আপডেট : ০৬ April ২০১৯
বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে তাঁতশিল্পের নাম। বিলুপ্ত মসলিন, ঢাকাই জামদানিসহ উন্নতমানের বিভিন্ন কাপড় তৈরি হয়েছে তাঁতশিল্পের হাত ধরে। সময়ের ব্যবধানে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কমে আসছে হস্তচালিত তাঁতের আবেদন। বসেছে বিদ্যুৎচালিত পাওয়ার লুম। স্থাপন করা হয়েছে বস্ত্র খাতের অত্যাধুনিক কারখানা। এত কিছুর পরও অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদার ৪০ ভাগ জোগান দিয়ে আসছে তাঁতশিল্প। তবে ভালো নেই এ খাতের উদ্যোক্তা ও কর্মীরা। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বিপুলসংখ্যক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অনেক তাঁতশিল্পী অন্য পেশায় চলে গেছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তাঁতশুমারি-২০১৭ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত শুমারির প্রাথমিক ফল সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বিবিএস। এতে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে দেশে মোট ২ লাখ ১২ হাজার ৪২১টি তাঁত ছিল। ২০০৩ সালে সংখ্যাটি নেমে আসে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২-এ। ২০১৮ সালে পরিচালিত জরিপে দেশে তাঁত পাওয়া গেছে ১ লাখ ১৬ হাজার। এ হিসাবে ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত হারিয়ে গেছে ৯৬ হাজার ৪২১টি তাঁত। এর মধ্যে গত ১৫ বছরে বন্ধ হয়েছে সাড়ে ৬৭ হাজার তাঁত। শুমারির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে তাঁতের সংখ্যা কমে আসার পাশাপাশি কমছে এ খাতে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যাও। ২০০৩ সালে সর্বশেষ তাঁতশুমারি অনুযায়ী দেশে তাঁত শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে দেশের প্রায় ১৩ লাখ ২৭ হাজার নারী-পুরুষ কর্মরত ছিল। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা কমে এসেছে ৩ লাখে। শুমারি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুটির শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে হস্তচালিত তাঁতের পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তাদের জন্য ভিন্ন বাজার তৈরি করতে হবে। দক্ষ শ্রমিকদের ধরা সম্ভব না হলে ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই শিল্প। এজন্য নীতি নির্ধারকদের পরিকল্পনা প্রণয়ে এই শুমারির ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। হস্তচালিত তাঁতশিল্প ছোট হয়ে আসার আরো কারণ উঠে এসেছে প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়েছে, কালের বিবর্তনে পাওয়ার লুম বা কলের তাঁত ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই খাতে বড় বড় শিল্পায়ন হচ্ছে। ফলে হস্তচালিত তাঁতিরা পিছিয়ে পড়েছে। হস্তচালিত তাঁত এখন আর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। শতকরা ৯৯ ভাগ হস্তচালিত তাঁত পারিবারিকভাবে উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া এই শিল্পে মূলধনের অপর্যাপ্ততা ও বাজারজাত করার সমস্যা রয়েই গেছে। এতে আরো বলা হয়েছে, নতুন প্রজন্মের মধ্যে হস্তচালিত তাঁতকে পেশা হিসেবে নেওয়াটা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ফলে এই পেশায় দক্ষ জনবলের অভাবও রয়েছে। এবারের শুমারিতে এমন চিত্র উঠে এসেছে। ১৯৯০ সালে ৫৫ ভাগ পুরুষ এই শিল্পে থাকলেও ২০১৮ সালে এই হার ৪৪ ভাগে নেমে এসেছে। অবশ্য নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ৪৪ ভাগ থেকে ৫৭ ভাগে উন্নীত হয়েছে নারীদের অংশগ্রহণ। দেশে অর্ধেকের বেশি হস্তচালিত তাঁত রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ভৌগোলিক পরিবেশ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতায় তারা এ শিল্প টিকিয়ে রেখেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁতশুমারির প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এবারের শুমারিটি কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। শুমারিতে তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার চিত্র তুলে আনা হয়েছে। শুমারির প্রাথমিক ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। তিনি আরও বলেন, তাঁতশিল্পে নিয়োজিত লোকসংখ্যার প্রকার, তাঁতিদের সমস্যা, মূলধন, বিপণন ব্যবস্থা, তাঁতশিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, সর্বোপরি জাতীয় অর্থনীতিতে এ শিল্পের সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ এবং দেশের তাঁত খাত সম্পর্কিত একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ তথ্যভাণ্ডার সৃষ্টির লক্ষ্যে শুমারিটি পরিচালনা করা হয়। প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাট, ভোলা, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলায় এবার কোনো তাঁত বা তাঁতি পাওয়া যায়নি। সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ২২৪টি তাঁত রয়েছে রাঙামাটি জেলায়। সারা দেশের এক-তৃতীয়াংশ তাঁত রয়েছে জেলাটিতে। একই অঞ্চলের খাগড়াছড়িতে রয়েছে ১৮ হাজার ১১৬টি তাঁত। ১৬ হাজার ৮৩০টি তাঁত নিয়ে বান্দরবানের অবস্থান তৃতীয়। এ ছাড়া কুষ্টিয়ায় ১০ হাজার ৬৫৬টি, সিরাজগঞ্জে নয় হাজার ৭৬৬টি তাঁত রয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলায় ২২৫টি কারখানা পাওয়া গেছে যেখানে বাণিজ্যিকভিত্তিতে হস্তচালিত তাঁত ব্যবহার হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে রয়েছে তিন হাজার ৯৪৪টি তাঁত। বগুড়ায় তিন হাজার ৩৭৫টি, টাঙ্গাইলে তিন হাজার ২৯০টি, পাবনায় দুই হাজার ৮৩৩টি, মৌলভিবাজারে দুই হাজার ৪৯১টি, ঝিনাইদহে এক হাজার ৮৯৯টি, ঢাকায় এক হাজার ৩৮১, রাজবাড়িতে এক হাজার ২৫৭টি এবং নরসিংদীতে এক হাজার ১২৮টি তাঁত রয়েছে। টাঙ্গাইলে ২৪৭টি ও নরসিংদীর ২৫টি শিল্পে হস্তচালিত তাঁত ব্যবহার হচ্ছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১