বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০১ June ২০১৯

এলএনজিতে ভতুর্কি দ্বিগুণ বাড়ছে

গ্যাসের দাম বাড়লে পরিমাণ কমবে


২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) খাতে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে, যা আগের তুলনায় তিনগুণ। আমদানি করা এলএনজি দেশি বাজারে কম দামে বিক্রির কারণে পেট্রোবাংলাকে এই ভর্তুকি দেবে সরকার। অবশ্য গ্যাসের দাম বাড়লে ভতুর্কির পরিমাণ ক্রমশ কমবে। এবারই প্রথম এ খাতে বিশাল পরিমাণ ভর্তুকির অর্থ রাখা হচ্ছে। অর্থ বিভাগ ও জ্বালানি বিভাগের একাধিক সূত্রে এমন খবর জানা যায়।

গ্যাস সংকটের কারণে গত কয়েক বছর বাসাবাড়ির পাশাপাশি শিল্পেও নতুন সংযোগ বন্ধ রাখে সরকার। এলএনজি আমদানি করে শিল্পে নতুন করে সংযোগ দেওয়া শুরুর পর গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় কোম্পানিগুলো। এ নিয়ে শুনানিও হয়। গ্যাসের দাম বাড়ানোর এ উদ্যোগ চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিটও করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন। আদালত গ্যাস কোম্পানিগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দেন। তারপর থেকেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি সামনে এসেও ঝুলে থাকে। এমন প্রেক্ষিতেই চড়া দামে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহে বাড়তি ভর্তুকি রাখতে হচ্ছে বাজেটে।

গত এপ্রিলে প্রথমবারের মতো এলএনজি খাতে এক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের অক্টোবরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এ বাবদ কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। গত মার্চ পর্যন্ত ৩ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ঘাটতিতে ছিল পেট্রোবাংলা।

দেশে গ্যাসের সংকট পূরণ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করছে। চলতি বছরের ১ মার্চ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক গড়ে সাড়ে চারশ থেকে চারশ ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিলে এলএনজি সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। বেশি দামে এলএনজি কিনে কম দামে বিক্রির কারণে আর্থিক ঘাটতি তৈরি হয়। এই আর্থিক ঘাটতি এড়াতেই গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রয়োজন।

এতে বলা হয়, আমদানি করা প্রতি হাজার ঘনফুট এলএনজির দাম ১০ ডলার বা ৮২০ টাকা (প্রতি ডলার ৮২ টাকা হিসেবে)। অন্যদিকে দেশের প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১২.১৯ টাকা। দৈনিক দেশের অভ্যন্তরের গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২ হাজার ৭১৬ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানি করা এলএনজি ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করার হিসাব ধরে এই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের প্রধান গ্যাস পাইপলাইনে আমদানি করা ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়। এই এলএনজি সরবরাহের কারণে চট্টগ্রাম ও ঢাকা অঞ্চলেও গ্যাসের প্রবাহ বাড়ে। পাশাপাশি বাড়ে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন। চলতি মাসে সামিটের এলএনজি জাতীয় গ্যাস পাইপলাইনে যোগ হলে পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটে।

দেশে বর্তমানে প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোবাংলার বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়। বর্তমানে পেট্রোবাংলা ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতির বিপরীতে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করছে।

এলএনজি সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা যায়, এলএনজির আমদানি মূল্যের তুলনায় সরকার নির্ধারিত মূল্য কম। এ জন্য আমদানিকারকদের বিনিয়োগ উদ্ধারে ভর্তুকি প্রয়োজন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের উদ্ধৃতি তুলে ধরে সূত্রগুলো জানায়, বিক্রয় মূল্য ও আমদানি মূল্যের মধ্যে বর্তমান প্রতি কেউবিক মিটারে ১ টাকা ঘাটতি রয়েছে। বিশ্ববাজারে এলএনজির মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে সরকার স্থানীয় বাজারে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে না দিলে এই ঘাটতি বাড়তে থাকবে।

ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, এলএনজিতে ভর্তুকি কত রাখল, সেটা ব্যবসায়ীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট কত থাকবে, সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাড়তি ভর্তুকি রাখার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে, সরকার গ্যাসের দর সহনীয় পর্যায়ে রাখার চিন্তা করছে।

এর মাঝেই অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকির জন্য ৪৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। এটি চলতি অর্থবছরের ভর্তুকি বরাদ্দের তুলনায় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাখা হয়। নতুন অর্থবছরে ভর্তুকির প্রায় অর্ধেকই ব্যয় হবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও কৃষি খাতে। পাটকলগুলোর লোকসান কমানো ও মূলধন জোগান দিতে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া কৃষি খাতে ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে বলে জানা গেছে। গত দুই অর্থবছর ধরেই খাতটিতে ৯ হাজার কোটি টাকা করেই ভর্তুকি রাখা হচ্ছে। কৃষি খাতের ভর্তুকি মূলত সার ও সেচে ব্যবহার হয়। বিদ্যুৎ খাতে নতুন অর্থবছরে ভর্তুকি সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছর এ খাতে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস কিংবা এলএনজি হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস; যাকে সংরক্ষণ ও পরিবহনের সুবিধার্থে অস্থায়ীভাবে তরলে রূপান্তর করা হয়েছে। জ্বালানি হিসেবে এলএনজির জনপ্রিয়তা ক্রমাগত বাড়ছে।

এলএনজি আলাদা কোনো জ্বালানি নয়। আসলে এটি প্রাকৃতিক গ্যাসেরই তরল রূপ। প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। শীতলকরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের তাপমাত্রা কমিয়ে ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে গ্যাস তরলে পরিণত হয়। এই তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকেই এলএনজি বলা হয়।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১