বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৯ May ২০১৯

কুড়িগ্রামে গলদা চিংড়ি উৎপাদনে ঝুঁকছে মৎস্য চাষীরা

কুড়িগ্রাম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে গলদা চিংড়ি রেনু ও পোনা উৎপাদনের একাংশ ছবি : বাংলাদেশের খবর


কুড়িগ্রামে স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে কুড়িগ্রামের মৎস্য চাষীরা। কার্প জাতীয় মাছের চেয়ে গলদা চিংড়ি চাষে কৃষকরা বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। অধিক লাভবান হওয়ায় ফসল উৎপাদন না করে চিংড়ি চাষে ঝুঁকে পড়েছে এখানকার কৃষক ও সাধারণ মানুষ। ফসলি জমির পাড় বেঁধে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ব্যাপকহারে চিংড়ি উৎপাদনের স্বপ্ন বুনছেন তারা। ইতোমধ্যে জেলায় অর্ধ শতাধিক মৎস্য চাষী পোনা ক্রয় করে চিংড়ি চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী।

কুড়িগ্রাম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৭ সাল থেকে কাজ শুরু করে। গত বছর নিজস্ব খামারে গলদা চিংড়ির রেনু ও পোনা উৎপাদন করে সফলতা পাওয়ায় এ বছরও গলদা চিংড়ির পি.এল (রেনু) উৎপাদন করে কৃষদের মধ্যে বিক্রি শুরু করেছে খামার কর্তৃপক্ষ। এ বছর (২৮-৩৫দিন বয়সী) পি.এল (রেনু) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লক্ষটি এবং (৪০-৫০দিন বয়সী) জুভেনাইল (পোনা) উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৬ হাজারটি। সরকারের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার অধিক অর্জিত হয়েছে রেনু ও পোনা।

কুড়িগ্রাম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ব্যবস্থাপক ও মৎস্য গবেষক মোঃ মূসা কালিমুল্লা জানান, বিঘা প্রতি ৭ মনের অধিক গলদা চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব। যার প্রতি কেজি গলদা চিংড়ির দাম সর্বনিম্ন ৮’শ টাকা। প্রতিমন চিংড়ি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮ হাজার টাকা। অথচ ১ বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন হবে ২০ মন। যার সর্বোচ্চ মূল্য হবে ১২ হাজার টাকা। কৃষকরা বুঝতে পেরে এখন গলদা চিংড়ি চাষে ঝুঁকে পড়েছে। আশা করি আগামী ২ বছরের মধ্যে কুড়িগ্রামে গলদা চিংড়ি চাষে বিপ্লব ঘটবে। এতে সচল হবে পিছিয়ে পড়া কুড়িগ্রাম জেলার অর্থনীতির চাকা।

কুড়িগ্রাম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার সূত্রে জানা গেছে, মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণের লক্ষে বরগুনার আমতলী ও পায়রা নদী থেকে মা চিংড়ি এবং পেকুয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার থেকে লবনাক্ত পানি সংগ্রহ করে আনা হয়। এরপর লবনাক্ত পানিতে স্বাদু পানি মিশিয়ে সেখানে মা মাছের ডিম ফোটানো হয়। পরে সেই ডিম স্বাদু ও লবনাক্ত পানির মিশ্রণে ২৮ থেকে ৩২ দিন পর্যন্ত প্রক্রিয়াজাত করে পি.এল (রেনু)তে পরিণত করা হয়। গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও জেলায় স্বাদু পানিতে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রামে মৎস্য বীজ খামারে উৎপাদিত গলদা চিংড়ির পি.এল (রেনু) মৎস্য চাষীদের মাঝে বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে গত বছর জেলায় শতাধিক মৎস্য চাষী পোনা ক্রয় করে চিংড়ি চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী।

উলিপুরের চিংড়ি চাষী আসাদুজ্জামান জানান, গত বছর চিংড়ি চাষ ছিল আমার জন্য পরীক্ষা মূলক। নতুন হিসেবে অকল্পনীয় সফলতা পেয়েছি। কার্প জাতীয় মাছ প্রতি মন ৭/৮ হাজার টাকা বিক্রি করি। অথচ ১মন চিংড়ির দাম ২৮ হাজার টাকা। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কার্প জাতীয় মাছ চাষ কম করে চিংড়ি চাষ বেশি করবো। খামার কর্তৃপক্ষ যদি সঠিক পরামর্শ দেয় তাহলে আমি আশাবাদী চিংড়ি চাষ আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিবে।

সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি এলাকার চিংড়ি চাষী আব্দুর রশিদ বলেন, আমি ১৯৯৩ সাল থেকে চিংড়ি চাষ করে আসছি। কিন্তু ভালো ফলাফল করতে পারি নাই। ২০১৮ সালে কুড়িগ্রাম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ব্যবস্থাপক মূসা কালিমুল্লার সঠিক পরামর্শে চিংড়ি চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখতে পারছি। আমার নিজস্ব হ্যাচারীতেও চিংড়ি উৎপাদনে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, কুড়িগ্রামের পানি, মাটি ও আবহাওয়া চিংড়ি উৎপাদনের জন্য অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। আমরা স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষে সফলতা পেতে শুরু করেছি। কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আশা করছি আগামী বছরগুলোতে এ জেলায় ব্যাপক হারে গলদা চিংড়ি চাষ শুরু হবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১