যদিও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন নির্বাচক নন। তারপরও তার ধারণা বা ইঙ্গিত ফেলে দেওয়ার মতো নয়। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ক্রিকেট দল ঘোষণা হতে পারে আগামী ১৮ এপ্রিলের মধ্যে। কারা থাকছেন বিশ্বকাপের দলে, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। অনেকেই নিজস্ব চিত্র তৈরি করে ফেলছেন এ নিয়ে। তবে বিসিবি সভাপতি সাংবাদিকদের সামনে একটা রূপরেখা দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ দল নিয়ে। ধরে ধরে তিনি বলে দিলেন কারা কারা থাকছেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে। হয়তোবা সেটাই কিংবা কিছু পরিবর্তন হয়ে চূড়ান্ত হতে পারে বাংলাদেশ দল।

বিশ্বকাপে দল কেমন হতে পারে- এ প্রশ্ন নয়, বিসিবি সভাপতির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সাত নম্বরে কে থাকবেন তা নিয়ে। তখন বিসিবি সভাপতি কথা বলতে বলতে পুরো দলটাই বলে দিলেন। নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘সাত নম্বরে যদি দেখেন কে কে আছে- সাইফুদ্দিন আছে, মিরাজ আছে, সাব্বির আছে। আবার সৌম্য অনেক সময় নিচে নামতে পারে। কে খেলছে সেটা আমি এখনো জানি না। যদি ধরেন তামিম আর লিটন ওপেন করে তাহলে তিন নম্বরে সাকিবের খেলার সম্ভাবনা খুব বেশি। ও ওখানে খেলতে চায়। চারে তো মুশফিক। পাঁচে মিঠুন বা এ রকম কেউ একজন। ছয়ে রিয়াদ। সাতে তখন সৌম্য আসতে পারে। এছাড়া আছে সাব্বির। এখন সাব্বির আছে, সাইফুদ্দিন আছে। কারণ তিন পেসার তো খেলাবে। মোস্তাফিজ আর মাশরাফি তো কনফার্ম। আরেকটা পজিশনের জন্য রুবেল আছে। তাসকিন আছে। একটা স্পিনার যদি খেলাতে হয় মিরাজকে নিতে হয়। এর বাইরে কী থাকতে পারে। এর বাইরে মোসাদ্দেক থাকতে পারে। আরেকটা পেসার নেওয়ার আমি কোনো কারণ দেখি না। ব্যাটসম্যান হিসেবে সাত-আটের কথা ভাবলে মোসাদ্দেক আসতে পারে। আর তো জায়গা দেখি না। ওপেনার তো অলরেডি তিনজন আছেই। ওখানে চতুর্থ ওপেনার নেওয়ার কারণ নেই। চার-পাঁচ-ছয় বুকড।’

এখানেই পুরো একটি দল দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। দুই ওপেনার তামিম, লিটন, সঙ্গে সাকিব, মুশফিক, মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির/সৌম্য/সাইফুদ্দিন/মিরাজ, মাশরাফি, মোস্তাফিজ, রুবেল/তাসকিন। এখানেই হয়ে গেল ১৪ জন। ১৫ জনের দল করলে সেখানে থাকবে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের নাম।

তাহলে তো বিশ্বকাপে ১৫ জনের দল দাঁড়িয়েই গেল। সুতরাং, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে তাহলে কোনো চমক থাকছে না- প্রশ্ন করা হলো বিসিবি সভাপতিকে। তিনি বললেন, ‘চমকের বিষয় এখানে নয়। আমরা ১৫ জনের একটা দল বানাব। আপনি যদি নামগুলো দেখেন তাহলেই তো বুঝবেন।’

এর পরক্ষণেই আবার পুরো দল ঘোষণা করে দিলেন তিনি। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘তামিম আর দুই ওপেনার। আমি ধরে নিচ্ছি সৌম্য, লিটন খেলে তাহলে তো শেষ (ওপেনার কোটা)। সাকিব, মুশফিক, রিয়াদকে তো আপনি বাদ দিতে পারেন না। তাহলে ছয়জন শেষ। আর আসেন তিনটা ফাস্ট বোলার- তাহলে মোস্তাফিজ, মাশরাফি, রুবেল আছেই। এরপর অন্তত একটা বেশি তো নিতেই হবে। কারণ পেসাররা চোটে পড়ে। তাহলে তাসকিন আর সাইফুদ্দিন চলেই এলো। তাহলে এগারো হয়ে গেল। স্পিনার নিতে হলে মিরাজকে তো নিতে হবে। ১২ জন হলো। মিডল অর্ডারে ব্যাকআপ নিতে হবে, সেখানে মিঠুনের নাম আছে, সাব্বির আছে।’

সুতরাং, নতুন কারো সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তিনি বলেন, ‘এভাবে দেখতে পারেন আর তো সুযোগ নেই। এর বাইরে নতুন কারো সম্ভাবনা খুবই কম। ডোমেস্টিকে যতই ভালো করুক না কেন, হুট করে এসে একদম বিশ্বকাপ খেলে ফেলবে এই সম্ভাবনা খুবই কম।’ অর্থাৎ, প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন সেঞ্চুরি করে এনামুল হক বিজয় যে সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছেন, তাতে তার সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করে দিলেন বিসিবি সভাপতি।

বিসিবি সভাপতির মাথায় ঘরোয়া লিগের বিষয়টাও আছে। বিজয়রা যে ভালো খেলেছেন সেটা তিনিও জানেন। যে কারণে দল তৈরি করতে কিছুটা বেগ পেতে হবে নির্বাচকদের, সেটাও তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন- ‘আমি মনে করি একটা সমস্যা হবে, সেটা ভালো সমস্যা। আগে যেমন দল করা কঠিন ছিল, এখন অনেক অপশন। তারপরও ডোমেস্টিকে...। কারণ ডোমেস্টিকের সঙ্গে আন্তর্জাতিকের অনেক ফারাক। এখন পর্যন্ত যা খেলা হয়েছে, বিজয় পরপর তিন সেঞ্চুরি করেছে, অসাধারণ। তারপর ফরহাদ তো টি-টোয়েন্টিতে সুপার খেলেছে। এরপর জহুরুল ভালো করছে, মোসাদ্দেক ভালো করছে। ইয়াসির রাব্বি ভালো করছে। শান্ত ভালো করছে।’

তবে পেসারদের নিয়ে কিছুটা চিন্তিত বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটাই ঘাটতি, যেটা মনে করছি পেসারদের গতি কম। রুবেলের কিছুটা আছে। সাইফুদ্দিন, মোস্তাফিজের অতটা নয়। তাসকিনের পেস আছে। ও যদি লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে পারে তাহলে ও ভালো অপশন।’

পাপনের চোখে বাংলাদেশ দল : মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, সাইফুদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।