বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৩ April ২০১৯

গ্যাস নেটওয়ার্কের নামে ৩৫০ কোটি টাকা গচ্চা

গ্যাস নেটওয়ার্কের নামে ৩৫০ কোটি টাকা গচ্চা সংগৃহীত ছবি


গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক নির্মাণের নামে সরকারের ৩৫০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মূল সোর্স লাইনে গ্যাস না থাকার পরও বিতরণ নেটওয়ার্ক নির্মাণের নামে প্রকল্প প্রণয়ন করে তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। জ্বালানি বিভাগ এবং একনেককে ভুল বোঝাতে সক্ষম হন এসব কর্মকর্তা। পেট্রোবাংলার এক তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক পরিকল্পনা মো. আইয়ুব খান চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এই সাত কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে। দায়ীদের মধ্যে এক কর্মকর্তা পেট্রোবাংলার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন। অন্য এক কর্মকর্তা সেকেন্ড হোম হিসেবে বেছে নিয়েছেন মালয়েশিয়া। একজন অবসরে গেছেন অন্যরা এখনো চাকরি করছেন পেট্রোবাংলাতে। জ্বালানি বিভাগ বলছে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য নীতি ঘোষণা করেছে। ফলে দুর্নীতির অনুসন্ধান জোরদার করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের দুর্নীতি অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি করা হলেও বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কীভাবে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা দেওয়ার পরও সেই কর্মকর্তারা একই সংস্থায় কাজ করে যাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে যে সাত কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে তারা হলেন, উপ-মহাব্যবস্থাপক কামাল উদ্দিন। তিনি অবসরে গেছেন। এএসএম আকবর কবীর তিনি এখন বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির সময় তিনি ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসএম রেজাউল ইসলাম প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন। এখন তিনি মহাব্যস্থাপক হিসেবে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের দফতরে সংযুক্ত রয়েছেন।

এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কারণে তাকে পদায়ন করা হয়নি। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) এলএনজি সেলের উপ-মহাব্যবস্থাপক কাজী আনোয়ারুল আজিমকেও তদন্তে দায়ী করা হয়েছে। তিনি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করার সময় উপ-ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক রানা জাকি হোসেন, পেট্রোবাংলার এলএনজি সেলের ব্যবস্থাপক আবুবকর এবং চাকরি ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়া শেখ মো. এজাজকে দায়ী করা হয়েছে। প্রকল্পর কাজের সময় তিনি সহকারী ব্যবস্থাপক (ক্রয়) হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন।

তদন্ত কমিটি তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াতে গ্যাস বিতরণ করার জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। একনেকে উল্লিখিত প্রকল্প প্রস্তাব এবং পরবর্তীতে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে গ্যাসের সোর্স লাইনে গ্যাস না থাকা এবং এসব জেলায় গ্যাসের গ্রাহকের সঠিক প্রাক্কলন করা হয়নি।

প্রকল্প অনুমোদনের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরকার এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ‘মিসগাইড’ করেছে। তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ ১.১ এ বলা হয়, ২০১০ এ শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ ২০১৫ সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ছয় বছর ধরে কেবল প্রকল্পের লাইন পাইপ এবং অন্য মালামাল ক্রয় করা হয়। প্রকল্পের কাজ সন্তোষজনক না হওয়াতে প্রকল্পটি অসম্পূর্ণ রেখেই তা সমাপ্ত করে দেওয়া হয়। এরপরই কেন প্রকল্পের কাজ শেষ হলো না তা অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় পেট্রোবাংলাকে।

তদন্তে দেখা গেছে ৬ বছর ধরে শুধু কেনাকাটার মধ্যেই ছিল দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বাস্তবে কোথাও এই পাইপলাইন তারা বসায়নি। কীভাবে একটি প্রকল্পের কাজে এ বিশৃঙ্খলা দেখা দিল কেন, তা পর্যবেক্ষণ করল না পেট্রোবাংলা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, অবাস্তব প্রাক্কলন ধরে কীভাবে এত বড় একটি প্রকল্পের কাজ দেওয়া হলো বিষয়টি পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা পরিদফতরের কাছে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তারা জানিয়েছে প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির পর একনেকে ওঠার আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অনুরোধে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষমতা এককভাবে সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে সব দায় গিয়ে পড়ে সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির।

প্রকল্পটির মূল প্রস্তাবে ৫৩০ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে এরপর ২০১৩ সালে সংশোধন করে ৬০০ কোটি এবং ২০১৫ সালে সংশোধন করে যা ৯৪৩ কোটিতে উন্নীত করা হয়। যা কোম্পানি, পেট্রোবাংলা এবং মন্ত্রণালয় অনুমোদনও করছে। প্রথম ডিপিডিতে ২০১১ সালে বলা হয়েছে দৈনিক গ্যাস ব্যবহারের লক্ষ্য শুরুতে ৫৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট দেখানো হয়। সংশোধিত ডিপিডিপিত ২০১৩ সালেও দেখানো হয় ৫৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট আর ২০১৫ সালে এসে কমিয়ে করা হয় ১৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। পাইপলাইনের যে সক্ষমতা তার চেয়েও গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ বেশি দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সোর্স লাইন আদৌ এই গ্যাস পাবে কি না, তা সমীক্ষা করা হয়নি।

পাঁচ বছরে ২ থেকে ৫ ইঞ্চি ব্যাসের ৮৪৫ কািলোমিটার লাইন পাইপ আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোন পাইপলাইন বসানো হয়নি। বলা হচ্ছে প্রকল্পর মালামাল সংগ্রহ, নদী অতিক্রম করে পাইপলাইন বসানো, জমি অধিগ্রহণ কাজে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যার কোনো রিটার্ন নেই। যেহেতু প্রকল্পটি ঋণ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে তাই এখন পর্যন্ত পরিশোধযোগ্য সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটি টাকা, যা ক্রমেই বাড়ছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১