বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ৩০ March ২০১৯

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স

ঝুলে আছে এক দশক

লে‍াগো ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ছবি : সংগৃহীত


ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সকে স্থানান্তর করে একাডেমিতে রূপান্তর ও ট্রেইনিংয়ের জন্য একটি ফায়ার স্টেশন নির্মাণে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয় ২০০৯ সালে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে বরাদ্দ ও অনুমোদন ছাড়া প্রতিবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) জুড়ে দেওয়া হয় প্রকল্পটি। এরপর প্রায় এক দশক অতিবাহিত হলেও প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উপস্থাপন করা হয়নি। ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মাণের মতো ফায়ার সার্ভিসের বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে। বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ঝুলছে অনুমোদন পাওয়া বেশ কিছু প্রকল্পও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

রাজধানী ঢাকায় উঁচু ভবনে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন দেখা দেয়। বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের উদ্ধার অভিযান সমালোচিত হয়েছে বেশি উচ্চতায় উদ্ধার অভিযান চালাতে না পারায়। অগ্নিকান্ডের শিকার ভবনে ৪০ ফুট উচ্চতায় কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে যন্ত্রপাতি সংগ্রহে নেওয়া প্রকল্পটিও প্রত্যাশিত গতি নেই। ২০১৪ সালে নেওয়া প্রকল্পের আওতায় উঁচু ভবনে আগুন নেভাতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহেরও কথা ছিল। ৫৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যয় হয় ৪১ কোটি ১১ লাখ টাকা। ৭৫ শতাংশ কাজ শেষের পর প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত হয় স্থবির তালিকায়। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এ প্রকল্পে মাত্র ১ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ কোটি আট লাখ টাকা।

চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গতি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটি তারকাচিহ্নিত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সংশোধন না করে  এমন প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পটি বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। ব্যয় না বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর বাড়ালেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় বাড়তি মেয়াদেও এর কাজ শেষ হচ্ছে না।

প্রশিক্ষণ একাডেমি ও অন্যান্য প্রকল্পে ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, রাজধানীর পূর্বাচলে একটি অত্যাধুনিক ফায়ার স্টেশনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এ স্টেশনকে কেন্দ্র করে প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানো হবে। সেখানে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিস ডিজি আরো বলেন, ফায়ার সার্ভিসে বেশ কয়েকটি ধীরগতির প্রকল্প রয়েছে। তবে নতুন দায়িত্ব নিয়ে সবকিছুর খোঁজখবর এখনো নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী জুন মাসে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের বাড়তি মেয়াদ শেষ হচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন ছাড়া এ প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানো সম্ভব হবে না। অবশ্য এ বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাব ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ধীরগতির কারণে সংশোধনীতে প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২৫ উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল যিফেন্স স্টেশন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১১ সালের শুরুতে। কয়েক দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির পর প্রকল্পটির সর্বশেষ সময়সীমা দেওয়া হয় গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ১৬১ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরে নেওয়া প্রকল্পের ব্যয় উঠেছে ৪১৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকায়। সর্বশেষ হিসাবে প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ১৩৬ কোটি ৫ লাখ টাকা।

আইএমইডির হিসাব অনুযায়ী, আট বছরে প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৩২ শতাংশ। এবারের এডিপিতে প্রকল্পটির আওতায় ৭২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থ ব্যয় সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই সংশোধিত এডিপিতে তা নামিয়ে আনা হয় ২৬ কোটি ২০ লাখ টাকায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রকল্পটি শেষ হতে আরো কয়েক বছর লেগে যাবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

অবসরোত্তর ছুটি শুরুর আগের দিন পর্যন্ত প্রকল্পটির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন সরকারের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ বজলুর রহমান। কাজে ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণে জটিলতাসহ বেশ কিছু কারণে প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ হয়নি। এর বাইরে আর কিছু বলতে চাননি এ কর্মকর্তা।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ ১৫৬ উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণে নেওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী জুনে। এক হাজার ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরে নেওয়া প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৭৬৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ৪৯০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও কেটে নিয়ে তা ২১১ কোটি ২০ লাখ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

এ প্রকল্পে সাবেক পরিচালক পিআরএল-এ থাকা মো. আতাউল হক বলেন, ১৫৬ উপজেলার মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় জমি অধিগ্রহণে সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পের যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজ আগেই শেষ হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১