বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৬ May ২০১৯

টিকেট পেতে রেলস্টেশনে জনস্রোত


ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির চতুর্থ দিন জনস্রোত নামে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে। গতকাল শনিবার দেওয়া হয় ৩ জুনের টিকেট। কাঙ্ক্ষিত টিকেট পেতে অনেকেই মধ্যরাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, আবার কেউবা ভোরে। টিকেটপ্রত্যাশীদের প্রতিটি লাইন এঁকেবেঁকে চলে যায় স্টেশনের বাইরে। সকাল ৯টায় পর্যন্ত লাইন স্টেশনের বাইরে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড পর্যন্ত চলে যায়।

ট্রেনের অগ্রিম টিকেট পেতে গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়েও ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যায়। এ পুরনো স্টেশনে বিক্রি হয় ময়মনসিংহ ও জামালপুর রুটের ট্রেনের অগ্রিম টিকেট। তাই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মতো জনস্রোতে পরিণত না হলেও শুক্রবার রাত থেকে হঠাৎ পুরনো এ স্টেশনে মানুষের ভিড় বেড়েছে।

গত ২২ মে বুধবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে, যা চলবে আগামী ২৬ মে পর্যন্ত। যাত্রীদের সুবিধার্থে এবার ঢাকার পাঁচটি স্থান থেকে রেলের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। কমলাপুরে শুধু যমুনা সেতু দিয়ে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনের টিকেট পাওয়া যাচ্ছে।

দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য শুক্রবার রাত ১১টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুল খালেক। তিনি বলেন, রাতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি; কিন্তু এখনো টিকেট কাউন্টারে পৌঁছাতে পারিনি, সামনে এখনো অনেক মানুষ। যেহেতু পরিবার নিয়ে বাড়ি যাব, তাই ট্রেন ছাড়া বাসে যাওয়া কঠিন। বাধ্য হয়ে এত কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত টিকেট পাব কি না জানি না।

রাজশাহীগামী বনলতা ট্রেনের টিকেটের জন্য দুই বন্ধুর সঙ্গে সকালে এসে লাইনে দাঁড়ান সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, আমার মূল টার্গেট ছিল অ্যাপসের মাধ্যমে টিকেট কাটা, কিন্তু অ্যাপসটি কাজ না করায় বাধ্য হয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি।

টিকেট কাউন্টারে কর্মরত স্টেশনের এক কর্মচারী জানান, ৩ জুনের টিকেটের জন্য কমলাপুরে সর্বোচ্চ ভিড়। যত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছে তত টিকেট আমাদের নেই। তাই অনেককে টিকেট না পেয়ে খালি হাতে ফেরত যেতে হবে।

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, ঈদের সময় সবাই এসি টিকেট চান, কিন্তু আমাদের এসি সিট তো সীমিত। তাই সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয় না।

রেলভবন সূত্র জানায়, অনলাইনে ঈদের সময় একসঙ্গে প্রায় দেড় লাখ হিট পড়ে। তবে সিএনএসবিডির যে সক্ষমতা রয়েছে তাতে মাত্র ২০ হাজার লোড নিতে পারে। যে কারণে সাধারণ মানুষের অ্যাপসের মাধ্যমে টিকেট পেতে ভোগান্তি হচ্ছে। ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে অ্যাপসের মাধ্যমে এবং স্টেশন কাউন্টার থেকে বাকি ৫০ শতাংশ টিকেট অগ্রিম বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানায় সূত্রটি।

 

তেজগাঁও স্টেশনেও ভিড় : সরেজমিন রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের নামফলকে জং ধরেছে। নেই যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। স্টেশনের আকারও খুব ছোট। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে এখানে বিক্রি হচ্ছে ময়মনসিংহ ও জামালপুর রুটের টিকেট। তাই হঠাৎ মানুষের ভিড় বেড়েছে। টিকেট কিনতে আসাদের একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রায় ২০ বছর পরে আসলাম এখানে।’

