আপডেট : ২৮ May ২০১৯
শৈশব থেকেই জাপানের প্রতি টান ছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা তার মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে। জাপানে রাষ্ট্রীয় সফর শুরুর আগে মঙ্গলবার দেশটির সবচেয়ে পুরনো ও অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যম দ্য জাপান টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শৈশব থেকেই জাপান নিয়ে আমার মধ্যে মোহ কাজ করত। জাপানি চিত্রকলা, ক্যালেন্ডার, ডাকটিকেট, পুতুল ইত্যাদি সংগ্রহ করতাম। দেশটি সবসময়ই আমার হূদয়ের কাছে। ওই নিবন্ধে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে সেবা ও শিল্প খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধির পরিক্রমায় বাংলাদেশের রূপান্তরের কালে জাপানি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে জাপানে তিন দিনের সফরের জন্য ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এটাই তার প্রথম জাপান সফর। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি জাপান সফর করেন। এবার তার সফরের আগে জাপানে নতুন সাম্রাজ্য শুরু হয়েছে। নতুন যুগকে ‘আশা ও ঐকতানের’ যুগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন শেখ হাসিনা। বলেন, নতুন এই যুগ আমাদের আরো কাছে টানুক, সম্পর্ক গভীরতর করুক এবং শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সহায়তা করুক। ‘উন্নয়নের জন্য জাপান-বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব’ শিরোনামে এই নিবন্ধে তিনি ‘বাংলাদেশকে আরেকটি জাপান হিসেবে গড়তে’ তার বাবার আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে সবসময়ই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানের শিক্ষার্থীরা খাবারের টাকা জমিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যে ছিল জাপান। দেশটি ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। দুই দেশের পতাকাও দেখতে অনেকটা একই রকম। জাতির জনক সবসময়ই বলতেন, জাপানের পতাকা তাকে সূর্যোদয়ের দেশটির কথা মনে করিয়ে দেয়। অপরদিকে আমাদের দেশের পতাকা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা এবং সবুজ ভূমির কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফর ও পরের বছর তার অনুরোধে জাপানের পক্ষ থেকে যমুনা (বঙ্গবন্ধু) সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা পরিচালনার কথা স্মরণ করেন তিনি। ১৯৭২ সাল থেকে দেশটির কাছ থেকে বাংলাদেশ মোট এক হাজার ১৩০ কোটি ডলারের সহায়তা পেয়েছে। শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় ৪০তম ঋণ সহায়তার আওতায় আড়াইশ কোটি ডলারের একটি ঋণচুক্তি হবে। তিনি সবসময়ই আমাদের কৃষি থেকে শিল্পায়ন সব ক্ষেত্রেই জাপানকে অনুসরণ করতে উৎসাহ দিতেন। ১৯৯২ সালে বিরোধী দলে থাকাকালীন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জাপানের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সম্পর্ক উন্নয়নের কথাও কলামে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান যান তিনি। সে সময় বাংলাদেশের পদ্মা এবং রূপসা ব্রিজ নির্মাণকাজে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল জাপান। রূপসা ব্রিজের কাজ অনেক আগেই শেষ করেছে তারা। তবে ২০১৬ সালে ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ছিল জাপান এবং বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য একটি পরীক্ষা। ভয়াবহ ওই হামলায় সাত জাপানি নাগরিকের মৃত্যু হয়। সে সময় জাপানের মানুষ এবং দেশটির সরকার আমাদের পাশে ছিল। আমাদের দেশের উন্নয়নে সবসময় সহযোগিতা করে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে জাপান। ২০২২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করব আমরা। জ্বালানি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করতে চলমান বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমরাই বিনিয়োগের সবচেয়ে উদার ও উপযোগী পরিবেশের সুযোগ দিচ্ছি। জাপানি বিনিয়োগকারীদের একটিসহ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, দুই দেশ সবসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৮০ জাপানি কোম্পানি ব্যবসা করছে, যা গত দশকের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপ বলছে, জাপানের অনুমোদিত কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসায় উন্নতি করছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১