আপডেট : ০২ April ২০১৯
দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে, কর্মসংস্থান তৈরি করতে এবং মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে নিতে আট সূচকে সরকারের সুনজর জরুরি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই আটটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী হবে। ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশের কাতারে উঠে আসবে। অবশ্য সরকারের সূত্র বলছে, নতুন মেয়াদে দায়িত্ব দিয়ে সরকার-বেসরকারি খাতকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে গতিশীল করতে চায়। এজন্য যা যা করা দরকার সব করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি সরকারের অন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ শুরু করেছেন। গত রোববার দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে শিল্প মেলা। সপ্তাহব্যাপী এই বড় আয়োজনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা তো বেসরকারি খাতকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিয়েছি। বেসরকারি খাতকে আমাদের সংবিধানেই স্বীকৃতি দেওয়া আছে। আমি সরকারে আসার পর বেসরকারি খাতটা সবচেয়ে বেশি উন্মুক্ত করে দিয়েছি। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের একটা সার্বিক হিসাবে আছে দেশে ৭৮ লাখের মতো শিল্প-কারখানা বেসরকারি খাতে আছে। প্রতিবছর সেখানে যদি একটা মানুষ কাজের সুযোগ পায় তাহলে ৭৮ লাখ লোক তো কাজ পেল। সরকার মনে করছে, দেশ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলে ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে পিছিয়ে থাকবে কেন। এ ক্ষেত্রে কবে, কতটা এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়েই সরকারে চিন্তা। তাই বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডাকে দেখাশোনা করার জন্য সালমান এফ রহমানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক একটি দেশের ব্যবসার পরিবেশ কেমন তার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে প্রতিবছর ইজ অব ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম অবস্থানে। আগের বছরের চেয়ে উন্নতি হয়েছে মাত্র একধাপ। যুদ্ধবিধস্ত দেশ আফগানিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ১৬৭তম অবস্থানে চলে গেছে। এ সূচকে ২০০৮ সালেও ১১৫তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। এরপর শুধু পিছিয়েছে। ২০১৬ সালে সরকার সহজে ব্যবসা সূচকে উন্নতির জন্য বিশেষ উদ্যোগ হাতে নেয়। ওই বছর ১৯ নভেম্বর সোনারগাঁও হোটেলে সচিবদের নিয়ে এক সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম এ সূচকে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দুই অঙ্ক, অর্থাৎ কমপক্ষে ৯৯তম অবস্থানে নিয়ে আসার লক্ষ্যের কথা জানান। সূত্রগুলো বলছে, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় তারা আটটি সুনির্দিষ্ট সূচকে সরকারের মনোযোগের কথা বলেছে। তারা ব্যবসার পরিবেশ, বিনিয়োগে গতি তৈরি করতে মূলধন জোগান, বিদ্যমান অবকাঠামো পরিস্থিতির উন্নতি, টেকসই নগরায়ন, রফতানি বহুমুখীকরণকে সহায়তা, তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধিকে নীতিগত সহায়তা, ব্যবসায়ের জন্য কর কাঠামো সংস্কার এবং ব্যাংকি খাতের উন্নয়ন সরকারের স্পষ্ট পদক্ষেপ। জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, আমাদের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২৭৪ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত বছর বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ২ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোতে আমরা স্বস্তিতে আছি। তবে বেসরকারি খাতের গতি আনতে কিছু বিষয় অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকার ও সরকারের বিভিন্ন বাস্তবায়নকারী সংস্থার সঙ্গে বৈঠক ও সভা চলছে। আমরা মনে করি চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করলে আমরা অনেক এগিয়ে যাব। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, সরকার আগামী ৫ বছরে জিডিপির ৩৭ শতাংশ বিনিয়োগ নিয়ে যেতে চায়। এটি অর্জন করা সম্ভব হবে। অপরদিকে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। এজন্য আমরা নির্বাচনের আগে অবস্থান নিয়েছিলাম সরকারের ধারাবাহিকতায়। আশা করি, সরকারের পদক্ষেপে বেসরকারি খাত আরো গতি পাবে। প্রসার লাভ করবে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, দেশে শিল্পায়নে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ। সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও সুদ কেন কমছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যবসায়ীরা ঢাকায় মানুষের চাপ কমাতে প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাইরে নেওয়ার দাবি করছেন। এজন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে। ঢাকার জন্য একটি পরিবহন পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার দাবি করেন ওসামা তাসীর। বেসরকারি খাতের জন্য করপোরেট করহার কমানো দরকার বলে ঢাকা চেম্বার মনে করে। তবে অব্যাহতি পাওয়া অর্থ বিনিয়োগ করে ব্যবসায়ের উন্নয়ন করতে হবে। আগামী অর্থবছরে করহার ৭ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে করহার ১০ শতাংশ কমানোর পক্ষে ব্যবসায়ী। সম্প্রতি সালমান এফ রহমান এক অনুষ্ঠানে বলেন, জিডিপি, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি, মাথাপিছু আয়সহ অর্থনীতির সূচকগুলোতে আজকের যে উন্নতি তা ১০ বছর আগে কল্পনাও করা যেত না। এটা সম্ভব হয়েছে কেবল প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় নেতৃত্বের কারণে। প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন নতুন সরকারের এই মেয়াদের মধ্যেই যেন আমাদের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে পৌঁছে যায়। বেসরকারি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে এই লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছেন তিনি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১