আপডেট : ৩০ March ২০১৯
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শিক্ষার্থী মিলে নিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা দীেডার উদ্যোগ। ‘আমার আস্থা’ নামের ওই কর্মকাণ্ডে যে কেউ ঢাকার মধ্যে বাসায় বসেই পাবেন ন্যানি, নার্সিং ও থেরাপি সেবা। ‘আমার আস্থা’ নিয়ে প্রযুক্তিবিষয়ক অনলাইন নিউজ পোর্টাল টেকশহর ডটকমের সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদনের আলোকে বাংলাদেশের খবরের পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটির পুনঃলিখন প্রকাশিত হলো : যেভাবে শুরু : যখন বুয়েটে পড়তেন তখন থেকেই চিন্তা ছিল কিছুটা স্বাধীন জীবন যাপনের। চাননি চাকরি করবেন নয়টা-পাঁচটা সময়। শুধু খুঁজছিলেন সুযোগ। বুয়েটে শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে পাড়ি জমান জার্মানি। সেখানে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে দেশে ফেরেন শরিয়ত রহমান। ২০১৬ সালে জার্মানি থেকে ফিরে একটা মেডিকেল ইকুইপমেন্ট কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। শুরু করেন চাকরি জীবন। তবে সেটা করবেন না বলেও পণ করেন। পরে কাজ বদলিয়ে মেডিকেল অ্যাপ ‘আমার ডক্টর’ নিয়ে দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর কাজ করেন। শরিয়ত রহমান বলেন, আমার ডক্টরে কাজ করতে গিয়ে দেখি, দেশে হোম কেয়ার সেক্টরটি এখনো অবহেলিত। বিশেষ করে ছোট বাচ্চা কিংবা অসুস্থ বয়স্কদের পরিচর্যা করতে গিয়ে চাকরি ছাড়তে হয় অনেক শিক্ষিত নারীকে। তাছাড়া আস্থার দারুণ সঙ্কট রয়েছে এই সেক্টরে। সেজন্য গত ডিসেম্বরে বুয়েটের আরেক সাবেক শিক্ষার্থী আমেরিকা প্রবাসী প্রকৌশলী জাভেদ ইকবাল ভাইকে নিয়ে শুরু করি ‘আমার আস্থা’ নামক হোম কেয়ার সার্ভিস কোম্পানি। দলে যারা : ‘আমার আস্থা’র প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রকৌশলী শরিয়ত রহমান। তার সঙ্গে রয়েছেন সহ-প্রতিষ্ঠাতা আরেক প্রকৌশলী জাভেদ ইকবাল। এ ছাড়া রয়েছেন শারমিন জাহান, ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট হিসেবে। যেভাবে কাজ করে : আমার আস্থার গ্রাহকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেবা পেয়ে থাকেন। গ্রাহক পাওয়া ও তাদের সঙ্গে কাজের পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হয় নিজেদের তৈরি চ্যাটবটের মাধ্যমে। কেউ কেয়ার গিভার চাইলে ‘আমার আস্থা’ ফেসবুক পেজের ইনবক্সে গিয়ে ‘আমার সাহায্যকারী দরকার’ বাটনে ক্লিক করে কয়েকটা অটোমেটিক প্রশ্নের উত্তর দিলে সঙ্গে সঙ্গে সেই উত্তর দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তাদের নির্ধারিত মূল্যে গ্রাহকরা রাজি হলে সার্ভিস প্রোভাইডারদের ক্লায়েন্টের বাসায় নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয় আমার আস্থা। এরপর তিন পক্ষ একমত হলে লিখিত চুক্তি করে কাজের জন্য। এ বিষয়ে শরিয়ত রহমান বলেন, একইভাবে কেউ কাজ করতে চাইলে ফেসবুক পেজের ইনবক্সে গিয়ে ‘আমি কাজ খুঁজছি’ বাটনে ক্লিক করে কয়েকটা অটোমেটিক প্রশ্নের উত্তর দিলে তাকে আমাদের অফিসে দেখা করার অনুরোধ করি। সরাসরি সাক্ষাতের পর তার জাতীয় পরিচয়পত্র, তার স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা ভেরিফাই করি। এরপর তাকে আমাদের গ্রাহকদের বাসায় পাঠানোর জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠাই। যত সেবা ও মূল্য : আমার আস্থা এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সার্ভিস চালু করতে পেরেছে। তবে যেহেতু নতুন, তাই ধীরে ধীরে সেবার পরিধি বাড়ানোর কথা জানান শরিয়ত রহমান। তিনি বলেন, আমরা ঠিক এই মুহূর্তে ন্যানি বা বেবিসিটার সরবরাহ করছি। যারা সপ্তাহে ৬ দিন, দিনে ৯ ঘণ্টা করে সেবা দেবে। এর মূল্য মাসিক হারে সাড়ে ১১ হাজার টাকা।