আপডেট : ০২ June ২০১৯
দেশে প্রতি চারজনের একজনই তামাকে আসক্ত। আর ৬১ হাজার শিশু আক্রান্ত হচ্ছে বড়দের ধূমপানের কারণে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হয় তারা। সরকার বাংলাদেশকে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপও হাতে নিয়েছে। কিন্তু প্রায় চার কোটি ধূমপায়ীকে কীভাবে তাদের অভ্যাস থেকে সরানো যাবে, এ নিয়ে নেই প্রশ্নের জবাব। গবেষণা বলছে, তামাকজনিত ব্যাধি ও অকাল মৃত্যুর কারণে প্রতি বছর ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ২০১৮ সালেই মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার জন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করে, যাদের সংখ্যা তিন কোটি ৭৭ লাখ। তামাক ব্যবহারের ফলে হূদরোগ, শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা ও ক্যানসারসহ বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ বেড়েছে, যা প্রকারান্তরে স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ভার বৃদ্ধি, অকালমৃত্যু, জীবনে সুস্থ সময়ের মেয়াদ হ্রাস ও উৎপাদনশীলতা বিনাশের মাধ্যমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির উদ্যোগে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি ও ক্যানসার রিসার্চ-ইউকে-এর সহযোগিতায় স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তামাকজনিত অসুখ ও অকালমৃত্যুর কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তামাকবিরোধী জাতীয় প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বলা হয় তামাক থেকে সরকার অনেক রাজস্ব পায় যা দিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। অর্থনীতিতে তামাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। কারণ, এর ক্ষতিকর দিক বেশি।’ ‘২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে তামাকজাতীয় পণ্যের খাতে রাজস্বের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, তামাকজনিত অসুখ ও অকালমৃত্যুর কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে। যারা তামাক চাষ করছে তারাও অসুখে পড়ছে। চিকিৎসা করাতে বেশ টাকা চলে যাচ্ছে। তাহলে তা কীভাবে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে?’ ক্যানসারের ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেশি বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির গবেষণায় দেখা যায়, তামাকজনিত রোগের ফলে মৃতের সংখ্যা ২০০৪ সালের ৫৭ হাজার জনের তুলনায় ২০১৮ সালে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। গবেষণায় আরো দেখা, যায় ৩০ ও তদূর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে তামাকজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। তামাকসেবীদের মধ্যে হূদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাসযন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যানসারসহ প্রধান সাতটি রোগের ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি। আর ক্যানসারের ক্ষেত্রে ১০৯ শতাংশ বেশি ঝুঁকি থাকে। ৩০ ও তার বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে বর্তমানে ৭০ লাখের বেশি লোক তামাকজনিত রোগে ভোগে। এদের মধ্যে ১৫ লাখের রোগাক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে তামাকের প্রত্যক্ষ সংশ্লেষ রয়েছে। ১৫ বছরের কম বয়সী ৪ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি শিশু তামাকজনিত নানান রোগে ভুগছে, যাদের মধ্যে আবার ৬১ হাজারের বেশি শিশু বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত বলেন, ‘তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে বাজেটে আর্থিক নিদের্শনা থাকা জরুরি। একই সঙ্গে সিগারেট, বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যে অধিকহারে আবগারি শুল্ক আরোপ করতে হবে।’ ‘আমাদের সুপারিশ হলো সিগারেটের কয়েক স্তরবিশিষ্ট মূল্যস্তর বাতিল করে প্রতি ১০ শলাকার সিগারেটের ওপর কমপক্ষে ৬০ টাকা আবগারি শুল্ক, ২৫ শলাকার বিড়ির ওপর ১৫ টাকা আবগারি শুল্ক আর প্রতি ১০০ গ্রাম ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের ওপর ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করা হোক।’ পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও জাতীয় তামাকবিরোধী প্ল্যাটফর্ম তামাক চাষিদের অন্য ফসলে চাষ করাতে উৎসাহিত করছে। তাদের তথ্যমতে, তামাক চাষে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে ১২তম। কুষ্টিয়ায় ৫৪ শতাংশ, বৃহত্তর রংপুরে ৩৪ শতাংশ, চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ৭ শতাংশ এবং বাকি ৫ শতাংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষ হয়। পিকেএসএফ কুষ্টিয়ার মিরপুর, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, বান্দরবানের তামাক চাষিদের সংগঠিত করে অন্য ফসল উৎপাদনে উৎসাহী করছে। এর জন্য তাদের প্রশিক্ষণসহ টাকাও দেওয়া হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণেও সহায়তা করছে। পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘একজন যে জমিতে তামাক চাষ করে ৩০ হাজার টাকা আয় করত, সে তার জমিতে রসুন চাষ করে এক লাখ আয় করেছে। তামাক চাষে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। আমরা কৃষককে তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরছি।’ তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা থেকে জানানো হয়, গবেষণায় রাজধানী ঢাকার প্রাথমিক স্কুলে পড়া ৯৫ শতাংশ শিশুর দেহে উচ্চমাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে, যার মূল কারণ পরোক্ষ ধূমপান। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৮১ লাখ মানুষ। এমনকি বাড়িতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ এবং এক্ষেত্রে নারীরা আক্রান্ত হচ্ছে অনেক বেশি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১