আপডেট : ০৩ April ২০১৯
নারীদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সব সমাজে মাত্রাভিন্নতায় নির্যাতন ছিল, আছে এবং আরো অনেক দিন থাকবে তা নিয়ে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু এই নারীদের হাতেই পুরুষও নির্যাতিত হয়। যদিও এর মাত্রা, ধরন, প্রেক্ষিত ভিন্ন। পাষণ্ড-দুর্বৃত্ত স্বামীর হাতে স্ত্রীরা যেমন প্রহার, লাঞ্ছনা, নিগ্রহের শিকার হন তেমনি স্ত্রীর হাতে পতি নিপীড়নের দৃষ্টান্তও কম নয়। এমনই নির্যাতিত ও ভুক্তভোগী অনেকের অনুরোধে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই লেখাটির সূত্রপাত। একজন মানুষের জীবনে কয়েক রকমের নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে পারে। কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ দৈহিক-আর্থিক, আবার কেউ সামাজিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। পাশাপাশি শাসন-শোষণের শিকার হয়ে ঘরে-বাইরে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। সাম্প্রতিককালে দেশের নানা প্রান্তে স্ত্রীর অত্যাচারে বেশ কয়েকজন স্বামীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের তরুণ সম্ভাবনাময় ডাক্তার আকাশের আত্মহত্যা তারই উদাহরণ। ইদানীং ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে, পারিবারিক বন্ধনের অভাবে এবং নারীর ক্ষমতায়নের ফলেই বেশিরভাগ নারী বিয়েকে ‘দাসত্ব’ মনে করছে। ফলে ভাই-বোনসহ তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে স্বামীর বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা, অতিমাত্রায় চাহিদা তৈরি করে আর্থিক চাপ প্রয়োগ, অতিরিক্ত যৌন চাহিদা, সামাজিক কর্মকাণ্ডের নামে ক্লাব-পার্টিতে যাতায়াত, গভীর রাতে বাসায় ফেরা, সিগারেট-ইয়াবার মতো মাদকাসক্তি, একাধিক ছেলেবন্ধুর সঙ্গে ফোনালাপ ও মেলামেশা, পরকীয়া, সন্তানকে অবহেলা করার মতো ঘটনাগুলো পুরুষদের স্ত্রীর দ্বারা নির্যাতনের কথাই বলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লোকলজ্জার ভয়ে এবং সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে পুরুষেরা স্ত্রীর অনেক অন্যায় দাবি মেনে নিলেও সমাজে পুরুষ নির্যাতন কিন্তু কমেনি। বরং কথায় কথায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কিংবা যৌতুকের মামলা করে জেল খাটাবো’— এই প্রচলিত হুমকি দিয়ে স্ত্রীরা তাদের অন্যায় আবদার পূরণে পুরুষদের বাধ্য করে চলেছেন। দু-চারটি পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ পেলেও লোকলজ্জার কারণে অসংখ্য-অগণিত ঘটনা চোখের আড়ালে রয়ে যায়। এরকম ক্ষেত্রে পুরুষরা একেবারে অসহায়। ফলে ক্রমাগত স্ত্রীদের এই অনৈতিক ও সমাজবহির্ভূত অন্যায় আচরণ দিন দিন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকের ক্ষেত্রে দেনমোহরের অঙ্ক যদি অনেক বড় থাকে, তখন পুরুষরা চাইলেও বিয়েবিচ্ছেদও ঘটাতে পারছেন না। শত শত নির্যাতিত পুরুষ আইনজীবীদের কাছে যান স্ত্রীর অত্যাচারের ব্যাপারে আইনে কোনো সুযোগ আছে কি-না তা জানতে। কিন্তু আইনজীবী এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন তাদের নিরাশ করে ফিরিয়ে দেয়। বর্তমান সময়ে যেভাবে সমাজে নারী ও শিশু আইনে মামলা করে জেল খাটানোর ভয় দেখিয়ে পুরুষ নির্যাতন করার পাশাপাশি স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে ডিভোর্স প্রদানের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। একসময় নারীকে অবহেলিত মনে করা হলেও বর্তমানে নারী-পুরুষ সমান অধিকার দাবি তুলে নারীরা নিজেদের নানা রকম অন্যায় কর্মকাণ্ডকে বৈধ বানাতে আইনের অপব্যবহার করে চলেছেন। এদেশে পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধে সুনির্দিষ্টভাবে নেই কোনো আইন। নারী ও শিশু নির্যাতনে পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল তৈরি হলেও পুরুষদের জন্য নেই একটিও। ফলে ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেওয়াটা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে। আমাদের সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ নং অনুচ্ছেদে