বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৭ May ২০১৯

ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত কৃষক

কুড়িগ্রামে ১ মণ ধানের দাম ১ কেজি মাংসের চেয়েও কম

কৃষকদের ধান কাটার একাংশ ছবি : বাংলাদেশের খবর


কুড়িগ্রামে এক মণ ধান বিক্রি করে এক কেজি মাংস কিনতে পারছে না কৃষক। পরিবার পরিজনদের ঈদ কেনাকাটা নিয়েও দুশ্চিন্তায় ধান চাষীরা। ধানের দাম না থাকায় অনেকেই ঋণ করে ধান চাষ করলেও ঋণ পরিশোধ করতে বিপাকে পড়ছেন কৃষক। ফলে ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেলে ধান চাষে কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কৃষি বিভাগের।

জেলায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাজারে নজিরবিহীন ধ্বস নামার কারণে নেই কৃষকের মুখে হাসি। বর্তমানে ৪৩০ হতে ৫০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হলেও বাজারে এক কেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা, খাসির মাংস ৭০০ টাকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কেজি প্রতি ৪০০ টাকার উর্দ্ধে বিক্রি হচ্ছে। শাড়ি ৬০০ টাকাসহ ছোট-বড়দের ঈদ পোশাকও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। ফলে দরিদ্র চাষীরা এক মণ ধান বিক্রি করেও কিনতে পারছে না এসব সামগ্রি। এতে করে অনেক চাষী ঈদের কেনাকাটা করতে পারেনি। আসন্ন ঈদুল ফিতরে পরিবার পরিজনদের ঈদ আনন্দ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন কৃষক। এবারে বিঘা প্রতি ১০/১২ হাজার টাকা খরচ করে ফলন পেয়েছে ২০-২৩ মণ ধান। বাজারে ধানের দাম না থাকায় কৃষকদের বিঘা প্রতি লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রায় দুই হাজার টাকা। ধান বিক্রি করে সার, তেল, কীটনাশকসহ শ্রমিক মজুরির দাম উঠাতেই হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো অনেকেই ধার দেনা করে চাষ করলেও সেই ঋণ পরিশোধ করতে বিপাকে পড়ছেন। এমন অবস্থা বিরাজ করলে আগামীতে ধান চাষে বিমুখ হবেন সাধারণ কৃষকগণ।

সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীর শিবরাম এলাকার কৃষক রফিকুল, শাহাদত মিয়া জানান, যে ঋণটা করছি। ধানের ফলন দেখিয়া মনে করছি বিক্রি করিয়া দেনা শোধ করমো। কিন্তু ঋণতো শোধ করা দূরের কথা আরো ঋণ করিয়া ধান কাটা নাগে। ঋণতো শোধ তো দূরের কথা উল্টো আরো ঋণে পরছি। সরকার ১ হাজার ৪০ টাকা দাম ঠিক করে দিলেও সাধারণ কৃষক তো পায় না। তাই কৃষকদের দাবী ধানের দাম কমপক্ষে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ হলে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।

নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ গ্রামের কৃষক সিরাজ উদ দৌলা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হামার কি কেউ খবর নিবে হামার ক্ষতি হইলেই কি আর লাভ হইলেই বা কি?

রাজারহাট উপজেলার টগরাইহাটের কৃষক আসাদুজ্জামান বলেন, এক বিঘা জমি বোরো ধান চাষ করতে এবার খরচ গেছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। ফলন পাইছি প্রায় ২১ মণ। বর্তমান ধানের দাম হিসেবে ২১ মণ ধান বিক্রি করলে হয় সাড়ে ৯ হাজার টাকা। এলা বোঝো ধান চাষ করিয়া হামার লাভ কত?

ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় পুরুষ শ্রমিকরা চুক্তি ভিত্তিক আর নারী শ্রমিক দিন মজুরি হিসেবে ধান কাটছেন। শ্রমিক আছমা, লাইলী, ফাতেমা ও ফিরোজা বলেন, ভাল ফলন হওয়া ৩শ টাকা এবং পুরুষ শ্রমিক মমিনুল ও নুর ইসলাম জানান, আমরা ১২জনের একটি দল আছি। চুক্তিভিত্তিক বিঘায় ধানকাটা-মাড়াইসহ ২ হাজার ৮০০ টাকা নিচ্ছি। এতে করে সংসারে মোটামুটি স্বচ্ছলতা এসেছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাযায়, চলতি বোরো মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৮২ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯১ হেক্টর। ফলন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন। যা ৫ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে কথা হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ধানের মূল্য না থাকায় কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমন অবস্থা বিরাজ করলে আগামীতে ধান চাষে কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১