পুরনো এ স্টেশনে গতকাল শনিবার বিক্রি হয় ৩ জুনের টিকেট। সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয় এখানে। তখন বিপাকে পড়েন টিকিট কাটতে আসা যাত্রীরা। কারণ স্টেশনের ছোট্ট জায়গা ছেড়ে বাইরে পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছিল টিকিট কাটতে আসা যাত্রীদের সারি। কেউ কেউ ছাতা মেলে ধরলেন মাথার ওপর। তবে বেশির ভাগের কাছেই ছিল না ছাতা। তাই বৃষ্টিতে ভিজতে হয় অনেককেই। তবে প্রকৃতি যেন সহায়, কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি থেমে যায়। তবে আকাশে মেঘ থেকেই যায়।

স্টেশন মাস্টার এম এ আজিজের দাবি, ‘এ বছরই প্রথম ঈদে ট্রেনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে তো সমস্যার সমাধান করা যায় না। আশা করছি, আগামী বছর এ সমস্যা থাকবে না।’

তেজগাঁওয়ে টিকেট কিনতে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকে গত শুক্রবার রাত থেকে টিকেটের জন্য স্টেশনে অবস্থান করছেন। আবার অনেকে সেহরি খেয়ে স্টেশনে চলে এসেছেন। সে জন্য তারা স্ব-উদ্যোগে সিরিয়ালের ব্যবস্থা করেছেন। যাতে কেউ পরে এসে আগে টিকেট নিয়ে চলে যেতে না পারেন।

অনেকের দাবি ও আশঙ্কা, টিকেটের সারি অনেক লম্বা। সারির পেছনে যারা রয়েছেন তারা টিকেট নাও পেতে পারেন। তারা সবাই অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটার চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেননি।

গতকাল ভোর ৬টায় টিকিট কাটতে আসেন রেজাউল করিম, ফয়সাল আহমেদ ও সাজ্জাদ হোসেন। তারা জানান, তাদের টিকেট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারা আরও জানান, অ্যাপসের মাধ্যমে টিকেট কাটার চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু অ্যাপস ডাউন দেখায়।

শুক্রবার রাতে স্টেশনে এসেছেন এমন একজন আশরাফুল ইসলাম। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এ ব্যক্তি চারটি টিকেট কেটেছেন। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার আসরের নামাজের পর তেজগাঁও স্টেশনে আসি। আমার সিরিয়াল ছিল ৫৯ নম্বর। রাত ২টা পর্যন্ত সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরপর ফার্মগেটে এক বন্ধুর বাসায় চলে যাই। সেখান থেকে সকাল ৮টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়াই। এইতো সাড়ে ১০টার দিকে টিকেট হাতে পেলাম।’

রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হূদয় হাসান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ময়মনসিংহের টিকেট কাটব। সকাল ৮টায় টিকেটের জন্য এসেছি। কিন্তু দুই ঘণ্টায় ১০ ফুট সামনেও এগোতে পারিনি।’

স্টেশন মাস্টার এম এ আজিজ বলেন, ‘আমি কাউন্টারে কথা বলেছি। তারা বলেছে, সার্ভারে কোনো সমস্যা নেই। স্বাভাবিকভাবে টিকেট বিক্রি করতে যে সময়টুকু লাগে, সেটুকুই লাগছে।’

অনলাইনের টিকেট কাউন্টারে বিক্রির বিষয়ে এম এ আজিজ বলেন, ‘অনলাইনের বিষয়টি তো আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তবে আমাদের মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, যেসব টিকিট অবিক্রিত থাকবে সেগুলো ২৬ মের পর বিক্রি করা হবে। আশা করছি, কাউন্টারে আমরা যেভাবে নরমালি টিকিট বিক্রি করি, সেভাবেই হয়তো অনলাইনে অবিক্রিত টিকিটগুলো বিক্রি করতে পারব।’

গতকাল তেজগাঁও স্টেশনে ময়মনসিংহ ও জামালপুর রুটের তিস্তা, অগ্নিবীণা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ৩ জুনের টিকেট বিক্রি হয়। এর মধ্যে এক সিরিয়ালে দেওয়া হয় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র ট্রেনের টিকেট এবং অন্য সিরিয়ালে দেওয়া হয় অগ্নিবীণা ও যমুনার টিকিট। আর ঈদ স্পেশাল দেওয়া হয় দুই সারিতেই।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১