদের জন্য যথেষ্ট করছে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। দোয়া করবেন সন্তান দুটোকে যেন মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে পারি।

অন্যদিকে এখন বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে ওসি সালাউদ্দিনের পুরো পরিবার। স্বামীকে হারিয়ে হতবিহ্বল তার স্ত্রী। তিনি এতটাই শোকাহত যে, স্বামী বনানী থানার তৎকালীন ওসি সালাউদ্দিন নিহত হওয়ার ঘটনার ব্যাপারে এখনো কারো সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। নিহত সালাউদ্দিনের বড়ভাই রাজিউদ্দিন খান জানান, সালাউদ্দিন সব ঈদে গ্রামের অনেক মানুষকে নতুন জামা-কাপড় দিত। গত তিন বছর ধরে সব ভেস্তে গেছে। উল্টো এখন পুলিশ ও সরকারের সহায়তায় চলতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। তারা নির্মমভাবে হত্যা করে দেশি-বিদেশি ও নারী-পুরুষ মিলিয়ে বিভিন্ন বয়সী ২২ ব্যক্তিকে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও। সে ছিল এক বিভীষিকাময় রাত। জঙ্গি হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজধানীসহ সমগ্র দেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। রাতভর বেকারিটিতে হত্যাযজ্ঞ চলে, পরদিন সকালে শুরু হওয়া যৌথবাহিনীর অভিযান শেষ হয় ১১ ঘণ্টা পর। অবসান ঘটে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির। দেশবাসী হতবাক হয়ে পড়েছিল এ ঘটনায়। কেউ ভেবে কূলকিনারা করতে পারেনি কী কারণে হত্যা করা হয়েছিল এমনকি নির্দোষ বিদেশিদেরও।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১