আপডেট : ০৯ May ২০১৯
আমরা সচেতন নাগরিকরা দাবি করে থাকি, সমস্ত অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হোক, ফুটপাত দখলদারদের নিশ্চিহ্ন করা হোক। যখন করা হয়েছে এরূপ সান্ত্বনাবাণী শুনি, গর্বে বুক ভরে যায়, স্বস্তির নিঃশ্বাস নিই প্রাণভরে, যাক দেশটা তবে এগুচ্ছে। কিন্তু কখনো কি ভেবেছি, আগাছা পরিষ্কারের নাম করে আমরা কত পরিবারের বুকে লাথি মারছি? কত মানুষের সংসার ভাঙছি? কতজনের আহার কেড়ে নিচ্ছি? নাহ, আমাকে অসুস্থ মস্তিষ্কের ভাববেন না, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ওরা অপরাধী। কিন্তু আমরাও কি কম অপরাধী? ওদের ফুটপাতে বসে অবাধে ব্যবসায় করার সুযোগ কে দিয়েছে? যত্রতত্র হকারদের অবাধ বিচরণের সুব্যবস্থা কারা করেছে? প্রতিদিন ওদের থেকে চাঁদা তুলে নিজেদের পেট চালায় এদেশের চাঁদাবাজরা, প্রকৃত অর্থে এই চাঁদাই রাজনীতির একটি শক্তি। আজ যাদের অবৈধ বলে গলা ফাটাচ্ছি, তাদের কাছে স্বভাবতই একটা প্রশ্ন রাখব, ওরা যখন ফুটপাত দখল করে নেয়, তখন পুলিশ কী করে? রাজনীতিবিদরা কী করেন? আমাদের ভূমিকা কী? একবার সাভারের এক লোকাল মার্কেটে গিয়েছিলাম কিছু কেনাকাটার জন্য। রাস্তার ধারে এত পরিমাণ হকার দখল করে বসে আছে, হাঁটতে গেলে সরাসরি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। ফুটপাতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই, উপরন্তু লোকে লোকারণ্য। একটু সস্তায় পাওয়া যাবে, এই কারণে পথচারীদের নিদারুণ ভিড়। ঠেলেঠুলে অনেক কষ্টে ভেতরে ঢুকলাম, অর্ধেক কেনাকাটাও করেছি, হঠাৎ একটি ধ্বনি ভেসে এল বাইরে থেকে, ‘পুলিশ পুলিশ!’ মার্কেটের দোকানিরা তাদের মন মিটিয়ে রাস্তার হকারদের বেশ গালাগাল করে কিছুক্ষণ, রীতিমতো চ-বর্গীয়। বাইরে বেরুলাম, শুনলাম পুলিশ এসেছে, উচ্ছেদ করছে সব, মুহূর্তেই পুরো মার্কেটে শুরু হলো তাণ্ডবলীলা। আমি সত্যি বলতে এরকম মুমূর্ষু আর্তনাদ আর কখনো দেখিনি। এ যেন জীবিকার ওপর রক্ষকদের অপ্রত্যাশিত থাবা। আমি কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়াই, মানুষ দেখি, বিবেক দেখি। এই অসহায় (হ্যাঁ, আমি এই মুহূর্তে তাদের অসহায়ই বলব) মানুষগুলোরও তো পরিবার আছে, তাদের ছেলেমেয়ে আছে। যদি ফুটপাত দখলের সময় এই কঠোরতা দেখাতে পারতাম, অন্তত আজকের এই করুণ দৃশ্যটা এভাবে দেখতে হতো না। আমি সাধারণত লেখালেখি করি মোবাইল ফোনে। এই এখন যে লেখাটি লিখছি, তা সেদিন ছোট আকারে ফেসবুকের জন্য ফোনে টাইপ করছি আর বাসে করে যাচ্ছিলাম বাইপাইল থেকে আবদুল্লাহপুর, জামগড়া ফ্যান্টাসির পর থেকে আশুলিয়া বাজার পর্যন্ত অস্বাভাবিক জ্যাম, রাস্তার এপাশে-ওপাশে পিপীলিকার সারির মতো অসংখ্য বাস জ্যামে আটকা। টানা দুই ঘণ্টা ধরে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ। সামনে পাশে কিছুই নড়ছে না চড়ছে না। কেবল হর্নের পর হর্ন। কানের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে। মেজাজ প্রচণ্ড রকমের খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। আমরা চুপচাপ বসে থাকতেই যদি এই অবস্থা হয়, ড্রাইভার বা হেলপাররাও তো মানুষ, তাদেরও মগজ যে গরম হতে পারে, এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। খানিক পরে গাড়িগুলো যখন একটু একটু করে চলতে শুরু করেছে, হঠাৎ পাশের এক ফাঁকা স্থান দিয়ে গাড়িটি দিল ঢুকিয়ে। এটা স্পষ্টতই একটি অপরাধ, এবং এটা জ্যাম তৈরির আরো একটা কারণ বটে। তবু একটু তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানোর আকাঙ্ক্ষায় যাত্রীদের কেউ কোনো প্রতিবাদ করছে না, গলির মতো রাস্তা দিয়ে ছুটছে বাস, কিছুটা খাদে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তো আছেই, একটু বয়স্ক ও বয়সে বেশি তরুণরা মাঝেমধ্যে কেবল বলছে, ‘একটু দেখে চালা, আমগো মারিস না।’ গাড়ি চলছে গাড়ির মতো, ড্রাইভার চলছে বিমানের মতো। হঠাৎ নিরাপত্তা বাহিনী গাড়ি আটকাল, গাড়িতে উঠলেন তারা, চালক ভুল স্বীকার করে পা ধরে মাফ চাইল, যাত্রীরাও অনুরোধ করলেন এবারের মতো ছেড়ে দিতে; কিন্তু তিনি ছাড়বেন না। কিছু যাত্রীও নেমে গেল এই ফাঁকে ভাড়া পরিশোধ না করে। সামনে আর কোনো পথ না দেখে, গাড়ির কন্ডাক্টর সেই লোকটির (পুলিশ) সঙ্গে হ্যান্ডশেক করলেন আর তিনিও সবাইকে অবাক করে দিয়ে নেমে গেলেন। এটা বাংলাদেশের আহামরি কোনো ঘটনা নয়, বরং নিত্যনৈমিত্তিক এক পরিহাস। আমরা বাইরে বেরুলেই এসব অরাজতা বারবার আমাদের চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায়। লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ, জামালপুর
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১