বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ৩০ March ২০১৯

অভিযুক্তদের শাস্তির নজির চাই


আমরা একটু গভীরভাবে ভাবলেই দেখব, গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া গতির বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার দগদগে স্মৃতি নগরবাসীর মন থেকে মুছে না যেতেই এবার প্রগতি সরণিতে সুপ্রভাত পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষিতে আবরার আহমেদ চৌধুরী নামে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আরেক ছাত্র নিহত হয়েছেন। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালে এ ঘটনার পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী ১২ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন।

সেভ দ্য রোড-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাৎক্ষণিক সেখানে গিয়ে জানতে পারি, ঘটনার দিন সকাল ৭টার দিকে শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিইউপির একটি বাস বসুন্ধরা এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিল। সোয়া ৭টার দিকে আবরার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহনে ওঠার সময় পাশে থাকা গাজীপুরগামী সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। রাজধানী ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কসংলগ্ন প্রগতি সরণিতে বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। আবরার নিয়ম মেনেই পথচারী পারাপারের জন্য নির্ধারিত স্থান জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। নির্মমতার বর্ণনায় উঠে আসে- অন্য একটি বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়েই বাসটি আবরারকে ধাক্কা দেয়। তিনি দুটি বাসের মাঝখানে পড়ে যান। পরে সুপ্রভাত বাসের নিচে চাপা পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, ঘাতক বাসটি আবরারকে চাপা দেওয়ার পর তাকে বেশ খানিকটা রাস্তা টেনেও নিয়ে যায়। এ সময় তার সহপাঠীরা বাসটি আটক করেন। তারা পলায়নরত বাসচালক সিরাজুল ইসলামকে ধরে ফেললেও হেলপার দৌড়ে পালিয়ে যান। তবে বরাবরের মতোই দেখা গেছে, বাসচাপায় সহপাঠীর মৃত্যুর প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে কুড়িল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত ছয়টি জায়গায় অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান বিইউপির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের সঙ্গে নর্থ সাউথ ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষ সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এতে গোটা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে পুলিশ, ওই এলাকার কাউন্সিলর ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন বিকল্প পথে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালায়।

এদিকে নিহত আবরারের নামে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র। এ সময় বিইউপির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী মেয়রের সঙ্গে কথা বলেন এবং লিখিতভাবে ১২ দফা দাবি পেশ করেন। আমরা অতীতেও যেমন দেখেছি, তেমন করেই পরিবেশ শান্ত করার জন্য মেয়র বলেছেন, আগামী দুই কিংবা সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে এ জায়গায় আবরার চৌধুরীর নামে ফুটওভার ব্রিজ করে দেব। আমি পর্যায়ক্রমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামানোর জন্য পার্কিং করে দেব। এ ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাসের মালিকদের সংযুক্ত করা হবে, এ ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়। এ কাজটি আমরা দ্রুত করব। সড়কসংশ্লিষ্ট যতগুলো সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধানে তোমরা আমাদের সঙ্গে থাকো। আমরা একটি একটি করে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে কাজ করব। চালকের বিচার করতেই হবে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ বিচার হবে।’

কোনো কিছুতেই থামছে না মৃত্যুর মিছিল। বিনয় আর ভালোবাসা-শ্রদ্ধা রেখে যে কথাটি না বলে পারছি না, তা হলো সড়কে প্রতিনিয়ত বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালক বা মালিকের উপযুক্ত শাস্তি হয় না। এ ছাড়া নতুন আইনে সরাসরি কঠোর শাস্তির বিধান না থাকায় ড্রাইভারসহ সংশ্লিষ্টরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হলে বেপরোয়া গাড়ি চালানো অনেকাংশে বন্ধ হবে। আর সবাই সচেতন হলে আশিভাগ দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন দেখেছি, ‘নিরাপদ সড়ক’ করার দাবিতে যারা আন্দোলন করে, তারাই সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে। সেভ দ্য রোড প্রতিষ্ঠা করেছি সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলব বলে। আর তাই স্পষ্ট করে বলতে চাই- সড়ক দুর্ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির নজির নেই। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হলে বেপরোয়া গাড়ি চালানো অনেকাংশে বন্ধ হবে। এতে সড়ক দুর্ঘটনাও হ্রাস পাবে। সড়ক পরিবহন আইনে সাজার বিধান নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। আইনের ১০৫ ধারায় বলা আছে, এই আইনে যা-ই থাকুক না কেন, মোটরযান চালাতে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে এ-সংক্রান্ত অপরাধ দণ্ডবিধির-১৮৬০-এর বিধান অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে দণ্ডবিধির ৩০৪(খ) ধারাতে যা-ই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলা করে মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে ওই চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে ১১৪ ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীনে অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হত্যার উদ্দেশ্যে প্রমাণিত হলে তা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০২ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সেভ দ্য রোড সেই স্থান থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত ১০ বছরে স্বেচ্ছায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেভ দ্য রোড-এর সারা দেশে সংগঠিত ১ লাখ ৩২ হাজার সদস্য মনে করে- সড়কপথেই শুধু নয়, আকাশ-সড়ক- রেল ও নৌপথের যে কোনো দুর্ঘটনার বিচার বাস্তবায়ন শুরু হলেই নিরাপদ হবে বাংলাদেশের পথ।

 

লেখক : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ (এনডিবি)

mominmahadi@gmail.com


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১