বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৮ March ২০১৯

রাজস্ব ঘাটতিতে সরকার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এন বি আর) ছবি : সংগৃহীত


বড় আকারের রাজস্ব ঘাটতিতে পড়েছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের হিসাব বলছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সাত মাস শেষে রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৩৪ হাজার ৪২৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ সংগ্রহ সরকার ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। সরকার চলতি অর্থবছরে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর থেকে আদায় করতে চায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ। 

সূত্রগুলো বলছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ছয় মাসে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম ছিল। ওই সময় রাজস্ব ঘাটতি ছিল ২৭ হাজার ৯৯৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। জুলাই থেকে ডিসেম্বর শেষে আদায় লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয় ৯৮ হাজার ২৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ছিল ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। জানুয়ারি শেষে ঘাটতির হার কিছুটা বেড়েছে। 

এনবিআর সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ১ লাখ ৫১ হাজার ২০৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বিপরীতে আদায় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৭৭ দশমিক ২৩ শতাংশ রাজস্ব আহরণ হয়েছে। ঘাটতি ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এই সময় আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য থেকে রাজস্ব এসেছে ৩৩ হাজার ৭৭২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এই খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে ঘাটতি ১১ হাজার ৪২৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ২৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সরকার আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য থেকে ৮৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে চায়।

স্থানীয় পর্যায়ের মূসক (মূল সংযোজন কর) থেকে আদায় লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম সাত মাসে আদায় হয়েছে ৪৬ হাজার ২৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রথম সাত মাসে লক্ষ্য ছিল ৬০ হাজার ২০ কোটি টাকা আদায়ের। অর্থাৎ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৯৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। 

আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে আদায় হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৮৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৯৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ঘাটতি ২০ দশমিক ৯৪ শতাংশ বা ৯৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে এনবিআর ১ লাখ ২ হাজার ২০১ কোটি টাকা আদায় করতে চায়।

জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এই আয়ের ৩৫ হাজার ২৯৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আদায় হয় আমদানি রফতানি বাণিজ্য থেকে, স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে ৪৩ হাজার ২০৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে বাকি ৩০ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য সরকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছে। এর মধ্যে কর ব্যবস্থা থেকে আদায় হবে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। বাকি অর্থ আসবে তিনটি উৎস থেকে। সেগুলো হলো অভ্যন্তরীণ ঋণ, বিদেশি ঋণ এবং অনুদান থেকে।

এই আয়ের মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর থেকে আদায় করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আদায় (মাদক শুল্ক, যানবাহান কর, ভূমি রাজস্ব, স্ট্যাম্প বেচাকেনা ও সারচার্জ) লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত আয়ের (মুনাফা, সুদ, প্রশাসনিক ফি, জরিমানা, সেবা বাবদ আয়, ভাড়া ও ইজারা, টোল, অবাণিজ্যিক বিক্রয়, কর ব্যতীত অন্যান্য এবং মূলধন রাজস্ব) লক্ষ্য ধরা হয় ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজস্ব আদায়ের এই ঘাটতির মধ্যে তাই সামনের দিনগুলোতে আদায় বাড়াতে প্রয়োজনীয় কৌশল কী হতে পারে সেটি দিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কোম্পানি কিংবা খাতে দেওয়া বিশেষ সুবিধা সার্বিক অর্থনীতিতে কী ধরনের ভূমিকা রাখছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরু করেছেন তিনি।

দেশের আর্থিক খাত ও রাজস্ব কাঠামো ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ নিয়েছেন সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে তিনি কার্যক্রম শুরু করেছেন। দাফতরিক কাজের সঙ্গে আর্থিক ও রাজস্ব খাতের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলো পরিদর্শন করতে শুরু করছেন টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারে আসা আওয়ামী লীগের এই মন্ত্রী। অর্থনীতিতে নিজের শৃঙ্খল পরাতে ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম নিয়ে কাজ করছেন তিনি।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সরকার যাতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে তার জন্য এনবিআর প্রয়োজনীয় রাজস্ব জোগান দিয়ে যাবে। বছর শেষে রাজস্ব আহরণে আশা করি বড় প্রবৃদ্ধি হবে।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১