নারীর অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে নারীর সুরক্ষার জন্য দেশে একাধিক আইন রয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০, অ্যাসিড নিরোধ আইন-২০০২, পারিবারিক সহিংসতা ও দমন আইন-২০১০, যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নারীর সুরক্ষার জন্য আইনগুলো তৈরি হলেও বর্তমানে এই আইনগুলোকে কিছু নারী পুরুষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আসলে আমরা পরিবারে কর্তৃত্ববাদী পুরুষতন্ত্র হটিয়ে কি কর্তৃত্ববাদী নারীতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই? আর যদি তা না চাই তবে নারী ও পুরুষের সাম্যতা বা সমঝোতা কীভাবে আসবে তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। বাস্তবতা এমনই, অপরাধীরা আমাদের সমাজে পার পেয়ে যায় আর সঠিক বিচারের অভাবে ডুকরে কেঁদে মরে মানবতা। বিশ্বের অনেক দেশের মতো ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও ঢাকায় ‘পুরুষ রক্ষা আন্দোলনে’র সূচনা করেছে ‘বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়নের পর থেকেই যৌতুকের কারণে মারধরের মিথ্যা মামলায় আদালত উপচে পড়ছে। প্রশাসনও এই সুযোগে পুরুষদের দুর্বলতাকে পুঁজি করে নাজেহাল করে থাকে। ফলস্বরূপ অনেকেই পাচ্ছেন বিভিন্ন মেয়াদে জেল, জরিমানার মতো কঠিন শাস্তি। যে বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় নারীবাদী ও আইন সহায়তা দেওয়া বিভিন্ন সংগঠন, এমনকি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোও বলে আসছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরছে। কিন্তু এ ক্ষত বা প্রদাহের উপশম হচ্ছে না। তবে সবই যে মিথ্যা মামলা তাও কিন্তু নয়। তাই বারবার এসব আইন সংশোধনেরও দাবি উঠছে। কিন্তু আইন সংশোধনটি যদি বাস্তবতা উপেক্ষা করে তৈরি হয় তবেই লবডঙ্কা। নারীরা বর্তমানে আর অবলা নয়। এদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকারসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও নারী। সুতরাং এ অবস্থায় এগিয়ে যাওয়া এই নারীদের জন্য বিশেষ আইন থাকলেও পুরুষদের জন্য বিশেষ আইন করতে বাধা কোথায়? নারী নির্যাতনের মতো পুরুষ নির্যাতন আইন প্রণয়ন করে নারী-পুরুষের মাঝে সত্যিকারের বৈষম্য দূর করতে সরকারকে আরো সচেষ্ট হতে হবে। নির্যাতন যাদের ওপরই হোক না কেন, তা সমাজ কিংবা ব্যক্তিজীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। ঢাকার নিম্ন আদালতপাড়া অর্থাৎ জেলা ও দায়রা জজ এবং ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে নারীর হাতে পুরুষের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের শেষদিকে মানববন্ধন এবং সমাবেশও হয়েছে। কিন্তু এসব সমাবেশ, এসব ক্রন্দন আসলে সমাজের মাত্রাজ্ঞানহীন সংস্কৃতির ভারসাম্যহীন চর্চায় হারিয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রী একত্রে সংসার করতে হলে সমহারে তা করতে হবে। ভালোবাসায় মান-অভিমান থাকবে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের স্বাধীনতায় হাত দেবেই। কিন্তু এই স্বাধীনতা হরণ যেন খুব বেশি মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। জাতীয় সংসদে বেশ আগেই সাংসদ হাজী সেলিম এবং আরো একজন সাংসদ ‘পুরুষ নির্যাতন দমন আইন’ প্রণয়নের দাবি তুলেছিলেন। নারী নির্যাতনের বিপক্ষে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সোচ্চার হলেও দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা গেছে, পুরুষ নির্যাতনের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করে নারীবাদী সংগঠনগুলো। তাই নারী বা পুরুষের জন্য আলাদা অধিকার নয়- চাই সমান অধিকার। সর্বত্র সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ আইন থাকলে পুরুষের জন্যও পৃথক বিশেষ আইন এখন সময়ের দাবি। সচেতন মহলেরও দাবি, নারী নির্যাতনের পাশাপাশি তৈরি করা হোক পুরুষ নির্যাতন দমন আইনও। আর এর মাধ্যমে দূর করা হোক নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য। লেখক : প্রকৌশলী
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১