এছাড়াও আয়া বা এটেন্ডেন্ট দৈনিক ১২ ঘণ্টা শিফটের জন্য ৬০০ টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে নার্স সেবা দিতে বিভিন্ন রেট রয়েছে। আর কেউ যদি ফিজিওথেরাপির সেবা নিতে চান তাকে গুনতে হবে প্রতি সেশনে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। শরিয়ত বলেন, ন্যানি ও এটেন্ডেন্ট সার্ভিস আমরা মূলত মাসিক হারে দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে কেই দৈনিক ভিত্তিতে নিতে চাইলেও পারবেন। মাত্র তিন মাসেই বেশ ভালো সংখ্যক ক্লায়েন্টকে সেবা দিয়েছি আমরা। সেবা পাওয়া যাবে যে এলাকায় বর্তমানে সেবাটি পুরো ঢাকায় দিচ্ছে আমার আস্থা। ধীরে ধীরে সারা দেশে তাদের সার্ভিস চালু হবে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। ওয়েবসাইট, অ্যাপ ও ফেসবুকে : তিন মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে ‘আমার আস্থা’র সেবা। তবে এখন পর্যন্ত প্রধানত ফেসবুক নির্ভর সেবাটি। কারণ ফেসবুকের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি সেবা চেয়ে আবেদন এসেছে প্রতিষ্ঠানটির কাছে। কেয়ার গিভারদের জন্য তৈরি করা হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। যেন তারা জরুরি মুহূর্তে প্রয়োজনীয় নাম্বারে কল করতে পারেন সেটিও যুক্ত আছে অ্যাপে। এমনকি ক্লায়েন্ট যেন তার কেয়ার গিভারের রিয়েল টাইম লোকেশন ট্র্যাক করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রয়েছে এই অ্যাপটিতে। এর পাশাপাশি ওয়েবসাইটের (amarastha.com) মাধ্যমেও যে কেউ সেবাগুলো নিতে পারেন। প্রশিক্ষিত ন্যানি ও নার্স : সেবাগুলো যারা পৌঁছে দিচ্ছে তাদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান শরিয়ত। এজন্য ইতোমধ্যে প্রাক্টিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশ ন্যানিদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর বাইরে যেসব নার্স ও আয়া কাজ করছেন তারাও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত। পরিকল্পনা : ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বড় বড় শহরে আমাদের সার্ভিস চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া ন্যায্যমূল্যে হোম কেয়ার মেডিকেল ডিভাইস যেমন, থেরাপি মেশিন, ব্লাড প্রেশার, পালস-অক্সিমিটার, ব্লাড সুগার মাপার মেশিনসহ আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্য যেন সহজেই তারা কিনতে পারেন সেজন্য অনলাইনের মাধ্যমে তা বিক্রি কবে প্রতিষ্ঠানটি। এগুলো সারা দেশে হোম ডেলেভারিও দিতে চায়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ফিজিওথেরাপি সেন্টার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার (বাসায় গিয়ে রক্ত ও ইউরিন কালেকশন করে অনলাইন রিপোর্ট) প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আছে। তারা চান : বাচ্চাকে দেখাশোনার লোক নেই বলে আর যেন কোন মাকে তার চাকরি ছাড়তে না হয়। বাচ্চারা যেন সুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে সে ব্যবস্থা করা। সুস্থ বা যেকোন অসুস্থ মানুষ যেন উপযুক্ত পরিচর্যা পান। প্রয়োজনীয় মেডিকেল ডিভাইস যেন তাদের হাতের নাগালেই থাকে এমন একটা ব্যবস্থা তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছে আমার আস্থা।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১