বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০১ April ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা চায় বিপিএমএ

গ্যাসের দাম ও কাগজ শিল্পের সঙ্কট

কাগজ শিল্প সংরক্ষিত ছবি


দেশীয় কাগজ শিল্প টিকিয়ে রাখার স্বার্থে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ‘অযৌক্তিক’ ও ‘অপরিণামদর্শী’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ)। সংগঠনটি এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা চেয়েছে।

বিপিএমএ’র পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়েছে, আপনার (প্রধানমন্ত্রী) তীক্ষ মেধা, বিচক্ষণতা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং দক্ষ পরিচালনায় সরকারের বিগত দুই মেয়াদে ব্যবসাবান্ধব নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের বহুমাত্রিক উন্নয়নের মডেল আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি বলেছে, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার দূরদর্শী নেতৃত্বাধীন জনদরদি সরকার দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে চলতি মেয়াদে আরো কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তবে আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষের আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আবারো গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিদ্যমান দামে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো মুনাফা করা সত্ত্বেও বিইআরসি’র কাছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব করেছে, তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে আমরা মনে করি। সারা বিশ্বে জ্বালানির দাম কমলেও বাংলাদেশে গ্যাসসহ সব রকম জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত তিন বছরে গ্যাসের দাম ১৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বার বার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে। এমনিতেই বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাবে শিল্প খাতে ব্যয় উত্তরোত্তর বাড়ছে। তার ওপর গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে কাগজসহ দেশের সব শিল্প খাতের বিকাশ রুদ্ধ হবে, যা মোটেই কাম্য নয়। অযৌক্তিকভাবে দফায় দফায় দাম বাড়ানো হলে শিল্প খাতের উৎপাদন-ব্যয় বাড়বে, যার আর্থিক চাপ চূড়ান্তভাবে গিয়ে পড়বে ভোক্তাসাধারণের জীবনযাত্রায়। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এই উদ্যোগ সার্বিকভাবে দেশের শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কাগজ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাত। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পরিবেশবান্ধব কাগজ শিল্প আমদানি বিকল্প ও রফতানিমুখী শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। বর্তমানে দেশের ১০৬টি পেপার মিল বছরে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন করতে সক্ষম। এর মধ্যে ৮ লাখ মেট্রিক টন অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত কাগজ বিদেশে রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। বর্তমানে ৩০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশের কাগজ রফতানি হচ্ছে। আমাদের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই পৌঁছে দেওয়ার যে অভাবনীয় সাফল্য, তার মূলে রয়েছে যথাসময়ে দেশীয় কাগজের উৎপাদন ও সরবরাহ। এই খাত প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ এবং পরোক্ষভাবে ৫০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করেছে। দেশীয় কাগজ শিল্পের উদ্যোক্তারা এই খাতে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কাগজ শিল্পকে কেন্দ্র করে দেশে প্রায় ৩০০টির অধিক সহায়ক শিল্প গড়ে উঠেছে। এই শিল্প খাত দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতির বিকাশসহ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু কাগজ উৎপাদনের অন্যতম মূল উপাদান গ্যাস ও বিদ্যুতের অপ্রতুলতা, দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি এবং সংযোগের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতার কারণে কাগজ উৎপাদন ব্যবহূত হচ্ছে। ফলে অসম প্রতিযোগিতার মুখে দেশীয় কাগজ শিল্প ইতোমধ্যে রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম আবার বাড়ানো হলে বিদেশি কাগজ আমদানির ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশীয় মিলগুলো বন্ধ হয়ে স্থানীয় কাগজ শিল্পের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাতে প্রতি টন কাগজের উৎপাদন খরচ বাড়বে ১০-১৫ হাজার টাকা। কাগজ শিল্প বন্ধ হলে এই খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, ব্যাংকঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে এবং লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে।

তাই সংগঠনটির মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। ফলে দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ বিদেশি পণ্য কেনার দিকে ঝুঁকে পড়বে এবং কাগজসহ সব দেশীয় শিল্প গভীর সঙ্কটে পড়বে।

এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানো পদক্ষেপ থেকে সরে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছে বিপিএমএ।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১